নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) টাকা উদ্ধারে সহযোগিতা করতে নিরাপদে দেশে ফিরতে চান তিনি। তবে দেশে ফিরে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আদালতের হেফাজতে যেতে চান। এজন্য আইএলএফএসএল-এর পক্ষ থেকে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার আবেদন করা হয়েছে।
ওই আবেদনের শুনানির এক পর্যায়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের কৌসুলির উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেন, পিকে হালদার কবে কখন কোন ফ্লাইটে দেশে ফিরতে চান সেটা আদালতকে অবহিত করুন। আমরা চাই বিনিয়োগকারী যেন তাদের অর্থ ফেরত পায়। তবে ওই আবেদনের উপর প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়ার আগে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও দুদকের বক্তব্য গ্রহন করা হবে বলেও জানিয়েছে আদালত।
হাইকোর্টে আইএলএফএসএল-এর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
হাইকোর্ট গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডি, বহুল আলোচিত পিকে হালদারসহ ১৩ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ, সকল সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেন।
একইসঙ্গে পিকে হালদারের মা, স্ত্রী, ভাইসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ, সকল সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া পিকে হালদারসহ এই ২০ জনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং তাদের গত ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই প্রতিষ্ঠানের ৭ আমানতকারীর করা এক আবেদনে এ আদেশ দেন হাইকোর্টের কম্পানি আদালত। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আইএলএফএসএল-এর দুজন পরিচালক আপিল বিভাগে আবেদন করলেও আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
এ অবস্থায় পিকে হালদার দেশ থেকে পালিয়ে যান। তিনি বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি দেশে ফিরতে চান। এবিষয়ে আইএলএফএসএল-এর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে দাখিল করা আবেদনে বলা হয়, পিকে হালদার কানাডা থেকে আইএলএফএসএল-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আইএলএফএসএল-কে একটি চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়, আইএলএফএসএল-এর খেলাপি ঋন আদায়ে সহযোগিতা করতে তিনি দেশে ফিরতে চান। তবে দেশে ফিরলে তাকে পুলিশি হেফাজতে না নিয়ে আদালতের হেফাজতে নেওয়া হয়-এমন নিরাপত্তা চান তিনি। তিনি জীবনের নিরাপত্তা চান। ওই চিঠিও আদালতে উপস্থাপন করেন আইএলএফএসএল-এর আইনজীবী। পরে আইনজীবীদের উপস্থিতিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
বহুল আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই দুটি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করে তা পাচার করেছেন।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএলএফএসএল থেকে ১৫৯৬ কোটি টাকা সরানো হয়েছে। এরসঙ্গে পিকে হালদারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।