১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত প্রতিবাদের সত্য ঘটনা অবলম্বনে তথ্যচিত্রটি নির্মিত।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের জন্য মার্কিন সরকারের সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধের জন্য একদল আমেরিকান ও বাংলাদেশি মানুষ কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল তা ২৫ নভেম্বর প্রদর্শিত তথ্যচিত্র ‘ব্লকেড’-এ তুলে ধরা হয়েছে।
বুধবার দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ব্লকেড’ তথ্যচিত্রটি দুর্লভ তথ্যপ্রমাণ এবং সেই প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী শীর্ষ ব্যক্তিদের সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশে দেশে সাধারণ মানুষও যে কতটা প্রতিবাদী হতে পারে তা তুলে ধরার মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি জনগণ যখন স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলে, তারই প্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো তা ধীরে ধীরে জানতে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে বসবাসরত বাংলাদেশি আইটি বিশেষজ্ঞ আরিফ ইউসুফ নিজ প্রণোদনায় তথ্যচিত্রটি পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন। এটি ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রানসিসকোতে ২০১৭ সালের ওয়ার্ল্ড’স ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রামাণ্যচিত্র ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে।
‘ব্লকেড’ তথ্যচিত্রে ১৯৭১ সালে ফিলাডেলফিয়াতে বসবাসকারী শান্তিবাদী রিচারড কে টেইলর, ফিলিস টেইলর, স্যালি উইলবি, পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ক্লাউস ক্রিপেনডরফ, ড. চার্লস খান এবং ফিলাডেলফিয়াতে বসবাসরত বাংলাদেশি ড. সুলতানা আলম, ড. মোনায়েম চৌধুরী, মাঝহারুল হক প্রমুখের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
তাদের অহিংস আন্দোলনের কারণেই অনেক পাকিস্তানি জাহাজকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শূন্যে ফিরতে হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা সাধারণ মানুষের এবং সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রতীকী অবরোধ হিসেবে অস্ত্রবাহী পাকিস্তানগামী জাহাজের সামনে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছিল। দলটি সাফল্যজনকভাবে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হয়।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ, টিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন ছবি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রামাণ্যচিত্রটি পাকিস্তানের প্রতি তৎকালীন আমেরিকান সরকারের ভুল পররাষ্ট্র নীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে তুলে ধরেছে।
৮৫ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রটি প্রদর্শনের পর পরিচালক ও প্রযোজক আরিফ ইউসুফ স্কাইপের মাধ্যমে দর্শকদের সাথে যুক্ত হন এবং আট বছরের অধিক সময় নিয়ে নির্মিত এই তথ্যচিত্র নির্মাণে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
এসময় নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল পরিচালক আরিফ ইউসুফকে তথ্যচিত্রটি সফলভাবে তৈরির জন্য অভিনন্দন জানান এবং এটি দূতাবাসে প্রদর্শনে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ দেন।
বিজয়ের মাসের প্রাক্কালে এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বেলাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সব শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বাংলাদেশিদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অর্জনকে তুলে ধরার আহ্বান জানান।