ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশে যত নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে দুয়েকটা ছাড়া অন্যগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের নির্বাচন ছিল স্পষ্ট প্রহসন।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১৫ বছরে নির্বাচনের নামে যেটা হয়েছে সেগুলোকে নির্বাচন বলা যায় না। এসব নির্বাচন নিয়ে জনগণের কোনো আগ্রহ ছিল না। নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা যে লক্ষ্যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা পূরণ হয়নি। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশে আয়না ঘর তৈরি হয়েছে, মানুষকে গুম ও খুন করা হয়েছে। এদের অনেকের হদিস পর্যন্ত মেলেনি। বিরোধী মতকে বিভৎসরূপে দমন করা হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন রাষ্ট্রে এটা কেবল দুঃখজনকই নয়, লজ্জাজনকও বটে।’
আরও পড়ুন: একটি গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে: ধর্ম উপদেষ্টা
‘একটি দেশের ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রকে দেউলিয়া করার মতো কাজ যারা করে, তারা দেশপ্রেমিক হওয়ার যোগ্য নন।’
বিজয়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে ড. খালিদ বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনে মহান বিজয় দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। অসংখ্য প্রাণ ও বহু মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই বিজয় অর্জিত হয়েছে। এর পেছনে বহু ত্যাগ-তিতীক্ষা ও সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। একটি কল্যাণমূখী, বৈষম্যহীন ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন এবং গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্যই এই বিজয় অর্জিত হয়। কিন্তু আপসোসের বিষয় হলো, দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পরও আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্ন অনেকাংশেই পূরণ হয়নি।’
সবাইকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, ‘এত মানুষ যে কারণে সংগ্রাম চালাল, যুদ্ধ করল ও প্রাণ দিল, তাদের এই আত্মত্যাগ সার্থক হবে, যদি আমরা স্বাধীনতার লক্ষ্য পানে এগিয়ে যেতে পারি। একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠন ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়নের প্রয়াস সফল হলেই শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে।’
এ সময় তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিউল আলম, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ, ইফার দ্বীনি দাওয়াত বিভাগের পরিচালক মো. তৌহিদুল আনোয়ার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক, উপপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শেষে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবে শহিদদের রুহের মাগফেরাত এবং দেশ-জাতির উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
আরও পড়ুন: ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