ক্ষতিপূরণ
লাশ হয়ে ফেরা ৭১৪ নারী অভিবাসী শ্রমিকের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট
লাশ হয়ে ফেরা ৭১৪ অভিবাসী নারী শ্রমিকের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিবাসী নারী শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ তদন্ত, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চে থেকে অনুমতি নিয়ে রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আঞ্জুমান আরা লিমা।
রিট আবেদনের সঙ্গে ‘লাশ হয়ে ফিরলেন ৭১৪ নারী’- শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়েছে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, বিএমইটির মহাপরিচালক ও পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে। চলতি সপ্তাহে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে।
এই রিটে বিদেশে নারী শ্রমিকের অমানবিক নির্যাতন বন্ধ, তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং নিরাপদে দেশে ফেরার নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রবাসে মৃত্যুবরণ করা শ্রমিকদের মৃত্যুর কারণ তদন্ত করে যথাযথভাবে জানানোর পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে মালিক পক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার নির্দেশনাও এই রিটে চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজ
‘লাশ হয়ে ফিরলেন ৭১৪ নারী’- শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ৪০৪ জন নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। তাদের মধ্যে ২২৭ জনের ক্ষেত্রে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’লেখা ছিল।
আর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সাত বছরে ৭১৪ নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। তাদের মধ্যে ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যুর সনদ লেখা লাশের সংখ্যা ২৬২। আর ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে ৩১৯ নারী শ্রমিকের লাশ দেশে আসে। যাদের মধ্যে ২২০ জনের ক্ষেত্রে লেখা ছিল ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’।
অন্যদিকে ব্র্যাকের গত সাত বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়ে যেসব নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে তাদের মধ্যে ১৩৮ জনের মৃত্যুর কারণ লেখা ছিল ‘স্ট্রোক’; ১১৬ জনের ক্ষেত্রে ‘আত্মহত্যা’; ১০৮ জনের ক্ষেত্রে ‘দুর্ঘটনা’; ১৬ জনের ক্ষেত্রে ‘হত্যা’ এবং এর বাইরে করোনা, ক্যান্সার, অজানা রোগ বা কোনো কারণ উল্লেখ না করেই দেশে নারী শ্রমিকের লাশ পাঠানোর ঘটনা ঘটেছিল।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) ২০১৭ সাল থেকে দেশে আসা ৫৪৮ নারী শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ ও করণীয় বিষয়ে একটি গবেষণা করেছে।
‘ডেথ অব ফিমেল মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ইন ডেস্টিনেশন কান্ট্রিজ’- শিরোনামের সেই গবেষণায় সনদে থাকা মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, ৬৯ শতাংশ নারী শ্রমিকের ‘স্বাভাবিক’ ও ৩১ শতাংশের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়।
আরও পড়ুন: দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের দাবিতে রিট
ফখরুল ও আব্বাসের কারাগারে ডিভিশন চেয়ে হাইকোর্টে রিট
রাশিয়ার নিকট যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দাবির জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ
রাশিয়াকে ইউক্রেনের যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। রাষ্ট্রদূতরা সংঘাত বন্ধে নিবেদিত। এজন্য তারা তাদের জরুরি বিশেষ অধিবেশন পুনরায় শুরু করতে মিলিত হয়েছিল।
প্রায় ৫০টি দেশ ধ্বংস, ক্ষয়ক্ষতি এবং আঘাতের জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া গঠনের পাশাপাশি প্রমাণ এবং দাবি নথিভুক্ত করতে একটি রেজ্যুলেশন তৈরিতে সহ-পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।
আরও পড়ুন: পৃথিবী অপরিবর্তনীয় জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে: জাতিসংঘ মহাসচিব
সাধারণ পরিষদ হল জাতিসংঘের সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা, যেটি ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত।
৯৪টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে, ১৪টি বিপক্ষে ভোট দেয় এবং বাংলাদেশসহ ৭৩টি দেশ বিরত থাকে।
ভোট সকালে অনুষ্ঠিত হয়, এবং দেশগুলো তাদের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে বিকেলে ফিরে আসে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাস এক ফেসবুক পোস্টে বলেছে, জাতিসংঘের অর্ধেকের বেশি সদস্য পশ্চিমাদের দ্বারা প্রচারিত খসড়া প্রস্তাবকে সমর্থন করেননি।
আরও পড়ুন: বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে গুরুত্ব দেয় জাতিসংঘ’
বাংলাদেশকে ধন্যবাদও জানায় দূতাবাস।
ভোটের আগে বক্তৃতায়, রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া খসড়া রেজ্যুলিউশনটিকে একটি সংকীর্ণ গোষ্ঠীর রাষ্ট্রের ‘একটি ক্লাসিক উদাহরণ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। যা আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে নয়, বরং অবৈধ কিছুকে পবিত্র করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেছিলেন যে রেজল্যুশনের সমর্থনকারী দেশগুলো সাধারণ পরিষদকে একটি বিচারিক সংস্থা হিসাবে স্থাপন করার চেষ্টা করছে, যা জাতিসংঘের তথ্যানুসারে আসলে যা নয় এটি।
রাশিয়ান ভাষায় তিনি বলেন, ‘এই দেশগুলো আইনের শাসনের প্রতি কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তা নিয়ে গর্ব করে, কিন্তু একই সঙ্গে তারা এর খুব উপমাকে লঙ্ঘন করছে।’
আরও পড়ুন: অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার: নিয়োগ প্রক্রিয়ার পর্যবেক্ষণ চায় জাতিসংঘ
জজ মিয়াকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের রুল
