বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনের মাধ্যমে অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ৯ জন সাংবাদিককে ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস প্রকল্পের আওতায় এই মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের আয়োজন করা হয়। রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে অবস্থিত সুইডেন দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একটি দেশকে যথাযথভাবে উন্নত করতে হলে জোর দিতে হবে সামাজিক উন্নয়নের দিকেও। বাল্যবিয়ে এই পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়। বাংলাদেশকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করতে বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অনেকটা পথ এগোলেও করোনা আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে নতুন চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, সমাজের চিন্তাচেতনা সহসা পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে পরিবর্তন আসছে, সবাই এর বিরুদ্ধে কথা বলছি। কিন্তু মূল কারণের সমাধান না হলে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না। আর এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
আরও পড়ুন: ব্রাক অভিবাসন মিডিয়া পুরস্কার পেলেন ১৭ সাংবাদিক
সাংস্কৃতিক কর্মী শাহনাজ খুশি বলেন, মেয়েরাই এখন নিজেদের অধিকার নিশ্চিতে সচেতন। তারা নিজেরাই এখন পারছে নিজেদের বাল্যবিয়ে রুখে দিতে। গণমাধ্যম ও সংস্কৃতির এখানে আরও জোরালো ভূমিকা রয়েছে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (গার্লস রাইটস) কাশফিয়া ফিরোজ জানান, আমরা সারাদেশে জরিপ চালিয়ে দেখেছি, অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৩৫ শতাংশের মতে যৌন হয়রানির ভয় বাল্যবিয়ের অন্যতম মূল কারণ। ২৫ দশমিক ৬ শতাংশের মতে সামাজিক বিভাজন জনিত উদ্বেগের কারণে বাবা-মা মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন।
এই ভয় দূর করতে হবে। বিয়ে যে সমাধান নয়, এই বার্তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে পারে গণমাধ্যম, বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকার, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে। মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিতে সরকারি অনেক উদ্যোগ রয়েছে। অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন করে তোলা, তাদের ক্ষমতায়ন করা জরুরি যেন তারা অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে না দেয়, মেয়েদের কোনভাবেই বোঝা না মনে করে এবং মেয়েদের স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। আর এই সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম কাজ করে আসছে।
সাংবাদিক জ ই মামুন জানান, বাবা-মায়ের অনেকের ধারণা বিয়ে সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। এই অনিশ্চয়তা থেকে বাবা-মা’দের মুক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রসহ সবাইকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন হেড অব সেন্ট্রাল অ্যান্ড নর্দান রিজিওন আশিক বিল্লাহ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
পুরস্কার পেলেন যারা
আঞ্চলিক বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন জহিরুল ইসলাম (এস এ টিভি), শাকিল মুরাদ (একাত্তর টিভি), সফি খান (প্রথম আলো) ও মাসুদুর রহমান (আজকের পত্রিকা)। জাতীয় বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন শাহেদ শফিক (বাংলা ট্রিবিউন), নীলিমা জাহান (দ্য ডেইলি স্টার), সাজ্জাদ পারভেজ (যমুনা টিভি), নাজনীন আখতার (প্রথম আলো) ও জাহাঙ্গীর আলম (জাগো নিউজ ২৪)।
আরও পড়ুন: চার সাংবাদিক পেলেন অ্যাকশন এইড ইয়াং জার্নালিস্ট মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড
বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস (বিবএফজি) প্রকল্পটি কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা, ৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদে কাজ করছে। ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে বাল্যবিবাহের সংখ্যা ১৮ বছরের নিচে এক–তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং ১৫ বছরের নিচে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।
বাল্যবিবাহ কমিটি শক্তিশালী প্রকল্পটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রতি মাসে কতসংখ্যক বাল্যবিবাহ হচ্ছে—তার তথ্য সংগ্রহ করে। ঘটক, কাজিসহ বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা গেলে বাল্যবিবাহ কমিয়ে আনা সম্ভব। কুড়িগ্রাম জেলায় বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছয় হাজার ১২ জন ব্যক্তির তালিকা তৈরি এবং তাদের প্রশিক্ষণ আওতায় নিয়ে আসে এই প্রকল্পটি।