বাগেরহাট
সুন্দরবনে আগুন, পানির উৎসের অভাবে নিয়ন্ত্রণে জটিলতা
বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের কলমতেজী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ি এলাকায় আগুন লেগেছে। শনিবার (২২ মার্চ) সকালে বনের টেপারবিল এলাকা থেকে প্রথমে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
বিকালে বন বিভাগের পক্ষ থেকে আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপনে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে বলে এ সময় জানানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান বনকর্মীরা। তবে খাল থেকে আগুন লাগার ওই এলাকার দূরত্ব বেশি হওয়ায় পানির উৎসের অভাবে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন যেন বনের ব্যাপক এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য আগুনের চারপাশে ফায়ারলাইন কাটা শুরু করেছেন বনরক্ষীরা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের শরণখোলা স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা আবতাদ ই আলম বলেন, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ ফায়ার স্টেশন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। রামপাল ও কচুয়া থেকে তাদের আরও দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
ধানসাগর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য পান্না মিয়া বলেন, সকালে সুন্দরবনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপারবিল এলাকার বনের মধ্যে আগুনের ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। এরপর বিষয়টি ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তাদের জানানো হয়।
আরও পড়ুন: ‘সুন্দরবন দিবস’ আজ, জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনে ২৩ বছরেও মেলেনি সাড়া
ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা ফরেস্টার বিপুলেশ্বর দাস বলেন, ‘আশেপাশে পানির কোনো উৎস নেই। বনের খাল থেকে প্রায় দুই-আড়াই কিলোমিটার দূরে গহীন বনের মধ্যে আগুন জ্বলছে। খালে জোয়ার এলে নৌপথে পানির পাম্প নেওয়া হবে।’
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করীম বলেন, সুন্দরবনে আগুন লাগেছে, আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। সেখানে পৌছানোর পর আগুনের বিস্তৃতি বা কী অবস্থা সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো।
২৫ দিন আগে
বাগেরহাটে উঠতে শুরু করেছে তরমুজ, কেজি ৫০ টাকা
বাগেরহাটে উঠতে শুরু করেছে তরমুজ। ফলের দোকানে পসরা সাজিয়ে কিংবা ভ্যান করে বিক্রি হচ্ছে রসালো এই ফল। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা।
বিভিন্ন জাত ও নানা সাইজের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে বাগেরহাট বাজারে। ক্রেতাদের কাছে যেকোনো ফলের চেয়ে তরমুজের চাহিদা বেশি। ইফতারিতে তরমুজের প্রাধান্য বেশি। এছাড়া এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে আলদাভাবে তরমুজ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সাইজের তরমুজ পথচারীদের নজর কাড়ে। পথচারী থেকে শুরু করে করে অনেকে যানবাহন থামিয়ে তরমুজ ক্রয় করছেন। তিন কেজি থেকে শুরু করে আট কেজি ওজনের তরমুজ দেখা গেছে সেখানে।
আরও পড়ুন: চাষ না হলেও দক্ষিণের তরমুজে ভরপুর চাঁদপুর
পথচারী হালিম শেখ বলেন, ‘রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা এত তরমুজ এই মৌসুমে প্রথম দেখা গেলো। ৫০ টাকা কেজি দরে ৬ কেজি ওজনের একটি ক্রয় করে সে।
মিল্টন, আলম, তৌহিদ, অমলসহ বেশ কয়েকজন ক্রেতারা জানান, তরমুজ তাদের অনেক পছন্দ। একারণে দাম যাই হোক; তারা তরমুজ ক্রয় করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা জানান, ৫০ টাকা তরমুজের কেজি তাদের কাছে বেশি হয়ে গেছে। মৌসুমের প্রথম ফল ও তরমুজ তাদের সবার পছন্দ থাকায় প্রয়োজনের তুলনায় ছোট সাইজের তরমুজ ক্রয় করেছেন।
হাবিব হোসেন পটুয়াখালী চাষিদের জমি থেকে প্রায় দেড় হাজার তরমুজ ক্রয় করে ট্রাকবোঝাই করে বাগেরহাট মিঠাপুকুর পাড়ে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যবসা করছি। মিঠাপুকুর পাড়ে বিক্রি জন্য স্তূপ করে তরমুজ রাখা হয়েছে। ট্রাক থেকে তরমুজ নামানোর পর থেকে ক্রেতারা আসছেন তরমুজ ক্রয় করতে। খুচরা প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এভাবে তরমুজ বিক্রি করতে পারলে বেশ টাকা লাভ হবে।’