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে চার বছর কারাভোগ করা মো. জালাল ওরফে জজ মিয়াকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
একই সঙ্গে জজ মিয়ার ভুলভাবে গ্রেপ্তার,অবৈধভাবে আটকের আদেশ ও বিনা অপরাধে কারাভোগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না,তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সোর্স প্রকাশ না করতে সাংবাদিককে আইন সুরক্ষা দিয়েছে: হাইকোর্ট
জিয়ার শাসনামলে সামরিক বাহিনীর ৮৮ জনের দণ্ড কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
৩৭০০ কোটি টাকা লুটপাট: দায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট
জজ মিয়ার দশ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রিটের আদেশ মঙ্গলবার
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করা সেই আলোচিত জজ মিয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটের ওপর মঙ্গলবার আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
তিনি জানান, সোমবার শুনানি প্রায় শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে অল্প শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেবেন।
আরও পড়ুন: মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। রিটে জজ মিয়াকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আবেদন জানানো হয়। এছাড়া জজ মিয়াকে ফাঁসানো ও পাঁচ বছর জেল খাটানোর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গঠনের নির্দেশনাও চাওয়া হয়।
রিটে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক আইজিপি খোদাবক্স চৌধুরী, সাবেক এএসপি আব্দুর রশিদ, মুন্সি আতিকুর রহমান, সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিনসহ গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা থেকে এই ক্ষতিপূরণ আদায় করার কথা বলা হয়েছে।
বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিআইডি, সাবেক আইজিপি খোদাবক্স চৌধুরী, ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ হেড কোয়ার্টারের সাবেক স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমীন, সাবেক এসপি আব্দুর রশিদ, সাবেক এসপি মুন্সী আশিকুর রহমান, পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ১১ জনকে।
এর আগে জজ মিয়াকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিবাদীদের কাছে গত ১১ আগস্ট এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। নোটিশে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। কিন্তু নোটিশের জবাব না পেয়ে এই রিট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার পল্লব।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। অল্পের জন্য রক্ষা পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। এ ঘটনায় ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে ধরে আনা হয় জজ মিয়াকে। তাকে ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে একটি সাজানো জবানবন্দি আদায় করে সিআইডি।
ভুক্তভোগী জজ মিয়া
২০০৫ সালের ২৬ জুন আদালতে দেওয়া ওই কথিত স্বীকারোক্তিতে জজ মিয়া বলেছিলেন, পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি অন্যদের সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। ওই বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ, মুকুল প্রমুখ।
পরে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে এই মামলার তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অব্যাহতি দেয়া হয় জোট সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়া জজ মিয়াকে।
সে সময় বিনা অপরাধে পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল তাকে। অন্যদিকে গ্রেনেড হামলা ঘটনায় করা দুই মামলার বিচার শেষে ২০১৮ সালে রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে ফাঁসির দণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ১৯ জনকে ফাঁসি এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই ৩৮ জনকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের অন্য ধারায় ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দুই মামলায় আলাদাভাবে সাজা দেয়া হলেও তা একযোগে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: সোর্স প্রকাশ না করতে সাংবাদিককে আইন সুরক্ষা দিয়েছে: হাইকোর্ট
সাতদিনের মধ্যে জাহালমকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ
ঋণ জালিয়াতির মামলায় বিনা অপরাধে তিন বছর কারাগারে কাটানো টাঙ্গাইলের সেই পাটকল শ্রমিক জাহালমকে সাতদিনের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ব্র্যাক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ক্ষতিপূরণের রায় স্থগিত রেখে ওই ব্যাংকের করা আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম সোমবার এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে ব্রাক ব্যাংকের আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।
হাইকোর্ট এক রায়ে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রাক ব্যাংককে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে সতর্ক করে রায় দেন। গত ৭ আগস্ট এর রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর ব্রাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন যার ওপর আজ শুনানি হয়।
আরও পড়ুন: জাহালমের ক্ষতিপূরণের রায় স্থগিত চায় ব্র্যাক ব্যাংক
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া রুলও জারি করেন আদালত। আদালত একই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন এবং তাকে তাৎক্ষণিক কারামুক্তির নির্দেশ দেন। নির্দেশে সেদিন রাতেই জাহালমকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল জাহালম কাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। পরে এসব মামলায় দুদক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রুলের ওপর শুনানি সম্পন্ন হয়। পরে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে ব্র্যাক ব্যাংককে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন।
