যুদ্ধাপরাধ বিরোধী প্রচারণাকারী ও মানবাধিকার কর্মীরা বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে প্রকাশিত সাম্প্রতিক মার্কিন প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন।
মার্কিন প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামীর “সমাবেশ করার স্বাধীনতার” পক্ষে বলা হয়েছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধে সহায়তা করেছিল, তারা বলেন।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট অনুসারে: “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির কারণে বাংলাদেশের বৃহত্তম মুসলিম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামের নেতা ও সদস্যরা তাদের সংবিধানপ্রদত্ত বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন না এবং সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের কারণে জামায়াত প্রার্থীরা দলের নামে নির্বাচন করতে পারছেন না।”
এবিষয়ে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে এ মন্তব্য উদ্বেগজনক, কারণ এটি এমন একটি রাজনৈতিক দল যার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সঙ্গে মিলে গণহত্যা, অপহরণ, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ এবং নারীর বিরুদ্ধে নানা ধরণের সহিংসতার প্রমাণিত রেকর্ড রয়েছে। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে আল-বদর ও আল-শামস নামে এর (জামায়াতের) সামরিক শাখাগুলো ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য দায়ী।”
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে চালানো পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন দেখে থাকলে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে জামায়াতের ভূমিকা কী ছিল তা কারও চোখ এড়াবে না... আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল।”
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি প্রশ্ন করেন, কেউ কি কল্পনা করতে পারে যে নাৎসি পার্টিকে জার্মানিতে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে?
আরও পড়ুন: নিবন্ধন অবৈধের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সারসংক্ষেপ প্রস্তুতির ২ মাস সময় পেল জামায়াত
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল “অনেক পর্যবেক্ষকের মতে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিচারকার্য করেছেন” মার্কিন প্রতিবেদনের এ মন্তব্য বিষয়ে এই মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী বলেছেন: “কিসের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ত্রুটিযুক্ত বলা হয়েছে তা আমার জানা নেই। যেহেতু যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কোনো কোনো মহল কেন এমন মন্তব্য করছে তার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা আমি দেখিনি, তাই আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে, ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে কাজ করার আমার যে অভিজ্ঞতা আছে তাতে বলতে পারি তাতে অভিযুক্তের আত্মরক্ষার অধিকারকে সম্পূর্ণ সম্মান দেখানো হয়েছিল।”
অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি এবং বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থনকারী একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মার্কিন প্রতিবেদনের বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “জামায়াত এখনো তাদের মদদপুষ্ট জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।”
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “জামায়াত একটি গণতন্ত্রবিরোধী ফ্যাসিস্ট দল যারা বাংলাদেশের সংবিধান মানে না। এ কারণে হাইাকোর্ট এ দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে, সরকার জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেনি।”
বিবৃতিতে আরও সতর্ক করা হয়েছে যে মার্কিন প্রতিবেদনে জামায়াত সম্পর্কে “অসত্য” প্রতিবেদন জামায়াতের নেতৃত্বে “মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ” উস্কে দিতে পারে।
বিবৃতিতে সাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন: বিচারপতি শামসুল হুদা; সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক; ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ; অধ্যাপক অনুপম সেন; সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার; বিশিষ্ট শিল্পী হাশেম খান ও রফিকুন্নবী; লেখক ও যুদ্ধাপরাধ গবেষক শাহরিয়ার কবির; ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রমুখ।
আরও পড়ুন: জামায়াতের ১০ দফা দাবি ঘোষণা, গণমিছিল ২৪ ডিসেম্বর
জামায়াত সেক্রেটারিকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের