প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে অধিগ্রহণের জন্য জমির মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন এবং ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন নির্ধারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পৃথক দুটি রিট খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জাল ডকুমেন্টস দাখিল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতের সময় নষ্ট করায় রিট আবেদনকারী মো. সেলিম খানসহ তিনজনকে এক কোটি টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
রিটকারী তিন জনের মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম খান ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর অপর দু’জন রিটকারী স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল ও আব্দুল কাদের মিয়াকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তাদেরকে দু’মাসের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৩ মার্চ হাইকোর্টের এই বেঞ্চ রায়ের জন্য ২০ এপ্রিল দিন ধার্য করেছিলেন। এর মধ্যে বেঞ্চটি পুনর্গঠন করা হয়। ফলে, ধার্য তারিখে রায় হয়নি। আজ বেঞ্চটি বিশেষভাবে বসেন। রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে যেসব পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় জেলা প্রশাসন করেছে, তা সঠিক বলে রায়ে এসেছে। রিট আবেদনকারীরা আদালতে কিছু জাল ডকুমেন্ট দিয়েছেন। আদালতের সময় নষ্ট করেছেন। এসব বিবেচনায় নিয়ে রুল খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে সেলিম খানকে ৫০ লাখ টাকা ও অপর দুজনকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন মন্ত্রিসভা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর। জাতীয় সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয় ২০২১ সালের ৬ এপ্রিল।
পড়ুন: ডেসটিনির হারুনকে জামিন দেননি, আপিল শুনবেন হাইকোর্ট
প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত করে অর্থ ছাড়ের জন্য গত বছরের ৪ নভেম্বর উপাচার্য বরাবর চিঠি দেয়। একই বছরের ১৪ অক্টোবর জমির মূল্যহার পরীক্ষা ও সংগ্রহের জন্য ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।
প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসনের প্রাক্কলন সংশোধন চেয়ে গত বছরের নভেম্বরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন মো. সেলিম খান ও অন্যরা। পরে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চায়। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ব্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন পাঠায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৌজা দর ধরে জমি অধিগ্রহণের দাম নির্ধারণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৬২ একর জমির জন্য (মূল দামের তিন গুণ ধরে) সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু হঠাৎ উচ্চ মূল্য দেখিয়ে যেসব দলিল করা হয়েছে, সেটা আমলে নিলে সরকারকে ৫৫৩ কোটি টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ সরকারকে অতিরিক্ত দিতে হবে ৩৫৯ কোটি টাকা। এ অবস্থায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের ১৪ অক্টোবরের (মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন) এবং ৪ নভেম্বরের (১৯৪ কোটা টাকা প্রাক্কলন) স্মারকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সেলিম খান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তি হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন। গত বছর করা পৃথক রিটে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনের ৯ (১) (ক) ধারা অনুযায়ী প্রাক্কলন নির্ধারণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়। সেলিম খানের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। অপর রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন।
পড়ুন: সাতদিনের বেশি সময়ের জন্য গাড়ি রিকুইজিশন করা যাবে না: হাইকোর্ট