হাইকোর্ট বলেন, এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কোনো ভুল না পাওয়ায় তাদের জরিমানা করা হয়নি। তবে দুদককে হাইকোর্ট সতর্ক করে দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। আর যে ৩৩ মামলায় জাহালমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল, সেগুলোর পুনঃতদন্ত করে দ্রুত সময়ে বিচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালের এপ্রিলে ৩৩টি মামলা করে দুদক। দুদক তদন্ত করে বলে, জালিয়াত চক্র সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় আবু সালেকসহ তিনজনের হিসাব থেকে ১০৬টি চেক ইস্যু করে। চেকগুলো ১৮টি ব্যাংকের ১৩টি হিসাবে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জমা করে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ওই ১৮টি ব্যাংকের মধ্যে একটি হল ব্র্যাক ব্যাংক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে গ্রেপ্তার করা হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে। তাকে ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। সে কারণে ব্র্যাক ব্যাংককে এই জরিমানা দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ
জাহালমের ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
সড়ক দুর্ঘটনা: ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে রাষ্ট্রীয় তহবিল গঠনের দাবি
সড়কে অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
শুক্রবার তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের বরাত দিয়ে ব্লাস্ট জানায়, ২০১৯ থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সড়ক পথে অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৮ হাজার ১৬৯টি। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ২০ হাজার ৯৭৪ জন এবং আহত হয়েছেন ২৮ হাজার ৫৮২ জন।
ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ গত দশ বছর হয়েছে। যেমন- নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, ব্লাক স্পট নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে, রাস্তা মেরামত হয়েছে। পাশাপাশি আদালত থেকেও আহত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতিপূরণের আদেশ হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও দেখি যেসব পরিবার ও ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন বা শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের জন্য একটি জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা এবং যথার্থ ও দ্রুত ক্ষতিপূরণ প্রদানের কার্যকরী ব্যবস্থা দাঁড়াচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: এবারের ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯৮ জন নিহত
তারেক মাসুদের স্ত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে আমাদের ক্ষতিপূরণের মামলায়। সেখানে বাস ড্রাইভার, বাস কোম্পানি আর ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে দায়ী করা হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য। যদিও এই ঐতিহাসিক রায় আমাদের পক্ষে এসেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি।’
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশফাক মিশুক মুনীর এবং তাদের তিনজন সহকর্মী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
সেই জজ মিয়াকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে আইনি নোটিশ
একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় বিনা অপরাধে চার বছর কারাভোগ করায় মো. জালাল ওরফে জজ মিয়ার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে উল্লেখ করে তাঁকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জজ মিয়ার পক্ষে বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ কাউছার এই আইনি নোটিশ পাঠান। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১১ ব্যক্তি বরাবর এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আইনি নোটিশ যাঁদের কাছে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফজ্জামান বাবর, পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক খোদা বকশ চৌধুরী, সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশীদ, মুন্সী আতিকুর রহমান ও সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন রয়েছেন।
আরও পড়ুন: হাওলাদারকে দেয়া দুদকের নোটিশ কেন বেআইনি নয়: হাইকোর্ট
নোটিশে বেআইনিভাবে জজ মিয়াকে কারাবাসে রাখার জন্য লুৎফজ্জামান বাবর, খোদা বকশ চৌধুরী, আবদুর রশীদ, মুন্সী আতিকুর রহমান, রুহুল আমিন বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা ব্যক্তির দায় আছে কি না, তা নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।
জজ মিয়ার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ায় লুৎফজ্জামান বাবর, খোদা বকশ চৌধুরী, আবদুর রশীদ, মুন্সী আতিকুর রহমান, রুহুল আমিন বা অন্য কোনো ব্যক্তি দায়ী হলে তাঁদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে নোটিশে।
নোটিশ গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ জানাতে বলা হয়েছে। তা না হলে উচ্চ আদালতে রিট দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: টেলিটকের তারেককে গ্রেপ্তারে রেড নোটিশ জারির নির্দেশ হাইকোর্টের
জরিমানা চেয়ে বাংলালিংক-যমুনা ব্যাংককে সাকিবের লিগ্যাল নোটিশ
জাহালমের ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
বিনাদোষে প্রায় তিন বছর কারাভোগ করা পাটকল শ্রমিক জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য ব্র্যাক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়ে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের ৮৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে দুদককে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের ভুলভাবে যেন জড়ানো না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রায়ে ব্র্যাক ব্যাংককে বলা হয়েছিল, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার এক মাসের মধ্যে জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আর টাকা দেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয়ে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে।
