বিদ্যুত
গণশুনানি ছাড়াই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের জন্য সংসদে বিল পেশ
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল রবিবার সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। যার লক্ষ্য সরকার গণশুনানি ছাড়াই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের সুযোগ তৈরি করা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে তা পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো হয়।
কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে ঋণ দিতে আইএমএফ’র কোনো শর্ত নেই: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত ৫ জানুয়ারি সংসদে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’- উত্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন-২০০৩ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেন।
সরকারকে জ্বালানি তেলের পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার অনুমতি দেয়ার সংশোধনী নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় গত ১ ডিসেম্বর গেজেট জারি করে।
এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কোনো শুনানি ছাড়াই ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন ও পেট্রোলসহ জ্বালানির দাম সমন্বয় করলেও বিইআরসি শুনানির মাধ্যমে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) অ্যাক্ট-২০০৩ সংশোধনের ফলে গ্যাস ও বিদ্যুতের নতুন দাম নির্ধারণের জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে শুনানির প্রয়োজন হবে না।
বিইআরসি একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, যা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি অ্যাক্ট ২০০৩ এর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যার লক্ষ্য বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো উন্নত করা। এর আগে তিনবার আইনটি সংশোধিত হয়েছে।
কমিশনের গণশুনানি এবং সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজস্বভাবে সরকারকে জ্বালানির শুল্ক নির্ধারণের ক্ষমতা দিতে ২৮ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বিইআরসি অধ্যাদেশ ২০২২-এর একটি সংশোধনী অনুমোদন করেছে।
আরও পড়ুন: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে সাড়ে ৩ লাখের অধিক পদ শূন্য: সংসদে প্রতিমন্ত্রী
পিএসসির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল, সংসদে বিল পাস
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার করুন নতুবা রাজপথে নামবে জনগণ: সরকারকে বিএনপি
সরকার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ানো হয়েছে। এটা সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। আমরা এর বিরুদ্ধে ১৬ জানুয়ারি সারাদেশের মহানগরী ও উপজেলায় বিক্ষোভ করব।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপি নেতা বলেন, অবিলম্বে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। ‘অন্যথায় আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। আমরা আগামী দিনে বিদ্যুৎ বিল দেব না এবং মানুষ বিদ্যুৎ বিল দেয়া বন্ধ করে দেবে।’
দুর্নীতির মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদালতের আদেশের প্রতিবাদে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে বিরোধীদলীয় মঞ্চ ডেমোক্রেসি ফোরাম।
আরও পড়ুন: ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে আরও জেগে ওঠুন: জনগণের প্রতি ফখরুল
জানুয়ারি থেকে কার্যকর বিদ্যুতের খুচরা মূল্য পাঁচ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার।
এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল।
জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতে সরকারের নির্দেশে আদালত তারেক ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বুলু। এই সরকার তারেক রহমানের ভয়ে ভুগছে।
তিনি বলেন, দুঃশাসনের কারণে জনগণ আর আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে।
কুইক রেন্টাল অ্যান্ড রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট ও মেগা প্রজেক্টের নামে যারা ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা লুট করেছে এবং বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে তাদের আগামী দিনে জনআদালতে বিচার করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বুলু।
আরও পড়ুন: সরকার বিরোধী দলকে দমন করতে মরিয়া: ফখরুল
গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ পেতে উৎপাদন খরচ পরিশোধ করুন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ পেতে চাইলে অন্তত বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন ও সংগ্রহের খরচ দিতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস চান, তাহলে আপনাকে অন্তত উৎপাদন খরচ বা সংগ্রহের খরচ দিতে হবে। আমরা কতদিন ভর্তুকি দেব?’
