বাংলাদেশের কয়েকশ’ তরুণ-তরুণী বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট ২০২২ পালন করেছে। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফ্রাইডেস ফর ফিউচারসহ ৭২টি দেশের তরুণদের বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতায় এই জলবায়ু ধর্মঘটের আয়োজন করে।
ধর্মঘটকারীরা এক বিবৃতিতে জলবায়ু ন্যায়বিচারের সমর্থনে সব দেশকে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
তারা সরকারকে একটি ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করার এবং বিশ্বনেতাদের অবশ্যই মুনাফার চেয়ে মানুষকে' অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানান।
তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানায়।
এসময় তারা তাদের দাবি সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। 'জলবায়ু নয়, আপনাদের আচরণ পরিবর্তন করুন', 'আমার পৃথিবী, আমার দায়িত্ব', 'আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদের হাতে', 'জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করুন','আমাদের একটি উষ্ণ ভবিষ্যত উপহার দেবেন না, 'আপনাদের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার আমাদের ভবিষ্যতকে ধ্বংস করছে', 'পরিবেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও', 'জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে যুবসমাজ’, ' দূষণ নয়, ভালোবাসা ছড়াও' ইত্যাদি স্লোগান লেখা ছিল প্ল্যাকার্ডগুলোতে।
ধর্মঘটে অংশ নেয়া নাদিরা সাত্তার মীম বলেন, ‘প্যারিস চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল স্বাক্ষরকারী সব দেশগুলো এ চুক্তির মৌলিক নীতিগুলো মেনে চলবে। যাতে পৃথিবীকে সুরক্ষিত করা যায় এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যত গড়ে তোলা যায। কিন্তু বিশ্বনেতারা চুক্তির মূলনীতিগুলো বাস্তবায়নে কোনো কাজ করছেন না।’
আরও পড়ুন: জলবায়ু অভিবাসীদের ব্যাপারে অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হতে পারে: ঢাকা
আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘এই জলবায়ু বিক্ষোভ শিশু ও তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের বিরুদ্ধে একসঙ্গে তাদের আওয়াজ তুলতে সংগঠিত হতে সহায়তা করবে। আমরা মুখ বুজে কষ্ট সহ্য করতে পারি না।’
বিক্ষোভকারীরা তাদের চিন্তাভাবনা ও উদ্বেগ এক অপরের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার জন্য মিশরের শার্ম এল শেখে নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন কপ-২৭ এ অংশগ্রহণের স্বীকৃতি ও সুযোগের দাবি করে।
জলবায়ু আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণরা কপ-২৭ এ যোগ দেয়ার জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে চায়।
জলবায়ু সংকট ক্রমবর্ধমানভাবে শিশু ও তরুণদের একটি আসন্ন বিপদ ও একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ চায় ঢাকা
জলবায়ু বিজ্ঞানীদের কথা উল্লেখ করে তরুণরা দাবি করেছেন যে বিশ্বের তাপমাত্রা আর অর্ধেক ডিগ্রীও বাড়লে খরা, বন্যা ও প্রচণ্ড গরমের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। যা কয়েক মিলিয়ন মানুষের ধ্বংস, বাস্তুচ্যুতি ও দারিদ্র্যের কারণ হবে। বিশেষত বিশ্বের দক্ষিণ অংশের দেশগুলোর মানুষের জন্য এটি একটি বিড়ম্বনার বিষয়। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনে এঅঞ্চলের লোকেরা সবচেয়ে কম ভূমিকা রাখলেও সবচেয়ে বড় মূল্য তাদের দিতে হবে।
বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে ০.৪৭ শতাংশের কম অবদান রাখা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মুখে পড়ার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে একটি।
দিবসটি উপলক্ষে অন্যান্য সংগঠনও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করতে সম্মত বাংলাদেশ-ডেনমার্ক