এছাড়া এই মৌসুমে তরমুজ বাজারে প্রথম উঠছে। এ কারণে দাম একটু বেশি বলেও জানান তিনি। কয়েকদিন পরে তরমুজের দাম কমে আসবে বলেও জানান হাবিব হোসেন।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘সারাবছরজুড়ে কমবেশি তরমুজ পাওয়া যায়। তরমুজের প্রধান মৌসুম মার্চ মাস।’
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে তরমুজের বাম্পার ফলন, সেচ-পরিবহন সমস্যায় কৃষকরা
তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা জাতের হাইব্রিড তরমুজ চাষ হচ্ছে। এ বছর তরমুজের ফলনও ভালো। তরমুজ হাট-বাজারে নতুন আসায় এর দামও বেশি।’
উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার আরও বলেন, ‘গ্রীষ্ম ও শীতকালে বেশি তরমুজ চাষ হয়। গ্রীষ্মকালের তরমুজের চারা নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে রোপণ করা হয়।’ এছাড়া ড্রাগন কিং, পাকিজা, বিগফ্যামিলি, এশিয়ান ও বাংললিংকসহ বিভিন্ন নামে হাইব্রিড তরমুজ চাষ করা হয়েছে বলে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান।
৪১ দিন আগে
খাদ্য গুদামে আমন ধান দিচ্ছেন না বাগেরহাটের চাষিরা
বাগেরহাটে এবছর আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে। ধানের ফলনে লবণাক্ত এই অঞ্চলের চাষিরা খুশি। ফলন ভাল হলেও চলতি মৌসুমে বাগেরহাটের চাষিরা খাদ্যগুদামে আমন ধান বিক্রি করতে নিয়ে আসেনি। ফলে এবছর বাগেরহাট জেলায় এখনও পর্যন্ত এক ছটাক পরিমাণও আমন ধান সংগ্রহ হয়নি।
হাট-বাজারের চেয়ে সরকার নির্ধারিত সংগ্রহের মূল্যে মণ প্রতি প্রায় ১০০ টাকা কম ছিল। একারণে চাষিরা খাদ্য বিভাগের কাছে ধান বিক্রি করেনি।
এছাড়া সিন্ডিকেট এবং নানা ধরণের নিয়ম কানুনের কারণে চাষিরা খাদ্য বিভাগের কাছে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে চাল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯২ শতাংশ সংগ্রহ হয়েছে বলে খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে।
চাষিরা বলছেন, সরকারিভাবে চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহজে ধান কেনা উচিত। সেই সঙ্গে হাট-বাজারের চেয়ে সরকারি সংগ্রহ মূল্যে বেশি থাকতে হবে।
খাদ্য বিভাগ বলছে, শেষ সময় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাগেরহাটে আমন ধান সংগ্রহ হওয়ার আর সম্ভবনা নেই। হাট-বাজারের চেয়ে সরকারি মূল্যে কম থাকায় এখনও পর্যন্ত এক ছটাক পরিমাণও আমন ধান ঢোকেনি সরকারি গুদামে।
আরও পড়ুন: ঐতিহ্যের তালপাখা, ব্যস্ত বাগেরহাটের কারিগররা
জানা গেছে, সরকার অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মৌসুমে আমন ধান-চাল সংগ্রহ চলবে। বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলা থেকে তিন হাজার ৯০২ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সরকারিভাবে সংগ্রহের মূল্যে প্রতিমণ ধান ১ হাজার ৩২০ টাকা। কিন্তু, হাট-বাজারে ধান ১ হাজার ৪০০ থেকে, ১ হাজার ৪২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় এক ছটাকও ধান সংগ্রহ হয়নি।
জেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য মতে, সরকারিভাবে বাগেরহাট সদরে ৪০৯ টন, মোড়েলগঞ্জে ১১৩৯ টন, রামপালে ৫০৫ টন,শরণখোলায় ৪৭৮ টন, মোংলায় ১৬০ টন, ফকিরহাটে ২৮৪ টন, মোল্লাহাটে ২০৭ টন, কচুয়ায় ৩৩৭ টন এবং চিতলমারী উপজেলায় ৩৮৩ টন ধান সংগহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া জেলার ৯টি উপজেলা থেকে ৩ হাজার ৩০৪ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ পরিমাণ চাল সংগ্রহ হয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের সাইফুর রহমান নাথু জানান, তার প্রায় ২০ বিঘা ধানের জমি রয়েছে। তাদের জমিতে আমন এবং বোরো ধানের চাষ হয়। গত মৌসুমে সরকারি গুদামে আমন ধান বিক্রির জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, নিয়ম কানুন আর নানা কারণে শেষ পর্যন্ত সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেনি। একারণে এই মৌসুমে তিনি সরকারি গুদামে ধান বিক্রির চেষ্টা করেনি।
