চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনের বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নামে ব্যতিক্রমী ফটো গ্যালারিসহ লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, উন্নয়ন ও সোনার বাংলার ছবিগুলো,যেগুলো কথা বলছে ১৯৪৭-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত প্রত্যেকটি ঘটনার। এছাড়া ১৯৪৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নানান ঘটনাবলির ৩০০টি ছবি স্থান পেয়েছে গ্যালারিতে। এগুলো বাংলাদেশ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব ও ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের উন্নয়নকে তুলে ধরার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গ্যালারিতে ফটো গ্যালারি, বুক কর্নার এবং মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান, চুয়াডাঙ্গার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, প্রত্যেকটি ঘটনার সাদা কালো ও রঙিন সব দুর্লভ ছবি ঠাই পেয়েছে গ্যালারিতে।
এই গ্যালারিটি তৈরির কার্যক্রম ২০২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু করেছিলেন পুলিশ সুপার। যা একই বছরের ২৩ জুন শেষ হয়েছে। পরিত্যক্ত ঘরটির দেয়ালের রঙ, র্যাক, ওয়ালর্যাক, লাইটিংসহ নতুন ডিজাইনে সাজানো হয়েছে। পরিপাটি ও সজ্জিত পরিবেশে তৈরি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গ্যালারিতে রয়েছে আটটি কংক্রিটের দেয়াল, একটি বুক কর্নার, তিনটি স্ট্রিং-ওয়াল, তিনটি বোর্ডের ওয়াল, দুটি স্মৃতি স্মারক কর্নার। যার প্রথম দেয়ালে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বহির্বিশ্ব, দ্বিতীয় দেয়ালে ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বীকৃতি।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে ১৪ লাখ কর্মসংস্থান হবে: মুখ্য সচিব
তৃতীয় দেয়ালে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সালের স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী, শিক্ষা জীবন এবং ঘটনা প্রবাহ। চতুর্থ দেয়ালে রক্তাক্ত ৭১। পঞ্চম দেয়ালে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অতঃপর থমকে যাওয়া উন্নয়ন। ৬ষ্ঠ দেয়ালে মুক্তিযুদ্ধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশের অবদান। সপ্তম দেয়ালে চুয়াডাঙ্গার মহান মুক্তি সংগ্রাম। অষ্টম দেয়ালে রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আলোকবর্তিকায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা।
উদ্যোক্তা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গাতে পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করার পর পুলিশ লাইন্সের এই পরিত্যক্ত কক্ষটি নিয়ে ভাবতে থাকি। পরে আমার মাথায় আসে, আমি তো একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী। ফলে আমার মাথায় আসে যে চুয়াডাঙ্গার যারা শিক্ষার্থী রয়েছে, চুয়াডাঙ্গাবাসী রয়েছে, তাদের জন্য কিছু একটা করে রেখে যাওয়া। তারপর থেকেই অবসর সময়ে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নামের এই গ্যালারির কাজ শুরু করি। মূলত দেশ ও জাতির ইতিহাস তুলে ধরতেই আমার এ প্রয়াস। এরপর দিনরাত পরিশ্রম করেছি এর পিছনে। প্রতিটি ছবি আর তথ্য সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করেছি এবং আমি নিজে বার বার করে এটা চেক করেছি, কোনো ভুল তথ্য যেন এই গ্যালারি না থাকে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি এটা শেষ করতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী, শিক্ষা জীবন এবং ঘটনা প্রবাহ। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা আর চুয়াডাঙ্গার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসহ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এরকম নানা তথ্য ও দুর্লভ সব ছবি এই গ্যালারিতে সন্নিবেশিত করেছি। ছবিগুলো সংগ্রহ করার কাজ ছিল বেশ কঠিন। দেশ-বিদেশ থেকে ছবি সংগ্রহ করেছি। ফ্রেমে বাঁধানো ছবিগুলো জীবন্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। তার কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা বাস্তবায়ন করছেন। অল্প দিনেই এটি উদ্বোধন করা হবে। অনেক গুণী মানুষ দেখেছেন।
সবশেষে পুলিশ সুপার বলেন, আগামী প্রজন্ম যারা আসবে, তারা হচ্ছে এই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সব ইতিহাস একটা কক্ষের মধ্যে ঘুরেই জানতে পারবে। আর এটাই হবে আমার সার্থকতা।
এদিকে, ডিজিটাল বাংলাদশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার ছবি ও তথ্য এবং বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ছবিসহ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ‘৭১’এর ২৫ মার্চের বেতার বার্তা প্রেরণের যন্ত্রসহ এই গ্যালারি দেখতে শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ প্রতিনিয়ত আসছেন।
এই গ্যালারি পরিদর্শনে আসা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, উন্নয়ন ও সোনার বাংলার কথা বলছে দুর্লভ সব ছবিগুলো।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ যে এক সুতোই বাধা গ্যালারিতে ঢুকলে মুহূর্তে তা বোঝা যায়।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে নেপালের উচ্চ পর্যায়ের সংসদীয় প্রতিনিধি দল
দিলীপ কুমার বলেন, আমার মতো বা শুধু নেতৃস্থানীয় মানুষের জন্য না, এটা এই প্রজন্মকে দেখানো খুব জরুরি। এটা যত দ্রুত সম্ভব উন্মুক্ত করে দিলে এটা পরিপূর্ণ রুপ পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এর আগে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গায় এসেছেন। এমন করে কেউ ভাবেননি। আমি চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে চুয়াডাঙ্গাবাসীর পক্ষ আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা শিশু অধিকারকর্মী মেহেরাব্বীন সানভী বলেন, একটি ঘরের আটটি দেয়াল ঘুরে দেখলেই বাংলাদেশের পুরো ইতিহাস জানা যায় এবং জাতির পিতার জীবন সম্পর্কে জানা যায়। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের এমন আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আমি যেহেতু শিশুদের নিয়ে কাজ করি, শিশুরাও এখানে আসলে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস সহজেই জানতে পারবে।
পরিদর্শনে আসা কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বলেন, এমন একটি আয়োজনের জন্য পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানাই। দুর্লভ সব ছবি আর ছোট ছোট ক্যাপশনে যেভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার একটি পরিত্যক্ত ঘরকে যেভাবে সাজিয়েছেন আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখানে সন্নিবেশিত করেছেন, সত্যিই এটা প্রশংসার দাবি রাখে।
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল আমীন বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের এমন ভাবনা ও তার বাস্তবায়ন সত্যিই প্রশংসনীয়।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় ৭০ টাকার ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায় চুয়াডাঙ্গায় ৭০ টাকার ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়