দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কোনো মানুষই দুর্নীতিবাজ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে না। পারিবারিক, সামাজিক ও আশপাশের পরিবেশই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। তাই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিজের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: একাডেমিক ডিগ্রির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান অর্জনের আহ্বান রাষ্ট্রপতির
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘আপনার অধিকার, আপনার দায়িত্ব: দুর্নীতিকে না বলুন’।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবানদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলেই সমাজে দুর্নীতি হ্রাস পাবে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের চাহিদার সীমা থাকে, কিন্তু লোভ সীমাহীন। দুর্নীতি এমন একটি বিষয় যা প্রত্যেক সমাজে প্রচলিত আছে। পৃথিবীর কোনো দেশই এর কুপ্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। ’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সামাজিকভাবে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগ্রত না হলে কেবল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়।’
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া এর কোনো বিকল্প নেই। মানুষের মাঝে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা তৈরি এবং দুর্নীতগ্রস্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমেই কেবলমাত্র দুর্নীতিকে সহনশীল মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব।’
তিনি কমিশনের সকল পর্যায়ে কর্মচারীদেরকে তাদের দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শনের আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আগে আপনাকে নিজের অনিয়ম ও অসততা দূর করতে হবে। যারা রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবে তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে জাতীয় ঐক্যের জন্য মতভেদ দূর করুন: রাষ্ট্রপতি
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না জনমনে এমন ধারণা জন্মাতে পারলেই দুদকের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে।’
দিবসটি উপলক্ষে দুদক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আলোচনা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মানববন্ধনের আয়োজন করেছে।
এ উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্টুন প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
দুর্নীতিকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্যোগের ফলে ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর জাতিসংঘে দুর্নীতিবিরোধী সনদ আনকাক গৃহীত হয়।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।