জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ মারা গেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানান ছেলে হুমায়ুন রশিদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
রাতে এশার নামাজের পর রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়া-সংলগ্ন বাবা হুজুর মসজিদ প্রাঙ্গণে তাকে দাফন করা হবে।
অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদ ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের আসাম প্রদেশের তিনসুকিয়া জেলায় এক বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার পরিবার চট্টগ্রামে চলে আসে।
১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (ফিটসউইলিয়াম কলেজ) থেকে ১৯৬৬ সালে ফের স্নাতক এবং ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
আরও পড়ুন: বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
১৯৯১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলা একাডেমিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অবস্থায় তিনি ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধান বের করেন।
বাংলা একাডেমিতে চার বছর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনের পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান এবং সেখানেই ১৯৯৮ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে যান।
অবসর গ্রহণের পর ১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন অধ্যাপক রশিদ। ইংরেজি ভাষার জাতীয় সাপ্তাহিক পত্রিকা ঢাকা কুরিয়ারের প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মজীবনের ছোট্ট এই পাঠটি চুকিয়ে তিনি ফের শিক্ষতায় প্রবেশ করেন। এবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আট বছর সেখানেই শিক্ষকতা করেন।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ঢাকা শাখাতেও শিক্ষকতা করেন এবং ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
বিভিন্ন জাতীয় সংগঠনের মর্যাদাপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন গুণী। ১৯৯৮ সালে দুই বছর মেয়াদে তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ফের দুই বছর মেয়াদে বাংলা একাডেমির প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। এছাড়া ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট তিনি সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াইল্ড টিমের (ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
একজন শিক্ষাবিদ, প্রশাসক ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মুখপাত্র হিসেবে অধ্যাপক হারুন-উর রশিদের বিস্তৃত কর্মজীবন দেশের শিক্ষা খাত ও সমাজে তার বৈচিত্র্যময় অবদানকে তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: মেধাস্বত্ত্ব চুরির অভিযোগে নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের বাংলা একাডেমি পুরস্কার বাতিলের দাবি