দুদকের আইনজীবী জানান, ২০২০ সালে ব্র্যাক ব্যাংক এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। এখন তারা পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে লিভ টু আপিল করতে পারে। এখন আপিল বিভাগে বিষয়টি বিচারাধীন।
এর আগে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালের এপ্রিলে মোট ৩৩টি মামলা করে দুদক।
দুদক তদন্ত করে জানায়, জালিয়াত চক্র সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় আবু সালেকসহ তিনজনের হিসাব থেকে ১০৬টি চেক ইস্যু করে। চেকগুলো ১৮টি ব্যাংকের ১৩টি হিসাবে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জমা করে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ওই ১৮টি ব্যাংকের মধ্যে একটি হলো ব্র্যাক ব্যাংক। এরপর দুদকের নবীন অনভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে গ্রেপ্তার করা হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে। তাকে ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। সে কারণে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই জরিমানা দিতে বলা হয়। আদালত রায়ে বলেছিলেন, এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কোনো ভুল না পাওয়ায় তাদের জরিমানা করা হয়নি। তবে দুদককে হাইকোর্ট সতর্ক করে দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয়।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেনি। তদন্ত রিপোর্টেও এটা উঠে এসেছে। কিন্তু সব দেখে মনে হয়েছে তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে ছিল না। এখানে দুদকের ৩১ ধারা (সরল বিশ্বাসের ভুল) প্রযোজ্য। যদিও তারা অদক্ষ ও অযোগ্য। কিন্তু আমরা ওই অফিসারদের প্রতি ক্ষতিপূরণ আরোপ করছি না। এখানে সালেকের স্থলে জাহালমকে জড়ানোর কোনো উদ্দেশ্যে দেখছি না। দুদকের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেন, দুদক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত স্বাধীন কর্তৃপক্ষ। আইন ও বিধি অনুসারে তাদের তদন্ত কার্যক্রম চালাবে, এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের ভুলভাবে যেন জড়ানো না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্পর্কে আদালত বলেন, তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, বিশেষত ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সালেকের স্থলে জাহালমকে এনেছেন। তাদের এ কার্যক্রম তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুল পথে পরিচালিত (মিসগাইড) করেছে। আর তারা ইচ্ছা করে এ কাজ করেছে। ওই সময় ব্যাংক ঋণ সংক্রান্ত ঘটনায় ৩৩ মামলায় জাহালমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।
হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, জাহালমের মতো আর কোনো নিরীহ লোক যেন ভবিষ্যতে দুদকের মামলায় জেল না খাটে। দুদককে যথাযথভাবে তদন্ত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। সম্প্রতি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না, আমি নির্দোষ।’ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এ বিচারকের উদ্দেশ্যে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘আমি আবু সালেক না ’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটেন নির্দোষ জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া রুলও জারি করেন। পরে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চান। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করে। পরে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফআইআর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট ও সব ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেন।
এ ঘটনার তদন্ত করে দুদক জানায়, জাহালম নিরপরাধ। একই মত দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও।
আরও পড়ুন: যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছরের কারাদণ্ড: পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
সীতাকুণ্ডে নিহত প্রত্যেককে ২ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে রিট
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ আগুনে নিহত প্রত্যেককে দুই কোটি টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বিস্ফোরক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন, দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বুধবার দুটি মানবাধিকার সংস্থা ল' এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং সিসিবি ফাউন্ডেশনের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের এবং এ কে এম ফয়সাল হক এই রিট পিটিশন দায়ের করেন।
রিট পিটিশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, বিএম কন্টেইনার বিডি লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকসহ ২০ জনকে বিবাদি করা হয়েছে। রিট আবেদনটি হাইকোর্টের বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে বৃহস্পতিবার শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব।
রিটে বলা হয়েছে, গত ৪ জুন শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনে প্রায় অর্ধশত নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। খবরে প্রকাশ স্মার্ট গ্রুপের বিএম কন্টেইনার নামক কোম্পানীর দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ঘোষণা ছাড়াই মজুদ করার কারণে আগুনে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফায়ার সার্ভিসের কাছে মজুদ করা রাসায়নিক পদার্থগুলোর প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় অনেক উদ্ধারকর্মী নিহত এবং আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: বিএম কন্টেইনার ডিপো থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার
