দেশব্যাপী প্রতিভা সন্ধান কর্মসূচি আয়োজনসহ সাতটি অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সচিবালয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ তথ্য জানান।
রিমেম্বারিং মুনসুন রিভোলিউশন, তারুণ্যের উৎসব, দেশব্যাপী প্রতিভা সন্ধান কর্মসূচি, ডিজিটাল ওরাল হিস্ট্রি প্রকল্প, বাংলা একাডেমির সৃজনশীল লেখালেখি কর্মশালা ও গবেষণা প্রকল্প, জাতীয় জাদুঘরে আধুনিক ভিডিও প্রক্ষেপণ ব্যবস্থা স্থাপন এবং শো-ক্রিয়েটর ওয়ার্কশপ- এই সাতটি অগ্রাধিকার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নতুন সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা দেশব্যাপী প্রতিভা সন্ধান কর্মসূচি আয়োজন করতে চাই।
উপদেষ্টা বলেন, 'আগে শিল্পকলার এমন একটা কর্মসূচি ছিল। এখন আমরা এটাকে বিস্তৃত পরিসরে করতে চাই। এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরা শিগগিরই দুই মন্ত্রণালয়ে মিলে এ বিষয়ে কাজ করব। বড় আকারের ট্যালেন্ট হান্ট করতে বিটিভি এবং অন্য একটি বেসরকারি চ্যানেলকে আমরা সঙ্গে নিতে চাই। যাতে আমরা দুই ধরনের দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারি।'
তিনি বলেন, 'এই প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে প্রচলিত বিষয়ের পাশাপাশি নতুন নতুন অনেক বিষয় ঢুকবে। এর মধ্যে র্যাপও থাকবে, এমনকি আমরা এখানে স্ট্যান্ড আপ কমেডিও যুক্ত করতে পারি।'
আরও পড়ুন: মন্ত্রিত্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানের পুরস্কার নয়: ফারুকী
রিমেম্বারিং মুনসুন রিভোলিউশন
উপদেষ্টা বলেন, 'রিমেম্বারিং মুনসুন রিভোলিউশন বাস্তবায়ন যা বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা এবং নবতরঙ্গ সৃষ্টি করবে। এতে বাংলাদেশের ৮ জন শীর্ষ নির্মাতার মাধ্যমে ৮টি বিভাগে ৮টি ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট মেকিং কর্মশালার আয়োজন করা হবে। ওয়ার্কশপের আউটপুট হিসেবে ৮টি মাঝারি দৈর্ঘ্যের ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট তৈরি করা হবে।'
এছাড়া ৮টি নতুন থিয়েটার প্রোডাকশন তৈরি করা হবে জানিয়ে ফারুকী বলেন, 'নজরুলের গান নিয়ে দেশের তরুণদের কাছে জনপ্রিয় শীর্ষ স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে একটি অ্যালবাম তৈরি করা হবে এবং এটা প্রকাশনা উপলক্ষে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কনসার্ট আয়োজন করা হবে। এই কনসার্ট সারা দেশে সম্প্রচার করা হবে। ফটোগ্রাফি পেইন্টিং ও কার্টুন প্রর্দশনী করা হবে।'
তারুণ্যের উৎসব
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত 'তারুণ্যের উৎসব' উপলক্ষে দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে মন্ত্রণালয়। এটা বিপিএলের সহযোগিতায় হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় থাকবে।
ডিজিটাল ওরাল হিস্ট্রি প্রকল্প
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, রিমেম্বারিং মুনসুন রিভোলিউশনে যে লাখ লাখ মানুষ যুক্ত হয়েছে, তাদের অংশগ্রহণের ইতিহাস ভিডিও ক্যামেরায় রেকর্ড করে আমাদের কাছে পাঠানোর জন্য বলা হবে। একটা বৃহৎ ডিজিটাল আর্কাইভিং করা হবে। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হবে- আপনার অভিজ্ঞতা, অংশগ্রহণ বা আপনার চোখে দেখা গল্প আপনি আপনার মোবাইল ক্যামেরায় রেকর্ড করে পাঠান আমাদের কাছে। এই ভিডিওগুলো আমরা প্রচারের ব্যবস্থা নেব প্রদর্শনীর মাধ্যমে।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে যারা গণহত্যা পরিচালনা করেছে তারা এখনও সেটা অস্বীকার করছে। কেউ সেটা স্বীকার করেনি, ক্ষমাও চায়নি। অপরাধ করে অস্বীকার করা হচ্ছে অপরাধের প্রথম কাজ। কাউন্টার হিসেবে আমরা এ পদক্ষেপ নেব।
সৃজনশীল লেখালেখি কর্মশালা ও গবেষণা প্রকল্প
এ কর্মসূচির আওতায় বাংলা একাডেমির মাধ্যমে প্রতিশ্রুতিশীল লেখকদের জন্য সৃজনশীল লেখালেখি কর্মশালা এবং বই প্রকাশ করা হবে। ৫০টি গবেষণা প্রবন্ধ ও ১০টি এক বছর মেয়াদি গবেষণা বৃত্তি থাকবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
আধুনিক ভিডিও প্রক্ষেপণ ব্যবস্থাপনা স্থাপন
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, জাতীয় জাদুঘরের অডিটোরিয়ামে প্রক্ষেপণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হবে, যাতে স্টেজ পারফরমেন্সসহ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র/ডকুমেন্টারি ও অন্যান্য ভিজুয়্যাল কন্টেন্ট ও সারা বছর প্রদর্শন করা যায়।
শো-ক্রিয়েটর ওয়ার্কশপ
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওটিটি প্লাটফর্মের অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ-তরুণীদের জন্য শো-ক্রিয়েটর কর্মশালা আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নবায়ন হয়েছে ২০২৪-এর অভ্যুত্থানে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শব্দটা বলে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। গত ১৬ বছর বাংলাদেশের মানুষ মনে করেছে তারা স্বাধীন নয়।'
তিনি বলেন, ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা এটা ২০২৪ এর একটি অঙ্গীকার, সেটা নিশ্চয় বাস্তবায়ন করা হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা হচ্ছে- আপনি যে কাউকে সমালোচনা করতে পারবেন। কিন্তু যিনি খুনি তার বিচারকে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য যদি কিছু বলতে চান সেটাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলব কি না-আমি জানি না।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম নিজ নিজ দপ্তরের উদ্যোগ তুলে ধরেন।
নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক বলেন, রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধুকে দেবতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা মানুষকে মানুষের কাতারে আনতে চাই। আমরা একটা সাংস্কৃতিক যুদ্ধের মধ্যে আছি। মানুষকে দেবতা থেকে কীভাবে মানুষ হিসেবে দেখতে হয় সেটা আমাদের শিখিয়েছেন কবি নজরুল।
তিনি বলেন, সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নজরুলের সব সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটা ইভেন্ট করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহ থেকে সেটা শুরু হয়েছে।
লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, 'যে নজরুল হারিয়ে গিয়েছিলেন তার চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা এসব কাজ করব। আমরা দুটি সংস্কৃতিক হাব তৈরি করতে যাচ্ছি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কুয়াকাটায় সমুদ্র সৈকত এলাকায় আমরা একটি নজরুল মঞ্চ করব। ধানমন্ডি লেকের পশ্চিম অংশে আমরা একটি বিদ্রোহী চত্বর করব।'