প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করতে এসে খোদ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে দুইদিন ধরে কুষ্টিয়া এবং পাশের মেহেরপুর জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেরিয়েছেন তদন্ত দলের সদস্যরা।
শুধু দুই জেলার দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণই নয়,অভিযুক্ত ব্যক্তি তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত টিমকে ভূরিভোজও করিয়েছেন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটে আলোচিত এই ঘটনাটি ঘটেছে।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই মোছা. কাঞ্চন মালার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক কেলেংকারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চলে আসছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ইউপি সদস্য হলেন তৃতীয় লিঙ্গের পায়েল
ইনচার্জ কাঞ্চন মালার স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে ইতোপূর্বে শিক্ষার্থীসহ প্রতিষ্ঠানের স্টাফরা বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ অফিসকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক কেলেংকারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ইতোপূর্বে দুইবার তদন্ত হলেও অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন ইনচার্জ কাঞ্চন মালা।
ইনচার্জের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সম্প্রতি ইনচার্জ কাঞ্চন মালার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সামগ্রীসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শারীরিক লাঞ্ছনাসহ অসদাচরণ, প্রতিষ্ঠানের ৩০ সিটের কোচ ব্যবহার করে নিয়মিত নিজ বাড়ি মেহেরপুরে যাতায়াত, অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর প্রদান, অবৈধভাবে পরিবার নিয়ে হোস্টেলে বসবাস করা, পছন্দের শিক্ষকদের পরীক্ষার ডিউটি ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সুযোগ প্রদান, বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন জিনিসপত্র নিজ বাড়ি মেহেরপুর নিয়ে যাওয়াসহ ১৩টি অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষিকা মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উপসচিব পরিচালক (শিক্ষা) মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর স্বাক্ষরিত তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়-সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর সুলতানা পারভীন, খুলনা নার্সিং কলেজের প্রভাষক লীলাবতী বিশ্বাস এবং ঢাকা নার্সিং কলেজের নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর মো. খোরশেদ আলমকে।
ওই কমিটিকে সরেজমিনে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
ইনচার্জ কাঞ্চন মালার অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম কুষ্টিয়ায় আসে।
প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, তদন্তকালে অভিযোগকারীদের সঙ্গে পৃথক-পৃথকভাবে মৌখিক কথা বলেন তদন্ত দল। দুপুরে প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই তদন্ত টিমের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন অভিযুক্ত ইনচার্জ কাঞ্চন মালা। মধ্যাহ্নভোজ শেষে বিকালে অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত দল প্রতিষ্ঠানের কোচে চড়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার বাউল সম্রাট লালন সাঁই’র আখড়া বাড়ি পরিদর্শনে যান এবং লালন একাডেমির শিল্পীদের গান উপভোগ করেন।