ফতেপুর গ্রামের তরুন কুমার পাল জানান, এবছর সে চার বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছে। বিঘা প্রতি ৩০ মন করে ১২০ মন ধান ফলেছে। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ধানে আদ্রতা একটু বেশি এবং চিটা থাকলে সরকারি গুদামে ধান নিতে চায় না। এছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে দৌড় ঝাপ করতে হয় বলে সে জানতে পেরেছে। আর এবছর হাট-বাজারে ধানের মূল্যে বেশি ছিল। সে কারণে তিনি সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী না।
বাগেরহাট সদরের বারুইপাড়া গ্রামের শেখ মুহাম্মদ মিজান জানান, দুই বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছে। ধান মারাই করার পর বাড়ি থেকে ব্যাপারী এসে ধান ক্রয় করে নিয়ে গেছে। সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা হয় এমন খবর তিনি জানেন না।
আরও পড়ুন: রপ্তানিতে আশা জেগেছে বাগেরহাটের চাষিদের, টমেটো যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়
বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) শাকিল আহমেদ জানান, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে হলে কৃষি কার্ড অথবা আইডি কার্ড থাকতে হবে। এর পর কৃষি বিভাগ থেকে অনুমোদন দেওয়ার পর কৃষকরা জনপ্রতি ১২০ কেজি থেকে ৩ হাজার কেজি পর্যন্ত ধান গুদামে নিয়ে আসতে পারবেন। ধানের আদ্রতা ১৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার প্রতিমণ আমন ধান সংগ্রহের মূল্যে ১ হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করেছে। চাষিদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হলে টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা দেওয়া হবে।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) শাকিল আহমেদ আরও জানান, জেলায় ৩ হাজার ৯০২ টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত জেলায় এক ছটাকও ধান সংগ্রহ হয়নি। ধান সংগ্রহের সময় প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন ধান সংগ্রহ চলবে। এই সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহ হওয়ার সম্ভবনা নেই। তবে চাল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯২ শতাংশ সংগ্রহ হয়েছে বলে তিনি জানান।
এক ছটাকও আমন ধান সংগ্রহ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে শাকিল আহমেদ জানান, হাট-বাজারের তুলনায় সরকার নির্ধারিত সংগ্রহের মূল্য কম হওয়ায় কারণে চাষিরা ধান বিক্রি করার জন্য তাদের কাছে আসছেন না। এছাড়া মুক্তবাজার অর্থনীতি হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের অধিকাংশ ধান উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়েছে। ফলে ধানের স্বাভাবিক সহজলভ্যতা ছিল না।
হাট-বাজারের সঙ্গে মিল রেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ক্রয়ের পরামর্শ দিলেন ওই খাদ্য কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ১২শ’ পাখি উদ্ধার, ফিরল আপন ঠিকানায়
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার জানান, জেলায় এবছর ৭৩ হাজার ২৩৪ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়। মোট দুই লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। জেলায় মোট ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮ জন কৃষক পরিবার রয়েছে। এরমধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার আমন ধান চাষি রয়েছেন। এবছর জেলায় আমন ধানের ফল ভাল হয়েছে। চাষিদের কাছ থেকে আরও সহজে ধান ক্রয়ের পরামর্শ দিলেন কৃষি কর্মকর্তা।
৫৩ দিন আগে
ঐতিহ্যের তালপাখা, ব্যস্ত বাগেরহাটের কারিগররা
