বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে আট হাজারেরও বেশি মাছের ঘের ডুবে গেছে এবং তিন কোটি টাকার চিংড়ি ও বিভিন্ন মাছ ভেসে গেছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, ঘেরের বাঁধ ভেঙ্গে পানি মৎস্য ঘেরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। অনেকে ঘেরের পাড় মাটি দিয়ে উঁচু করে আর জাল দিয়েও শেষ পর্যন্ত চিংড়ি রক্ষা করতে পারেনি। এছাড়া বিভিন্ন ঘের ডুবে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
এদিকে ঘেরের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ঘের ডুবে তিন কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বর্ষার শেষ সময়ের বৃষ্টিতে রাজধানীর জনজীবন বিপর্যস্ত
তবে মৎস্য চাষিদের তথ্য মতে, তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নœচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে পাঁচদিন ধরে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট সদর, রামপাল, মোংলা, শরণখোলা, কচুয়া এবং মোড়েলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের সময় নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে।
এছাড়া বৃষ্টিতে নিম্নœ আয়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মোংলায় ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করেছে।
অন্যদিকে সুন্দরবনের মধ্যে থেকে জোয়ারের পানি নেমে গেছে। শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত তিন দিন জোয়ারের সময় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বনের মধ্যে দিয়ে সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।
পানির কারণে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে পড়ে। তবে পানিতে বন্যপ্রাণীর কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। সুন্দরবনের মধ্যে থেকে জোয়ারের পানি নেমে গেছে।
এছাড়া বুধবার জোয়ারের সময় পানি সুন্দরবনে প্রবেশ করেনি বলে বন বিভাগ জানায়।
অপর দিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুন্দরবনসহ উপক‚লে আশ্রয় নেয়া জেলেরা মাছ ধরতে আবারও সাগরে ফিরে যাচ্ছে।
বুধবার ভোর থেকে জেলেদের তাদের ট্রলার নিয়ে সাগরে রওনা হতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সারাদেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি আর সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আট সহস্রাধিক মৎস্য ঘের ডুবে গেছে।
এর মধ্যে বাগেরহাট সদরে ৫০০টি, মোংলায় দুইহাজার, রামপালে দুইহাজার, মোড়েলগঞ্জে দুইহাজার, কচুয়ায ৫০০টি এবং শরণখোলায় এক হাজার মৎস্য ঘের ডুবে যায়।
ক্ষয়ক্ষতির পূণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মোংলার মৎস্য চাষি ফণিভুষণ বিশ্বাস জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে তার এবং তাদের আশেপাশে অধিকাংশ মৎস্যঘের ডুবে গেছে। বিভিন্ন ঘের ডুবে মিশে গেছে। এসব ঘেরের ওপর দিয়ে এক ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। তাদের কয়েক লাখ টাকার চিংড়ি ও সাদা মাছ ভেসে গেছে।
জেলা মৎস্য চাষি সমিতির সভাপতি সুমন ফকির জানান, বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানিতে জেলায় কয়েক হাজার মৎস্যঘের ডুবে চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য চাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
চিংড়ি শিল্প বাঁচাতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রণোদনা এবং সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ৬৯ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ৭৭ হাজার ৬৫৭টি মৎস্যঘের রয়েছে। মৎস্য চাষের সঙ্গে জড়িত চাষির সংখ্যা ৬২ হাজার।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের দুবলারচর ফরেস্ট ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ মজুমদার জানান, বুধবার জোয়ারের সময় সুন্দরবনে পানি প্রবেশ করেনি। এর আগে তিন দিন সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে সাড়ে তিন ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে। আশ্রয় নেয়া জেলেরা তাদের ট্রলার নিয়ে আবারও সাগরে মাছ ধরতে ফিরে যাচ্ছে।
মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, স্থল নিম্নচাপটি বর্তমানে ভারত প্রদেশের মধ্যে অঞ্চল ও পাশ^বর্তী এলাকায় অবস্থান করছিল। এছাড়া এটি আরও দুর্বল হতে পারে।
বৃহস্পতিবার থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে পারে ।
আরও পড়ুন: তীব্র খরায় বাগেরহাটে আমন উৎপাদন ব্যাহত