বিদ্যুতের সেবাকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত উল্লেখ করে নতুন জ্বালানি নীতি প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার।
সোমবার ( ৪ নভেম্বর) পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) মিলনায়তনে 'এনার্জি ট্রানজিশন ইন হোয়াট ওয়ে?' শীর্ষক সেমিনারে ফরহাদ মজহার নব্য উদারনীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
নীতিনির্ধারক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে মজহার পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে একে 'ফ্যাসিবাদী' আখ্যা দিয়ে নব্য উদারবাদী অর্থনৈতিক মডেল প্রচারের অভিযোগ করেন। উদারবাদী নীতিটি করপোরেট স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় এবং সমাজকে 'লুটপাটে' উৎসাহিত করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে রাশিয়ার সহযোগিতার প্রশংসা ড. ইউনূসের
তিনি যুক্তি দেন, এই পদ্ধতিটি বেসরকারিকরণের ওপর অযৌক্তিক জোর দিয়ে সরকারি খাতকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং জনগণের জীবনকে হতাশ করেছে। আমাদের অবশ্যই নয়া উদারনীতিবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, যেখানে বেসরকারি খাতের স্বার্থ প্রাধান্য পায়। এই নব্য উদারবাদী আদর্শ ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে।
মজহার আমলাতন্ত্রে ব্যাপক জবাবদিহিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। যাকে তিনি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসাবে চিহ্নিত করেন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ শোষণকারী নব্য উদারবাদী নীতি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত বলে মনে করেন।
আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার শোষণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য আমাদের নিজস্ব প্রযুক্তি বিকাশের ক্ষমতা রয়েছে ‘
মাজহার তার বক্তব্যে নব্য উদারবাদী অর্থনীতির পক্ষে থাকার জন্য সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি পরিবেশগত স্থায়িত্বকে উপেক্ষা করে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা না করে আমরা একটি জাতীয় জ্বালানি নীতি তৈরি করতে পারি না। নবায়ণযোগ্য জ্বালানি ভবিষ্যতের যে কোনও নীতির মূল হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপরিকল্পিত ও ব্যয়বহুল উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে হাসিনা সরকার: উপদেষ্টা ফাওজুল
মজহার জ্বালানি নীতিতে জনবান্ধব পদ্ধতির গুরুত্বের ওপর জোর দেন। মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য আরইবি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'জনগণকে বাদ দিয়ে কিছু বললে তা সফল হবে না, সেটা বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি যেই হোক না কেন।’
বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমেদ গণমুখী উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং উচ্চমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির মূল মাপকাঠি হিসেবে গ্রাহক সন্তুষ্টির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে সহযোগিতা অপরিহার্য।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন) উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলমও এ খাতের অগ্রাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সতর্ক করে বলেন, শক্ত দার্শনিক ভিত্তি ছাড়া জ্বালানি রূপান্তর মুখ থুবড়ে পড়বে। তিনি গত ১৫ বছরের শাসনের সমালোচনা করে বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কর্মকর্তাদের সেবার চেয়ে মুনাফাকে অগ্রাধিকার দিতে উৎসাহিত করা হয়। কর্মকর্তারা মুনাফার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন, যার ফলে উল্লেখিত মুনাফা এবং প্রকৃত সাংগঠনিক ক্ষতির মধ্যে মিল ছিল না। তিনি উল্লেখ করেন যে, আগের সরকারের নীতিগুলো দেশকে আমদানির উপর নির্ভরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে স্বনির্ভরতা কমেছে।
আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এস এম জিয়া-উল-আজিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রশাসনের সকল স্তরে টেকসই, জনগণের চাহিদা এবং জবাবদিহিতাকে অগ্রাধিকার দিতে বাংলাদেশের জ্বালানি নীতির কৌশলগত পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে কর অব্যাহতি: দেশে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাড়ানোর পরিকল্পনা