ঋতুতে বসন্ত। এখনও কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হয়। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে গরম আসছে। গরমের মধ্যে শরীর শীতল করতে তালপাতার পাখার ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকে। তালপাতার পাখার নাম শোনেনি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। প্রযুক্তির এই যুগেও গ্রীষ্মকালে শহর,বন্দর, গ্রামগঞ্জে এখনও তালপাতার পাখার ব্যবহার রয়েছে। তালপাতার পাখার বাতাসে প্রাণ জুড়াতে এরই মধ্যে গ্রামে গ্রামে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকদিন পরে হাট-বাজার, মেলাসহ বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে দোকানে দোকানে নানা রঙের তালপাতার পাখা দেখা মিলবে। যুগযুগ ধরে তালপাতার পাখা তৈরিতে খ্যাতি রয়েছে বাগেরহাটের ফকিরহাটের মানসা গ্রামের। এখানে তালপাতার পাখা তৈরি করে জীবন চলে অনেকের। এখন ওই গ্রামের কয়েকটি পরিবার পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শুক্রবার(২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বাহিরদিয়া-মানসা ইউনিয়নের মানসা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তালগাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের কাঁচা পাতা কেটে মাঠ-ঘাটসহ বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় রোদে শুকানো হচ্ছে। শতশত তালের পাতা যেখানে সেখানে ছড়ানো রয়েছে। আবার কোনো কোনো স্তুপ করে রাখা রয়েছে পাতা। রিক্সাভ্যানে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা পাতা আনা হচ্ছে গ্রামে। দিনে রোদ আর রাতে শিশির মাখার পরের দিন ওই পাতা কেটে মাপমতো আকার দেওয়া হচ্ছে। এর পর পাখা তৈরির কারিগড় নারী-পুরুষ বেশ কয়েকজনের হাত বদল হয়ে তালপাতার পাখা পূর্নতা পাবে।
আরও পড়ুন: বর্ণিল আয়োজনে ঢাবিতে বসন্ত বরণ
তালগাছের নানা ব্যবহার রয়েছে আমাদের সমাজে। তালগাছ, তালপাতা এবং তালপাতার পাখা নিয়ে গান, গল্প, কবিতা এবং প্রবন্ধ রয়েছে। তালগাছের নানা ব্যবহারের পাশাপাশি নানা গল্পকাহিনী রয়েছে।
মানসা গ্রামের তালপাতার পাখা তৈরির কারিগড় নয়ন ফকির জানান, তাদের গ্রামের কমপক্ষে ১০টি পরিবার সরাসরি তালপাতার পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িত। বংশপরম্পরায় তারা তালপাতার পাখা তৈরি করে আসছে। তাদের গ্রামে তৈরি তালপাতার পাখার অনেক সুনাম রয়েছে। একারণে হাটে-বাজারে তাদের তৈরি পাখার ব্যাপক চাহিদা। ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন থেকে তাদের গ্রামে তালপাতার পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখন পাখা তৈরির প্রাথমিক কাজ চলছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাদের হাতে পরিপূর্ণভাবে পাখা তৈরি হবে।
নয়ন ফকির আরও জানান, প্রথমে তারা কাঁচা তালপাতা ক্রয় করে বাড়িতে এনে একদিন রোদে শুকায় এবং একরাত শিশিরে রাখে। এর পর কেটে পাখার মাপমতো করে স্তুপ দিয়ে রাখা হয়। তার পর বাঁশ, রঙ এবং সুতার ব্যবহার করে একাধিক হাত বদল হয়ে পরিপূর্ণ পাখা তৈরি হয়। পাইকারদের অর্ডার অনুযায়ী ছোট-বড় নানা সাইজের বিভিন্ন রকম পাখা তৈরি করেন তারা।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় আবারও জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা
৫৪ দিন আগে
শেখ হেলাল, তন্ময়সহ বাগেরহাট আ.লীগের ৩৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, বোমা বিস্ফোরণ ও স্থাপনা ধ্বংসের অভিযোগে বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় ও তৎকালীন পুলিশ সুপার আবুল হাসনাতসহ আওয়ামী লীগের ৩৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফেরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৬০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শহরের খারদ্দার এলাকার ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম মিঠু বাদী হয়ে ফকিরহাট থানায় এ মামলা করেন।
ওই দিনই মামলার এজাহারভুক্ত ৬ নম্বর আসামি আবুল হাসনাত খানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে পুলিশ আজ (রবিবার) তাকে বাগেরহাট আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন— বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আইনজীবী মীর শওকত আলী বাদশা, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান টুকু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী ভূইয়া হেমায়েত উদ্দিন, ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন কুমার দাশ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান, বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ ওরফে সাহেব মল্লিক, ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা ওহিদুর রহমান বাবু, ইমরুল হাসান, বাগেরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শিপন মিনা, শেখ হেলাল উদ্দিনের একান্ত সহকারী ফিরোজুল ইসলাম, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রেজাউর রহমান মন্টু, সাধারণ সম্পাদক খান আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে বক্কর খা, বাগেরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বশিরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা শামিম আহসান, শেখ মহিতুর রহমান পল্টন, সৈয়দ বাদশা হোসেন, খান মুজিবুর রহমান, দুলাল আকন, কাদের সরদার, হুমাযুন কবির পলি,সুমন রাহি, ফারুক হোসেন, দোলন মোল্যা, নাহিয়ান সুলতান, মমিনুল হক আকাশ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর জায়েসী আসরাফী জেমস, ফারুক তালুকদার, বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন লিটন, নকিব নজু, কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান বাবু ও নাজমা সরোয়ার।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম সংঘটনের লক্ষ্যে গত ৪ আগস্ট ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী গোলচত্ত্বর সংলগ্ন পাওয়ার ফিলিং স্টেশনের সামনে পাকা রাস্তার ওপর বেআইনিভাবে রাস্তা অবরোধ করে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম করে এবং আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতাকে ফাঁসাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করতে থাকে। তারা ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণসহ হত্যার উদ্দেশ্যে একাধিক গুলি চালানো হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, সাবেক পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকার কারণে ফ্যাসিস্ট সরকারকে টিকিয়ে রাখতে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘একটি ব্যালট একটি বুলেট’ বক্তব্য ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েকদিন আগে বাগেরহাটে একটি অনুষ্ঠানে ‘যেখানে উন্নয়ন, সেখানেই ধ্বংস’ বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
আরও পড়ুন: আরও তিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাবেক মন্ত্রী ইমরানকে
৬৬ দিন আগে
রপ্তানিতে আশা জেগেছে বাগেরহাটের চাষিদের, টমেটো যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়
বাগেরহাটে শীত মৌসুমের শেষ দিকে এসে টমেটোর ক্রেতা খুব একটা পাওয়া যাচ্ছিল না। হাট-বাজারে টমেটোর যেন ছড়াছড়ি। চাহিদা কমে যাওয়ায় কোনো কোনো চাষি জমি থেকে টেমেটো তোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। চাহিদা মতো মূল্য না পাওয়ায় চাষিরা টমেটো চাষে আগ্রহ হারাতে বসেছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে বাগেরহাটের টমেটো চাষিদের ভাগ্যে খুলতে শুরু করেছে।
ভাগ্য বদলের সূচনাটি হয়েছে বিদেশে টমেটো রপ্তানির মাধ্যমে। বাগেরহাট থেকে বিদেশে টমেটো রপ্তানি এটিই প্রথম উদ্যোগ। এরই মধ্যে বাগেরহাটের চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় করে ৪০ টন টমেটো মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হয়েছে। দেশি বায়ারের মাধ্যমে এসব টমেটো রপ্তানি করা হয়। আগামী ৪দিনের মধ্যে আরও ২৬ টন টমেটো রপ্তানির প্রস্তুতি চলছে। রপ্তানির খবরে চাষিরা টমেটো চাষে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। রপ্তানিকারকদের সঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকার টমেটো চাষিদের যোগাযোগ করার কাজ চলছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। টমেটোর পাশাপাশি আগামীতে বাগেরহাট থেকে নানা ধরণের সবজি বিদেশে রপ্তানি হবে— এমন আশার কথা শুনিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী ফয়সাল আহম্মেদ।
যেসব জাতের টমেটো বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে, বাহুবলী, বিউটিফুল-২,বিপুল প্লাস, পিএম-১২২০, এবং মিন্টু সুপার। এসব টমেটো উচ্চ ফলনশীল জাতের এবং সুস্বাদু।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের পাটলাই নদীতে নৌজটের পেছনে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট
বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকদিন ধরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,বিভিন্ন এলাকায় জমিতে এবং মৎস্যঘেরের পাড়ে গাছে গাছে কাঁচা-পাকা টমেটো ঝুলছে। অনেক জমিতে নারী-পুরুষ মিলে গাছ থেকে পাকা টমেটো তুলছেন। আবার মূল্য কম থাকার কারণে কোনো কোনো জমির টমেটো না তোলায় গাছে শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। হাট-বাজারে টমেটোর ছড়াছড়ি। ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে হ্যান্ডমাকিং করে টমেটো বিক্রি করা হচ্ছে। হাটে-বাজারে খুচরা কেজি প্রতি টমেটো ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও পাইকারিতে এর অর্ধেক দামে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছরই বাগেরহাটে শীত মৌসুমের এই পর্যায়ে (ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে) চাষিদের টমেটো বিক্রি করতে বেগ পেতে হয়। একারণে চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট থেকে টমেটো রপ্তানির জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল।
বাগেরহাট কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবছর দুই হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৩৫ টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসেবে জেলায় এবছর ৭৭ হাজার ৩৫০ টন টমেটো উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। হেক্টর প্রতি ৪০ টন পর্যন্ত টমেটো উৎপাদন হয়েছে। এখনও গাছে গাছে টমেটো ঝুলছে। একথায় বাগেরহাটে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিতলামারী উপজেলায় ৮৬০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করা হয়।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শ্যামপাড়া গ্রামের মাধব মন্ডল জানান, এবছর সে তিন বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন তিনি। টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। টমেটোর চাহিদা না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না। একারণে পাকা টমেটো ঝরে পড়ছে মাটিতে। টমেটো চাষ করে এবছর তাকে লোকসান গুনতে হবে।
চিতলমারীর চড়বানিয়ারি গ্রামের আরেক চাষি শৈলেন নাথ জানান, মৌসুমের প্রথম দিকে পাইকারি বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করেছে। তার ৮ বিঘা জমিতে গাছে গাছে পাকা টমেটো ঝুলছে। এখন পাইকারি বাজারে ৩ থেকে চার টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে। যে দামে টমেটো বিক্রি হচ্ছে তাতে করে টমেটো তুলতে শ্রমিকের মজুরির টাকা উঠছে না। একারণে টমেটো চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। মৌসুমের শেষ দিকে এসে তার মতো এলাকার সব চাষিদের টমেটো নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিক্রি করতে না পারায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে টমেটো নষ্ট হচ্ছে। টমেটো বিদেশে রপ্তানি করার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বরগুনায় ১৪৭ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত ১৪, যোগদান করেননি ৯ জন
৭২ দিন আগে
বাগেরহাটে ট্রলি উল্টে চালকসহ নিহত ২
বাগেরহাটের মোংলায় একটি ট্রলি উল্টে চালকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও চারজন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার চাপড়া এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ট্রলি চালক খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিয়াশান্তা এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে দিদার মোল্লা (৩০) এবং বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা গ্রামের ওয়াজেদ আলী শেখের ছেলে রোকন উদ্দিন (৬০)।
আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ওয়াহেদ মল্লিককে (৩৮) খুলনা ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং আয়ুব সরদার (৪০), মিলন মল্লিক (৩৬) ও তাজমির শেখকে (২৯) মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুন্সীগঞ্জে ট্রলার-স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত ৪