প্রধানমন্ত্রী ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার (ডিআইটিএফ)-২০২৩’-এর ২৭তম আসরের উদ্বোধন করেন। যেখানে বাংলাদেশের তৈরি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচারের জন্য প্রদর্শিত হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রাজধানীর উপকণ্ঠে পূর্বাচলে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ- অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দীর্ঘসময়ের জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসে বিশাল ভর্তুকি দিতে পারে না।
তিনি বলেন, আমরা এত বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দিতে পারি না, তাই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পাট ও পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, এক সময় পাটকে দেশের সোনালি আঁশ বলা হতো।
তিনি উল্লেখ করেন যে পাটের চাহিদা কখনই শেষ হবে না এবং পাটজাত পণ্য পরিবেশবান্ধব।
তিনি বলেন, ‘আমরা পাটের জিনোম উদ্ভাবন করতে পেরেছি, তাই আমরা অনেক পণ্য তৈরি করতে পারি।’
হাসিনা আরও উল্লেখ করেন যে পাট এমন একটি ফসল যার পাতা থেকে লাঠি পর্যন্ত প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা যায়।
তিনি বলেন, ‘তাই পাটের প্রতি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা আমাদের পাবলিক জুট মিল খুলে দিয়েছি এবং যে কেউ এই মিলগুলোর একটি ইজারা নিতে পারে।’
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ইজারাদাররা এই মিলগুলো সরাসরি পরিচালনা করতে পারে বা বৈচিত্র্যময় আইটেম উৎপাদন করতে আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরিবেশ-বান্ধব পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, তাই বিশ্বজুড়ে আপনারা বিপণন করতে পারেন। আপনাদের সেই সুযোগটি নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে সরকার সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ফাইভজি চালু করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ফোরজি পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং অবশ্যই ফাইভজি পরিষেবা চালু করব। তবে এটি ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য করা হবে, কারণ এই পরিষেবাটি (ফাইভজি) সব এলাকার জন্য প্রয়োজনীয় নয়। এটি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর জন্য প্রযোজ্য।’
তিনি বলেন, সরকার সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে তথ্যপ্রযুক্তি ও আইটি সক্ষম সেবার ওপর জোর দিতে বলেন।
দেশের রপ্তানি বাস্কেটকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আবারও নতুন বাজার ও পণ্য খোঁজার ওপর গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি আইটেম সীমিত, আমরা খুব কম রপ্তানি আইটেমের ওপর নির্ভরশীল, এটিকে বহুমুখী করতে হবে। আমি বারবার বলছি যে আমরা যত বেশি আমাদের পণ্য বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হব, তত বেশি আমরা নতুন বাজার খুঁজে পাব, তত বেশি আমরা আমাদের ব্যবসা এবং আয় বাড়াতে সক্ষম হব।’
শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে এই পণ্যগুলোর অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা কমবে না, সবসময় বাড়বে।
পরে তিনি মেলার বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টল পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আ খ ম আহসান।
খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে পদক্ষেপ নিবে বিইআরসি
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এখন খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়ে গণশুনানির জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করবে।
বিইআরসি’র সদস্য (পাওয়ার) মোহাম্মদ বজলুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা মনে করি জমা দেয়া প্রস্তাবগুলোর ওপর গণশুনানির জন্য কোনও প্রক্রিয়া শুরু করার আগে আমাদের প্রথমে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।’
সরকার খুচরা এবং বাল্ক বিদ্যুত ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ তৈরি করতে বিইআরসি আইন ২০০৩ সংশোধন করার সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপের পটভূমিতে বিইআরসি সদস্যের কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য আসলো।
বজলুর রহমান বলেন, ‘প্রস্তাবিত সংশোধনীর পর বিইআরসি কোনও বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতিতে যাওয়া উচিৎ নয়।’
কমিশনের গণশুনানি এবং সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজস্বভাবে জ্বালানি শুল্ক নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারকে দিতে ২৮ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বিইআরসি অধ্যাদেশ-২০২২-এর একটি সংশোধনী অনুমোদন করেছে।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: পাইকারি পর্যায়ে অপরিবর্তিত থাকবে বিদ্যুতের দাম: বিইআরসি
তিনি বলেন, বিইআরসি শুল্ক হার নির্ধারণের বিষয়ে পর্যালোচনা এবং সিদ্ধান্ত নিতে ৯০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে এবং এটি একটি দীর্ঘ সময়। এখন বিরাজমান পরিস্থিতির আলোকে সরকার জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করতে পারে সেজন্য এই সংশোধন করা হচ্ছে।
বৈঠকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি ও জ্বালানি আমদানির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে বিইআরসি চেয়ারম্যান সরকারের সাবেক সচিব আবদুল জলিল প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে গেজেট প্রজ্ঞাপনে যাওয়ার আগে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাকে আগে গেজেট বিজ্ঞপ্তি দেখতে দিন... তারপর কমিশন জনশুনানি বা ট্যারিফ নির্ধারণ সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।’
এদিকে, বাল্ক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা তাদের নিজ নিজ প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, ছয়টি প্রতিষ্ঠান- বিপিডিবি, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি পিএলএস (নেসকো) এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডব্লিউজেডপিডিসিএল) খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য প্রায় অভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে।
১ ডিসেম্বর থেকে বিইআরসির বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর তারা তাদের প্রস্তাব জমা দেয়।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিদ্যুৎ খাতের প্রধান সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের একক ক্রেতা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) আর্থিক ক্ষতি বছরে ১৮ হাজার ৯৪ কোটি টাকা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিপিডিবি’র সর্বশেষ নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতি ২০২১ থেকে ২০২২ অর্থবছরের ২৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা থেকে ২০২২ থেকে ২০২৩ অর্থবছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে, যা প্রায় ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র জানায়, বেশি দামে বিদ্যুৎ ক্রয় ও কম দামে বিক্রি, পেট্রোলিয়াম জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপিডিবির রাজস্ব ঘাটতি আরও বেড়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন যে যখন একটি বিশাল রাজস্ব ঘাটতি বিপিডিবি’র একটি বড় বোঝা হবে তখন বাল্ক ট্যারিফের সাম্প্রতিক ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি সংস্থাটিকে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা লোকসান কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যদিকে, বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধিতে পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোকে তাদের নিজস্ব রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে বিইআরসিতে তাদের খুচরা শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দিতে চাপ দেয়।
আরও পড়ুন: বিইআরসি ছাড়াই জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করবে সরকার, মন্ত্রিসভায় সংশোধনী অনুমোদন
বিইআরসি একটি গণশুনানির পর ২০২০ সালের মার্চ মাসে খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছিল।
একটি ঘোষণার মাধ্যমে, বিইআরসি ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকরভাবে খুচরা পর্যায়ে পরিমিত গড়ে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট (প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা)ছয় দশমিক ৭৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাত দশমিক ১৩ টাকা করা হয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভাগ তার বিশাল আর্থিক ক্ষতি পূরণের জন্য বাল্ক এবং খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে।
বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতি চাপ বাড়িয়েছে। কারণ দাতা সংস্থাটি বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হ্রাস এবং ক্ষতি পূরণের জন্য বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিইআরসি আইন সংশোধনে সরকারি পদক্ষেপের নেপথ্যে যা রয়েছে
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে: বিএনপি
বিএনপি সরকারের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দামের মধ্যে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি মানুষকে হত্যা করার মতোই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সরকারকে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বলেন।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে।এটা কেবল মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
আরও পড়ুন: লুটপাট, মানি লন্ডারিংয়ের কারণে ব্যবসায় বিপর্যয়: ফখরুল
বিএনপি নেতা বলেন, এমন সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে যখন চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে এবং মূল্যস্ফীতি চরম পর্যায়ে বাড়ছে।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। তারা বিদ্যুতের দাম আরও বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই।’
ফখরুল বলেন, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে জনগণ সরকার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
