প্রত্যাবাসনের অবস্থা তৈরিতে উভয় দেশের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি বলব, আমি সতর্ক ও আশাবাদী। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গারা বিবেচিত হচ্ছেন বাংলাদেশি হিসাবে: সৌদি দূত
প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শেষে পররাষ্ট্র সচিব জানান, আগের দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা এগিয়ে যেতে চান, যাতে সফলভাবে এবার প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়।
প্রত্যাবাসন প্রচেষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং মিয়ানমার এর বিরোধিতা করেনি। কোভিড-১৯ মহামারি এবং মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা গত এক বছর স্থগিত ছিল।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমার রাজি থাকলেও আন্তরিক নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। চীনের ভাইস মিনিস্টার লুও ঝাওহুই বেইজিং থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সাথে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই এ সঙ্কটের একমাত্র সমাধান বলে মনে করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড় দেশগুলোর সিদ্ধান্ত কৌশলগত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার প্রাক্কালে, সংলাপের ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাবকারী চীন বলেছে, শিগগিরই ও টেকসই সমাধানের জন্য অন্যান্য দুই দেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
এ অঞ্চলে শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বজায় রাখারও আশ্বাসও দিয়েছে চীন।
গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে সাক্ষাত করেন চীনের ভাইস মিনিস্টার লুও ঝাওহুই এবং এ বিষয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানান, যাচাই বাছাইয়ের জন্য ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ।
‘কিন্তু মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার মানুষের তথ্য যাচাই করেছে। এ বিষয়ে তাদের গুরুত্বের অভাব রয়েছে,’ বলেন তিনি।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করলেও মিয়ানমার তা করছে না।
তবে প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার।
রোহিঙ্গা সংকট
মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও স্বপ্ন দেখেছিল ২০২০ সালে মর্যাদার সাথে তাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের। কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এখন শুরু হয়েছে নতুন একটি বছর, আবারও স্বপ্ন দেখছেন তারা।
আরও পড়ুন: ফিরে দেখা ২০২০: রোহিঙ্গাদের জন্য যন্ত্রণার আরও এক বছর
মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থার অভাবের কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে দুবার প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুায়ারি ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সম্পর্কিত একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করে ঢাকা-নেপিদো, যা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়েছিল।