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হতাহতরা খুলনার লাউডোব এলাকায় ধান কেটে ট্রলিযোগে ওই রাতে মোংলায় ফিরছিলেন।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক বুলেট সেন জানান, ট্রলি দুর্ঘনার পর মৃত অবস্থায় দুজনকে এবং আহত অবস্থায় চারজনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। আহতদের মধ্যে একজনকে খুলনা ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর আহতদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান জানান, খুলনা থেকে ধান কেটে ট্রলি করে শ্রমিকরা মোংলায় ফিরছিলেন। পথে ওই উপজেলার চাপড়া এলাকায় ট্রলিটি পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা পাথরের উপরে তুলে দেয়। এ সময় ট্রলিটি উল্টে গেলে চালকসহ দুজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। অপর আহত চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওসি মো. আনিসুর রহমান জানান, ট্রলিটি জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুন্সীগঞ্জে স্পিডবোট-বাল্কহেডের সংঘর্ষে নিহত ২
৯১ দিন আগে
বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধে বাগেরহাটে ৮ বাড়িতে আগুন, আহত ২০
বাগেরহাটের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদাইড় গ্রামে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় দুপক্ষের নারী-শিশুসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। আগুনে ৬টি মোটরসাইকেল, আসাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বিকালে উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিকবার হামলা পাল্টা-হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিনের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয়রা জানায়, ৫ আগস্টের পর বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান ও রুহুল আমিনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ ঘটে। সম্প্রতি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে তাদের বিরোধ চরমে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: ১১ বছর পর খালাস পেলেন সিলেট বিএনপির ৬১ নেতাকর্মী
এর আগে সোমবার রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে মারপিট ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখন উভয় পক্ষের ৫ জন আহত হয়। ওই ঘটনার জেরে বুধবার দুপুরে ও বিকালে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে।
এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে রুহুল আমিন ও তার ভাইদের ৮টি বাড়িতে হামলা, লুটপাট অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় নারী-শিশুসহ ২০ জন আহত হন। আগুনে ৬টি মোটরসাইকেল, আসাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রুহুল আমিন ওরফে রুহুল মেম্বরের পরিবার অভিযোগ করে বলেন, মোস্তাফিজুর রহমানের লোকজন কয়েকদিন ধরে তাদের লোকজনদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যার দিকে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। স্বর্ণালংকারসহ মুল্যেমান মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এমনকি আগুন দিয়ে তাদের ৮ ভাইয়ের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। রুহল আমিনের পরিবারের দাবি, রুহুল আমিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হতে চায় এ জন্য তাদের বাড়িঘরে হামলা-লুট-পাট, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রুহুলের ভাই রেজার নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলায় ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়।
৯৮ দিন আগে
বাগেরহাটে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’র গাড়িবহরে হামলা, আহত ২০
খুলনা-ঢাকা মহাসড়কের বাগেরহাট জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর ইউনিটির গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলার মোল্লাহাট উপজেলার মাদরাসাঘাট এলাকায় ছাত্রদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। প্রায় এক ঘণ্টার সংঘর্ষে অনন্ত ২০ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ সময় খুলনা-ঢাকা মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
