ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিতে চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় পৌঁছালে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেভুটানের রাজাকে বহনকারী একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট সকাল ১০টায় ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এসময় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান এবং ভুটানের রানী জেটসান পেমা ওয়াংচুককে স্বাগত জানান বাংলাদেশের ফার্স্ট লেডি ড. রেবেকা সুলতানা।
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন করার পর এটিই প্রথম কোনো বিদেশি অতিথির রাষ্ট্রীয় সফর।
রাজা নামগিয়েল ওয়াংচুক জাতীয় সংগীতের পর বিমানবন্দরে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজও পরিদর্শন করেন।
বিমানবন্দরে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর রাজা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন ভুটানের রাজা
রাজা মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং সেখানে একটি বৃক্ষরোপণ করবেন।
সোমবার বিকালে রাজা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক করবেন। তারা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক( ওয়ান টু ওয়ান) করবেন।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে তিনটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই হবে এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সংক্রান্ত আরও একটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হবে।
রাজা ও প্রধানমন্ত্রী সমঝোতা স্মারক সই প্রত্যক্ষ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ রাজার সঙ্গে তার সফরকালীন আবাসস্থলে সাক্ষাৎ করবেন।
মঙ্গলবার রাজা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন।
এছাড়া শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজা বঙ্গভবন পরিদর্শন করবেন, সেখানে রাষ্ট্রপতি ও ফার্স্ট লেডি তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
আগামীকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন রাজা। রাষ্ট্রপতি সফররত রাজপরিবারের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করবেন।
ভুটানের রাজা পদ্মা সেতু ও বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ পরিদর্শন করবেন। বৃহস্পতিবার তিনি কুড়িগ্রামের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন।
আরও পড়ুন: ভুটানের বিনিয়োগকারীদের জন্য কুড়িগ্রামে ১৯০ একর জমি দেবে বাংলাদেশ, আলোচনা চলছে জলবিদ্যুৎ আমদানির
বৃহস্পতিবার বিকালে সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে আসামের গোলকগঞ্জের উদ্দেশে বাংলাদেশ ভূখণ্ড ত্যাগ করবেন। সেখানে তাকে বিদায় জানাবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানের তৃতীয় রাজা টেলিগ্রামের মাধ্যমে স্বীকৃতির বার্তা পাঠানোর মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান।
সেই থেকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে একটি বিশেষ বহুমাত্রিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই ভুটান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয় এবং ফলস্বরূপ, ১৯৭৩ সালের ১২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
আরও পড়ুন: চার দিনের সফরে সোমবার ঢাকায় আসছেন ভুটানের রাজা
রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভুটানের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশ কুড়িগ্রামে ১৯০ একর জমি বরাদ্দ দেবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে চায় এবং ভারতের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ আনতে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি প্রয়োজন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি।
তিনি বলেন, ভুটানের ২৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশও নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করবে এবং সেই উদ্যোগের বিষয়ে বিষয়গুলো স্থির হয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশ থিম্পুতে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করবে, যা দেশের সক্ষমতারও প্রমাণ।
হাছান মাহমুদ বলেন, 'ভুটানের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে।’