বৃহস্পতিবার রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করেছেন রায় প্রদানকারী বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মো. মোস্তফা জামান ইসলাম। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত রায়ের কপি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট সেকশনে পৌঁছায়নি। আগামী রবিবার নাগাদ রায়ের কপি প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট সাত খুন মামলার রায় ঘোষণা করে। ওই রায়ে মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত লে.কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ, কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ পনেরো জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয় ১১ জনকে।
এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যু অনুমোদন মামলা) ও আপিলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে সংক্ষিপ্ত ওই রায় দেয় আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল র্যাব সদস্যের কারণে এ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ম্লান হতে পারে না। তাদের সন্ত্রাসবিরোধী গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ধূলিসাৎ হতে পারে না। কিন্তু এ ঘটনায় বাহিনীর কতিপয় সদস্যের শয়তানি প্রবৃত্তি মানবসভ্যতার মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। যে সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে, হেফাজতে তাদের মৃত্যুযন্ত্রণা ছিল ভয়াবহ ও অকল্পনীয়। র্যাব সদস্যরা এতটাই নির্দয় ছিলেন যে তাদের হত্যার পর তলপেট ছুরি দিয়ে কেটে বস্তাবন্দী করা হয়। প্রতিটি বস্তার সঙ্গে ১০টি ইট বেঁধে দেয়া হয়, যাতে লাশ নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এ নৃশংসতায় প্রতীয়মান হয়, তারা মরদেহের ওপর কতটা নির্দয় ছিলেন।’ সংক্ষিপ্ত রায়ের পর পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার কাজ শুরু হয় যা বৃহস্পতিবার শেষ হয়।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তারপর তাদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে লাশগুলো গুম করা হয়। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের ছয়জনের এবং পরদিন আরেকজনের লাশ পাওয়া যায়। হত্যা ও গুমের ঘটনা প্রকাশের পরই নৃশংসতায় শিউরে উঠেছিল সারা দেশের মানুষ।
এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটির বাদী নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এবং অপরটির বাদী আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল র্যাবের ২৫ জন (চাকরিচ্যুত) কর্মকর্তা, সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। নিম্ন আদালত এ মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করে। রায়ে ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় নিম্ন আদালত। একই বছরের ১৬ জানুয়ারি নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ৩৫ আসামির মধ্যে ২৮ আসামি আপিল করেন, বাকি সাতজন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। এছাড়া মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে গেলে তা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন তখনকার প্রধান বিচারপতি। পরে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট রায় দেয়।
হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হচ্ছেন- হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়্যব আলী, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলীম, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া ও আরওজি-১ এবি মো. আরিফ হোসেন, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আল আমিন শরীফ, সৈনিক এমডি তাজুল ইসলাম।
সাজা কমিয়ে যে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট তারা হলেন-আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী, আবুল বাশার, আসাদুজ্জামান নূর, মোর্তুজা জামান চার্চিল, এনামুল কবীর, সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, শাহজাহান ও জামলা উদ্দিন।
অন্যান্য মেয়াদে দণ্ড বহাল রাখেন ৯ আসামির। এরা হলেন-রুহুল আমীন ১০ বছর, বজলুর রহমান ৭ বছর, নাসির উদ্দিন ৭ বছর, আবুল কালাম আজাদ ১০ বছর, নুরুজ্জামান ১০ বছর, বাবুল হাসান ১০ বছর, মো. মোখলেছুর রহমান ১০ বছর, কামাল হোসেন ১০ বছর এবং হাবিবুর রহমানের দুই অপরাধের জন্য ১৭ বছরের দণ্ড বহাল রাখা হয়।
এখন আসামিপক্ষ রায়ের কপি হাতে পেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করবেন। আপিল বিভাগে শুনানির পর আসামিদের সাজা চূড়ান্ত হবে।