আরও পড়ুন: দুর্বৃত্তের হামলায় জনবাণী পত্রিকার সম্পাদকসহ ৪ সাংবাদিক আহত
এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সেখানে ছুটে আসেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আওয়ামী লীগের দোসররা পরিকল্পিত এই হামলা চালিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, খুলনা থেকে শিক্ষার্থীদের বহনকারী ২৫টি বাস ঢাকার যাচ্ছিল। তাদের বাস মাদরাসাঘাট এলাকায় পৌঁছালে তাদের গাড়িবহর লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালানো হয়।
স্থানীয়দের দাবি, যাত্রীবাহী বাস বাগেরহাটের ফকিরহাটের নওয়াপড়া এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের বহনকরা গাড়িবহরকে বারবার চাপ দিতে থাকে ও এক পর্যায়ে পেছন থেকে শিক্ষার্থীদের গাড়িতে ধাক্কা দেয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই বাসের স্টাফদের বাকবিতণ্ডা হয়। ওই বাস এবং শিক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়িবহর মোল্লাহাটের মাদরাসাঘাট এলাকায় পৌঁছালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
বাস ও বাস কাউন্টারের স্টাফদের সঙ্গে স্থানীয়রা ওই হমলায় অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন খুলনার সমন্বয়ক জহুরুল তানভীর বলেন, খুলনা থেকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের গাড়িবহর ঢাকায় যাচ্ছিল। গাড়িবহর মোল্লাহাট এলাকায় পৌঁছালে ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা তাদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলায় তাদের বেশকয়েকজন আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: 'মার্চ ফর ইউনিটি'র সমর্থনে শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছেন শিক্ষার্থীরা
আরেক সমন্বয়ক মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ বলেন, পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের ভাইদের রক্ত ঝরিয়েছে তারা।
তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান তিনি।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেলা ২টার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। শিক্ষার্থীরা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাস কাউন্টারের স্টাফদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন ওই হামলা চালায়।
১০৬ দিন আগে
চাঁদপুরে জাহাজে হত্যাকাণ্ড: বাগেরহাট থেকে গ্রেপ্তার ১
চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে সার বোঝাই এমভি আল-বাখেরার সাতজনকে হত্যার ঘটনায় আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) র্যাব থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা থেকে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে হাইমচর উপজেলার ঈশানবালা চরের কাছে ওই জাহাজ থেকে পাঁচজনের লাশহ আহত আহত তিন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। পরে আহতদের মধ্যে দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে এমভি আল বাকেরার ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওই দিনই শিল্প মন্ত্রণালয় একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে।
এই হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে এর বিচার দাবি করেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর সদর হাসপাতাল থেকে লাশ গ্রহণের সময় তারা এ দাবি জানান।
নিহতরা হলেন- জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরিদপুরের গোলাম কিবরিয়া (৫৫), তার ভাতিজা শেখ সবুজ (৩৫), নড়াইলের নাবিক আমিনুল মুন্সি (৪০), মাগুরার নাবিক মাজেদুল ইসলাম (১৬), মাগুরার নাবিক সজিবুল ইসলাম (২৬), নড়াইলের প্রকৌশলী সালাউদ্দিন (৪০) ও মুন্সিগঞ্জের বাবুর্চি কাজী রানা (২৪)।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে পদ্মায় দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ
১১৩ দিন আগে