চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় তিন দিন পর দুইটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ০৫ মিনিটে নগরীর কোতোয়ালী থানায় আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়। তবে মামলায় ইসকন নেতা চিন্ময় দাস কৃষ্ণের নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইনজীবী নেতারা।
এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী আলিফের বড় ভাই খানে আলম।
হত্যা মামলার আসামিরা হলেন—নগরীর কোতোয়ালী থানার বান্ডেল রোড সেবক কলোনি এলাকার বাসিন্দা চন্দন, আমান দাস, শুভ কান্তি দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত দাশ, নয়ন দাস, গগন দাস, বিশাল দাস, ওমকার দাস, বিশাল, রাজকাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাস, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, দুর্লভ দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ৩ মামলায় আসামি ১৪৭৬
মামলাগুলোর বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ।
হত্যা মামলার এজাহারে আলিফের বাবা অভিযোগ করেন, গত ২৬ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান আদালত। আদেশ প্রদানের পর আসামির পক্ষের ইসকনপন্থি আইনজীবীরা অশালীন ভাষায় মন্তব্য করেন এবং আদালতে হট্টগোল সৃষ্টি করেন। তখন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানের সামনে অবস্থান করে দায়িত্বরত পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ করলে মসজিদসহ আইনজীবীদের ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা। একই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার ছেলে আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আলিফ বাসায় যাচ্ছিলেন। এ সময় তার মুখে দাড়ি দেখে আসামিরা তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এ সময় তারা বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নামে জয়ধ্বনী দেন।
স্থানীয় লোকজন ও ছেলের সহকর্মীদের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শুনে তিনি জেনেছেন—ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন্ধনে আসামিরা তার ছেলেকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ছেলের দাফন-কাফন ও জানাজা নামাজ সম্পন্ন করে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষে ঘটনার ভিডিও ও স্থিরচিত্র দেখে আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় গিয়ে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিমুদ্দিন চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, ‘যাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ডের সংঘটিত হয়েছে সেই ইস্কন নেতা চিনময় কৃষ্ণ দাস কে মামলায় আসামি করা হয়নি। তাকে কেন্দ্র করে সনাতনী সন্ত্রাসীরা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করেছে। মামলায় তাকে প্রধান আসামি করার দাবি ছিল আমাদের। তাকে আসামি না করায় এই মামলা প্রত্যাখ্যান করছি আমরা।’
এর আগে, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কোতোয়ালী থানায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও প্রায় ১৪০০ জনকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: আলিফ হত্যায় সিএমপি কমিশনারের পদত্যাগের দাবি চট্টগ্রামের আইনজীবীদের