আগের দিন, সরকার ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) রিভিউ আপিল নিষ্পত্তি করে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন।
ফখরুল বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গণবিরোধী। ‘এই অনির্বাচিত শাসক জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিটি খাতে দুর্নীতি করে অর্থনীতির যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলা করা সরকারের পক্ষে অসম্ভব মনে হচ্ছে। ‘তারা এখন মানুষের ওপর দুর্ভোগ চাপিয়ে দিচ্ছে, কারণ তারা আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে মরিয়া।’
বিএনপি নেতা বলেন, দুর্নীতি কমাতে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের জন্য সরকার আগে পদক্ষেপ নিলে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা আরও সহজ হতে পারত।
আরও পড়ুন: বিরোধী নেতাকর্মীদের গুলি করা বন্ধ করুন: পুলিশকে ফখরুল
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরোধিতাকারীরা ‘জনশত্রু’: ফখরুল
বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক প্রায় ২০% বেড়েছে
বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সে হিসেবে প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টা (প্রতি ইউনিট) আগের দাম ৫টাকা ১৭ পয়সা টাকার পরিবর্তে ৬টাকা ২০ পয়সা হবে । চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) রিভিউ আপিল নিষ্পত্তি করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
তবে নতুন বিদ্যুতের দাম খুচরা গ্রাহকদের জন্য কার্যকর হবে না। এটি শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি এবং অন্য কিছু বাল্ক গ্রাহকদের জন্য কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন: বিইআরসি বাল্ক বিদ্যুতের শুল্কের রিভিউ আপিলের রায় দিবে সোমবার
গত ১৩ অক্টোবর নিয়ন্ত্রক কর্তৃক প্রস্তাব প্রত্যাখানের পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিপিডিবি ১৪ নভেম্বর বিইআরসিতে রিভিউ আপিল করে।
বিইআরসি থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রস্তাবটি জমা দেয়ার আগে বিপিডিবি সরকারের সর্বোচ্চ নীতিগত পর্যায় থেকে একটি অনুমোদন পেয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও রিভিউ আপিল করতে অনুমোদন দেন।
আরও পড়ুন: বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক বাড়াতে বিপিডিবি’র রিভিউ আপিল
১৪ অক্টোবরের মধ্যে বাল্ক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা হতে পারে
বিইআরসি বাল্ক বিদ্যুতের শুল্কের রিভিউ আপিলের রায় দিবে সোমবার
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সোমবার বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) পুনর্বিবেচনার আপিলের বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।
রবিবার একটি অফিসিয়াল বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কিন্তু ভোক্তা অধিকারকর্মীরা আর কোনো মূল্য বৃদ্ধির বিপক্ষে।
গত ১৩ অক্টোবর নিয়ন্ত্রক কর্তৃক প্রস্তাব প্রত্যাখানের পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিপিডিবি ১৪ নভেম্বর বিইআরসিতে রিভিউ আপিল করে।
বিইআরসি থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রস্তাবটি জমা দেয়ার আগে বিপিডিবি সরকারের সর্বোচ্চ নীতিগত পর্যায় থেকে একটি অনুমোদন পেয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও রিভিউ আপিল করতে অনুমোদন দিয়েছেন।
বিইআরসি ১৩ অক্টোবর বিপিডিবির বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল যে সংক্ষুব্ধ পক্ষ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নিয়ন্ত্রকের সিদ্ধান্ত পুনমূল্যায়নের জন্য আপিল প্রস্তাব জমা দিতে পারে।
তবে, বিইআরসি এই বিষয়ে আর কোনও গণশুনানি ছাড়াই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এএসএম শামসুল আলম কোনও গণশুনানি ছাড়াই বিইআরসির সিদ্ধান্তকে স্বেচ্ছাচারী কাজ এবং বিইআরসি আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘লোডশেডিং এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অত্যধিক মূল্যে মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে, তখন বিইআরসির এই ধরনের সিদ্ধান্ত জনগণের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে’।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য সরকার প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে। যা সংকট ব্যবস্থাপনার সহায়তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এর আগে ১৩ অক্টোবর বিপিডিবির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্ত দেয়ার সময় বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেছিলেন, বিপিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে কিছু লেনদেনের তথ্য জমা দেয়নি।
আরও পড়ুন: পাইকারি পর্যায়ে অপরিবর্তিত থাকবে বিদ্যুতের দাম: বিইআরসি
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তথ্যের অস্পষ্টতা ছিল। এ কারণেই আমরা ভোক্তাদের ওপর বাল্ক শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব বিশ্লেষণ করিনি।'