বাংলাদেশের আগেও তাজরিন গার্মেন্টস কারখানায় আগুন, রানা প্লাজা ভবন ধসে হাজারও প্রাণ ঝরলে পোশাক কারখানায় বিদেশি ক্রেতার চাপে অগ্নি নির্পাবন ব্যবস্থায় অগ্রগতি হলেও অন্যান্য কারখানায় সঠিক অগ্নি নির্পাবক ব্যাবস্থা গড়ে উঠে নি। ফলে এসব কারখানায় নিয়মিতভাবেই অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিজাম জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে বহু হতাহত হয়েছেন। বিদেশি ক্রেতাদের কোন চাপ না থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট কারো নজর নেই। তাছাড়া অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থে সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে অক্ষম। রিটে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ এবং তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ আদায়ের কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী জীবনের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। ফলে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ সরাসরি লংঘন করেছেন। রিট পিটিশনে নিহত প্রত্যেককের পরিবারকে দুই কোটি টাকা এবং আহত প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বিনামূল্যে দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
ইতিপূর্বে ল' এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং সিসিবি ফাউন্ডেশন পৃথক পৃথক আইনি নোটিশ দিয়ে হতাহতের ক্ষতিপূরণ দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন। প্রতিকার না পেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার পল্লব।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার বিস্ফোরণে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: জমির দাম নির্ধারণ নিয়ে রিট খারিজ
প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে অধিগ্রহণের জন্য জমির মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন এবং ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন নির্ধারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পৃথক দুটি রিট খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জাল ডকুমেন্টস দাখিল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতের সময় নষ্ট করায় রিট আবেদনকারী মো. সেলিম খানসহ তিনজনকে এক কোটি টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
রিটকারী তিন জনের মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম খান ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর অপর দু’জন রিটকারী স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল ও আব্দুল কাদের মিয়াকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তাদেরকে দু’মাসের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৩ মার্চ হাইকোর্টের এই বেঞ্চ রায়ের জন্য ২০ এপ্রিল দিন ধার্য করেছিলেন। এর মধ্যে বেঞ্চটি পুনর্গঠন করা হয়। ফলে, ধার্য তারিখে রায় হয়নি। আজ বেঞ্চটি বিশেষভাবে বসেন। রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে যেসব পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় জেলা প্রশাসন করেছে, তা সঠিক বলে রায়ে এসেছে। রিট আবেদনকারীরা আদালতে কিছু জাল ডকুমেন্ট দিয়েছেন। আদালতের সময় নষ্ট করেছেন। এসব বিবেচনায় নিয়ে রুল খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে সেলিম খানকে ৫০ লাখ টাকা ও অপর দুজনকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন মন্ত্রিসভা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর। জাতীয় সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয় ২০২১ সালের ৬ এপ্রিল।
পড়ুন: ডেসটিনির হারুনকে জামিন দেননি, আপিল শুনবেন হাইকোর্ট
প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত করে অর্থ ছাড়ের জন্য গত বছরের ৪ নভেম্বর উপাচার্য বরাবর চিঠি দেয়। একই বছরের ১৪ অক্টোবর জমির মূল্যহার পরীক্ষা ও সংগ্রহের জন্য ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।
প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসনের প্রাক্কলন সংশোধন চেয়ে গত বছরের নভেম্বরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন মো. সেলিম খান ও অন্যরা। পরে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চায়। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ব্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন পাঠায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৌজা দর ধরে জমি অধিগ্রহণের দাম নির্ধারণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৬২ একর জমির জন্য (মূল দামের তিন গুণ ধরে) সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু হঠাৎ উচ্চ মূল্য দেখিয়ে যেসব দলিল করা হয়েছে, সেটা আমলে নিলে সরকারকে ৫৫৩ কোটি টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ সরকারকে অতিরিক্ত দিতে হবে ৩৫৯ কোটি টাকা। এ অবস্থায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের ১৪ অক্টোবরের (মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন) এবং ৪ নভেম্বরের (১৯৪ কোটা টাকা প্রাক্কলন) স্মারকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সেলিম খান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তি হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন। গত বছর করা পৃথক রিটে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনের ৯ (১) (ক) ধারা অনুযায়ী প্রাক্কলন নির্ধারণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়। সেলিম খানের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। অপর রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন।
পড়ুন: সাতদিনের বেশি সময়ের জন্য গাড়ি রিকুইজিশন করা যাবে না: হাইকোর্ট