আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষ কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেননি।
রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইএসএস) এক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ বছরের মার্চ মাসে জেনেভায় মিশেল ব্যাচেলেটের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। সাক্ষাৎকালে মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ এবং এখানকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মিশেলকে বংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলে জানান আনিসুল হক।
তিনি বলেন, আমন্ত্রণের পর তিনি চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। ব্যাচেলেট তার সফরকালে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন। হাইকমিশনার যখন দেশে এসেছিলেন তখন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন এবং তিনি সব কিছু দেখে মন্তব্য করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় তাঁর মন্তব্যটা (নেতিবাচক কোনো কিছু না আসা) অত্যন্ত ‘ডিপ রুটেড এবং ওয়েল আন্ডারস্ট্যুড’। এছাড়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার যে, গণতন্ত্র এবং ইক্যুইটির (ন্যায়পরায়ণতা) ওপর বিশ্বাস করে দেশ চালাচ্ছেন সেটাও বোঝা যায়।
আরও পড়ুন: আ.লীগ জনগণের দল, আমাদের শক্তি জনগণের শক্তি: আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্কল্প, দূরদৃষ্টি, সাহসিকতার ফলেই পাকিস্তানি অত্যাচার-অবিচার থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, যা এখনও এদেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করছে।
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, জাতির পিতা সফলভাবে নিরপেক্ষতার নীতি সমুন্নত রেখেছিলেন। তাঁর স্মরণীয় নীতি, ‘সকলের প্রতি বন্ধত্ব, কারো প্রতি শত্রুতা নয়’ বাংলাদেশের পরারাষ্ট্র নীতির মূল ভিত্তি এবং শান্তি, সহযোগিতা, উন্নয়ন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে একটি উত্তম বিশ্ব গড়বার জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী। তাঁর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পররাষ্ট্রনীতিই বাংলাদেশকে ‘কোল্ড ওয়ার’ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু একজন নেতাই ছিলেন না, তিনি রাজনীতির দার্শনিক। তাঁর চিন্তা ও দর্শনে ছিল বাংলাদেশের উন্নয়ন। তিনি বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র ও দুর্নীতিমুক্ত করতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনকও তিনি। এর প্রমাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’কে জাতীয় সংগীত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন যা, বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রতিনিধিত্ব করে। মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের মিশেলে তিনি একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. দেলওয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিআইআইএসএস- এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিশ্বনেতা ছিলেন, যাঁর আদর্শ, চিন্তাধারা, নীতি, কর্ম ও ধারাবাহিকতা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বর্হিবিশ্বেও প্রশংসা এবং গ্রহণীয়তা লাভ করেছে। জীবদ্দশায় এবং বর্তমানেও তাঁর বিশ্বভাবনার প্রাসঙ্গিকতা একইভাবে বিদ্যমান রয়েছে।
সেমিনারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বৈদেশিক দূতাবাসের প্রতিনিধি, সাবেক কুটনিতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, একাডেমিয়া, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষণা, সংস্থার প্রতিনিধি আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতিনিধি, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনার অভাবেই মামলাজট: আইনমন্ত্রী
জিয়া মারা না গেলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি হতেন: আইনমন্ত্রী