নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় সে সময়ে দায়িত্বে থাকা তৎকালীন ওসিসহ তিন পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত। একই সাথে এ বিষয়ে তিন পুলিশের করা আবেদনটির ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২৮ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিন পুলিশের পক্ষে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এই আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: ৪ শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা: ওসিসহ ৭ পুলিশ বরখাস্তের রায় স্থগিত
তিন পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- বেগমগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ চৌধুরী, উপপরিদর্শক (এস আই) হাবিবুর রহমান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মফিজুল ইসলাম।
আদালতে পুলিশের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্ট পাঁচ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
তারা হলেন- ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, এস আই হাবিবুর রহমান, এএসআই মফিজুল ইসলাম, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ ও চৌকিদার আলী আসগর।
আরও পড়ুন: গ্রাম পুলিশদের বেতন গ্রেড নিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। তৎকালীন ওসি, একজন এসআই ও এএসআইকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং চৌকিদারকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে এলজিআরডি সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। পরে হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, এস আই হাবিবুর রহমান, এএসআই মফিজুল ইসলাম।
গত বছর ২ সেপ্টেম্বর ঘরে ঢুকে স্বামীকে বেঁধে রেখে ৩৭ বছরের নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর এলাকার দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা। তারা ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখেন। পরে ওই নারীকে হামলাকারীরা কুপ্রস্তাব দেন। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় তারা ধারণ করা ভিডিও চিত্র ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করলে তা ভাইরাল হয়। এতে ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
পরে গত বছরের ৫ অক্টোবর ঘটনাটি আদালতের নজরে আনার পর বিবস্ত্র করার ফুটেজ বিষয়টি অনলাইন ফ্ল্যাটফর্ম থেকে সরাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ সময় সিডি বা পেনড্রাইভে কপি রেখে ভিডিও ফুটেজ সরাতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়। একইসাথে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য নিতে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন আদালত। কমিটিকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, অনীক আর হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আরও পড়ুন: জাহালমের ক্ষতিপূরণের রায় স্থগিত চায় ব্র্যাক ব্যাংক
পরে আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটির প্রধান ছিলেন চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাশার। সদস্য ছিলেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীন ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। আদালতে ওই কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে অবহেলা পাওয়ায় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় চৌকিদারের বিষয়ে আদালত যৌক্তিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিতে পারে বলে মত দেয়া হয়। এরপর সেই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২৮ অক্টোবর রায় দেন হাইকোর্ট।