বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা নিজেদের উপার্জিত অর্থ দলে দেয় উল্লেখ করে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, জামায়াতের নেতৃত্বে দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে জনগণ ও রাষ্ট্র নিরাপদ থাকবে।
তিনি বলেন, ‘জামায়াতের লোকেরা স্বজনপ্রীতি করে না, রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করে না। জামায়াতের প্রত্যেকটি লোক আলাদা আলাদা ব্যবসা ও চাকরি করেন। তারা দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করেন না।’
সেলিম উদ্দিন বলেন, জনগণ পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশকে যদি জামায়াতের হাতে তুলে দেয়, তারা দেখবে কেমন বাংলাদেশ হয়-তা আমরা ইনশাআল্লাহ দেখাবো।
দলটির উত্তরা মডেল থানা শাখার যুব বিভাগের উদ্যোগে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে মঙ্গলবার সকালে ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিকভাবে ফ্যাসিবাদের কবর রচনার আহ্বান জামায়াত সেক্রেটারির
জামায়াতের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু করে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করেছি। বেকার সমস্যার সমাধান করেছি। বাংলাদেশে যে রেমিট্যান্স আসে, তার একটা বড় অংশ আমাদের উদ্যোগের কারণে, আমাদের চেষ্টার কারণে আসে। আমরা ক্ষমতায় না গিয়েও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে প্রমাণ করেছি। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান সেলিম উদ্দিন।
ঢাকা মহানগরীর জনগণকে সবধরণের সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা একটি সমৃদ্ধ নগরী চাই। আমরা একটি মানবিক নগরী চাই। আমরা একটি পরিচ্ছন্ন ও দুর্নীতিমুক্ত নগরী চাই। নগরীকে গড়ে তুলতে দলের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সেলিম উদ্দিন বলেন, নগরীতে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নগরীর অভিভাবক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বকে জনগণ গ্রহণ করবে ইনশাআল্লাহ । শুধু সিটি নয় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সকল নির্বাচনে জামায়াতের নেতৃত্বকে জনগণ গ্রহণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বিগত পতিত স্বৈরাচার এমন কোনো কাজ বাকী নাই, যেটা করেনি। রাষ্ট্র থেকে একটি দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য মিথ্যা নাটক সাজিয়ে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতাদেরকে-যারা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তাদেরকে হত্যা করেছে।
আরও পড়ুন: বৈষম্যহীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জামায়াত আমিরের
তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার যাওয়ার তিনদিন আগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিল। তারা করেছিল জামায়াতকে নিষিদ্ধ, আর আল্লাহ তায়ালা এই জাতির মাধ্যমে তাদেরকে দেশছাড়া করেছেন। তারা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে।
সেলিম উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করছে। জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সুযোগ পেলেই মানুষের কল্যাণ, উপকার করার চেষ্টা করে। জামায়াতের কর্মী কোথাও প্রতিবেশীর সম্পদ দখল করে না, প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। জামায়াতে ইসলামীর পরিচয় দিয়ে কেউ কাউকে কোনো কষ্ট দেয়, প্রতিবেশীর হক নষ্ট করে, প্রতিবেশীকে কোনো কারণে ডিস্টার্ব করে-এমন একটি ঘটনাও দেখাতে পারবে না বলেও দাবি করেন দলটির এই নেতা।
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন, জামায়াতে ইসলামীর লোকদের তৈরি করা হয় এমনভাবে, যেন তারা মানুষের কল্যাণ ও সেবা করতে পারে। আমরা ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে এটা করি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে যুব বিভাগের উদ্যোগে ন্যায্যমূলে পণ্য বিক্রির উদাহরণও টানেন তিনি।
সেলিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার জিনিসপত্রের দাম দ্রুত সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসবেন বলে আশা করেছিলেন তারা। তিনি বলেন, তারা চেষ্টা হয়তো করছেন, কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ নামের কলঙ্ক, কিছু অমানুষ- যাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে, তাদের বিভিন্ন সামাজিক পরিচয় আছে, তারাই বাজার ও পরিবহন সিন্ডিকেট করে বাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বলবো, কারো চেহারার দিকে না তাকাবেন না। বরং যাদের ত্যাগের বিনিময়ে ক্ষমতায় এসেছেন তাদের চেহারার দিকে তাকান। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে যারা চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ- তাদেরকে ধরে বিচার করুন। প্রতিহত করুন। এদেশের ১৮ কোটি মানুষ আপনাদেরকে সমর্থন দেবে। আর যদি তা না করে জাতিকে কষ্ট দেন তাহলে আপনারাও ভালো কিছু করতে পারবেন না- ব্যর্থ হয়ে বিদায় নেবেন।
আরও পড়ুন: রংপুরে জামায়াতের হিন্দু শাখার কমিটি গঠন
জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমরা আপনাদের ব্যর্থতা চাই না। আপনারা ব্যর্থ হলে জাতি ব্যর্থ হবে। আপনারা ব্যর্থ হলে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে- আমরা এটা চাই না। আমরা আপনাদের পাশে আছি।
ন্যায্যমূল্যের বাজার ঢাকার সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। টিসিবির পাশাপাশি জনগণের জন্য আরও কমদামে পণ্য দিয়ে সেবা দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এই উদ্যোগের সূচনা হলো বলেও উল্লেখ করেন সেলিম উদ্দিন।