তিনি উল্লেখ করেন, বিইআরসি সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বর্তমান আর্থ-সামাজিক এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েছিল।
ফলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত পূর্ববর্তী শুল্ক অনুসারে বিদ্যুতের শুল্ক অপরিবর্তিত রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপিডিবির বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর সর্বশেষ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয় ১৮ মে।
বিপিডিবি গণশুনানিতে বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় এবং বিইআরসির একটি প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন কমিটি ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল।
বিপিডিবি তার সর্বশেষ পর্যালোচনা আপিল প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে যে তার সরবরাহের প্রকৃত খরচ প্রতি ইউনিট আট দশমিক ১৬ টাকা পূর্বের গণনাকৃত ট্যারিফের পরিবর্তে প্রতি ইউনিট আট দশমিক ৯৬ টাকা।
প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে বিপিডিবি কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে সংস্থাটির বিদ্যুত বিতরণ সংস্থাগুলোকে সরবরাহ করতে ৮৮ হাজার ৯৯৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘন্টা (ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা রাজস্বের প্রয়োজন হবে।
অফিসিয়াল সূত্র জানিয়েছে, এখন বিতরণ কোম্পানিগুলো খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য তাদের নিজ নিজ প্রস্তাব জমা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নসরুল হামিদ আরও বলেন, বিতরণ সংস্থাগুলো খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির জন্য জ্বালানি নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দিতে তাদের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো এখন তাদের প্রস্তাবনা প্রস্তুত করার জন্য কাজ করছে...তারা বাল্ক শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব হিসাব করছে।’
বিপিডিবি কর্মকর্তারা আশা করছেন যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কমপক্ষে ২০ শতাংশ বাল্ক শুল্ক বাড়াবে।
বিপিডিবি’র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সম্ভাব্য ২০ শতাংশ বৃদ্ধি বিবেচনা করে বিপিডিবি বিদ্যুতের খুচরা শুল্ক কমপক্ষে ১২ শতাংশ বাড়াতে চাইছে।
বিইআরসি একটি গণশুনানির পর ২০২০ সালের মার্চ মাসে খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছিল।
একটি ঘোষণার মাধ্যমে বিইআরসি ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর হিসাবে খুচরা পর্যায়ে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ এবং পাইকারি স্তরে আট দশমিক চার শতাংশ সামগ্রিকভাবে গড়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট (প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা) ছয় দশমিক ৭৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাত দশমিক ১৩ টাকা এবং বাল্ক পর্যায়ে চার দশমিক ৭৭ টাকা থেকে পাঁচ দশমিক ১৭ টাকা করা হয়।
আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম বাড়ছে না: বিইআরসি
১৪ অক্টোবরের মধ্যে বাল্ক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা হতে পারে
দেশের রাষ্ট্রচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার প্রস্তাবের পর কর্তৃপক্ষ ১৪ অক্টোবরের আগে যে কোনো সময় সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে।
রবিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে অক্টোবর মাসের জন্য এলপিজির নতুন দাম কমানোর বিষয়ে একথা বলেন।
তবে বাল্ক বিদ্যুতের শুল্কের কোনো সমন্বয় বিদ্যুতের বর্তমান খুচরা মূল্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বিইআরসি আইন অনুযায়ী বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সংক্রান্ত বিষয়ে গণশুনানির পর ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার বিধান রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাবের ওপর সর্বশেষ গণশুনানি হয় ১৮ মে।
আরও পড়ুন: ৫ বছরে রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা তিনগুণ বাড়বে: প্রতিমন্ত্রী
গণশুনানির সময় বিপিডিবি বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, যখন বিইআরসি-এর একটি প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল।
কিন্তু গণশুনানির পর, বিইআরসি অংশীজনদের শুনানির প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য প্রাসঙ্গিক নথি জমা দেয়ার জন্য অতিরিক্ত দিন বাড়িয়েছে।
বিইআরসির এক সদস্য জানান, এই অতিরিক্ত সময়ের সঙ্গে বিইআরসি এখন ৯০ দিন গণনা করছে এবং নির্ধারিত সময় ১৪ অক্টোবর শেষ হবে।
যে কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে অংশীজনদের যুক্তি ও পাল্টাযুক্তি শুনে পাঁচ সদস্যের কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
যদিও এই সমন্বয়ে বাল্ক বিদ্যুতের ওপর প্রভাব ফেলবে না। তবে এটি অবশ্যই বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর ওপর প্রভাব ফেলবে। যারা বিপিডিবি থেকে তাদের খুচরা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ কিনে থাকে।
একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যদি নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে কোনও ঊর্ধ্বমুখী সমন্বয় আসে, তাহলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেবে, যা গ্রাহকদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
১৮ মে গণশুনানিতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার প্রতিনিধিসহ ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠীগুলো শুনানিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির তীব্র বিরোধিতা করেছিল। কেননা মূল্যবৃদ্ধির ফলে আগে থেকেই মানুষ ধুঁকছে।
ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠীগুলো এ প্রস্তাবটিকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে বলেন, বিপিডিবি অদক্ষ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক চর্চা দূর করে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে, বিপিডিবি কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে সংস্থাটির বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে সরবরাহ করতে ৮৮ হাজার ৯৯৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘন্টা (ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা রাজস্বের প্রয়োজন হবে।
শুনানিতে বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কিন্তু যদি বিপিডিবি তার বর্তমান বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ১৭ পয়সায় বিক্রি করে, তাহলে ২০২২ সালে তাকে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই, বিপিডিবিকে বিদ্যুতের দাম ৬৫ টাকা ৫৭ পয়সা বৃদ্ধি করতে হবে। ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ইউনিট প্রতি ৮ টাকা ৫৬ পয়সা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে চুরি করা বিদ্যুতে চলছে ৫০ হাজার অটোরিকশা
সরকারি অফিসে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত
বিদ্যুতের সাব স্টেশন থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি ডাইং কারখানার সাব স্টেশনের ভেতর থেকে এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পাঠানটুলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্পাইডার ফেব্রিক্স নামে ডাইং কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদির জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পুলিশ বলছে, যুবকের বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। এছাড়া চার পাঁচ দিন আগে তার মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে নদীতে পড়ে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার
এদিকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নিহত এই ব্যক্তি তাদের প্রতিষ্ঠানের কেউ নয়। এছাড়াও ওই সাব স্টেশনটি সব সময় তালা দেয়া থাকে। বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশের কোন সম্ভাবনাও নেই সেখানে।
এখানে এই যুবকের লাশ কিভাবে এলো তা কেউ বলতে পারছেন না।
স্পাইডার ফেব্রিক্সের জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, দুই সপ্তাহ পর পর সাব স্টেশনটিতে মেইন্টেনেন্ট এর কাজ করা হয়। সেই হিসেবে আজকে (শনিবার ১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাব স্টেশনের দরজা খুললে ভেতর থেকে পঁচা লাশের গন্ধ পাই এবং এক কোনায় একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখি।
পরে থানা পুলিশকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবহিত করি।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি।
আমরা বিষয়টি তদন্তসহ তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: চকরিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার লাশ উদ্ধার
সিরাজগঞ্জে একই ঘর থেকে মা ও দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার!
বিদ্যুতের সংকট বেশিদিন থাকবে না: নসরুল হামিদ
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহে বর্তমান সমস্যা বেশিদিন স্থায়ী হবে না।
শুক্রবার তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক পোস্টে বলেছেন, ‘বর্তমান সংকটের জন্য আমরা আমাদের গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং সবার সহযোগিতাও কামনা করি।’
একই দিন সকালে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নসরুল হামিদ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সংকট নিরসনে সরকার সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হয়েছে।
তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এক সপ্তাহের মধ্যে লোডশেডিং নিয়ে নতুন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে এবং একই সঙ্গে ভারতের আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে। এগুলো জাতীয় গ্রিডে চার হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ যুক্ত করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সবার প্রতি অনুরোধ ধৈর্য ধরুন। এই কঠিন সময়ে আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ সাশ্রয়: মঙ্গলবার থেকে দেশে দৈনিক এক ঘণ্টা লোডশেডিং
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে আলোকসজ্জা না করার নির্দেশনা