২০১৩ সালে নির্যাতনের শিকার ওই শিশু গৃহকর্মীর মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিটের পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট এ মন্তব্য করেছেন।
গত বছরের ১১ নভেম্বর ঘোষিত ওই রায়ের অনুলিপিতে বিচারপতিরা গত ১৮ জুন স্বাক্ষর করেছে যা বুধবার রিটকারী প্রতিষ্ঠান চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রায়ে মোট সাত দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-
১. খাদিজা নির্যাতনের অভিযোগে কমিশন মানবাধিকার রক্ষায় ও প্রতিকার দিতে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ এবং আইনী অবহেলার পরিচয় দিয়েছে।
২. কমিশন যেভাবে আদেশ দিয়েছে তাতে কোনভাবেই পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না যে, এটা কমিশনের আদেশ নাকি কমিশনের কোন সদস্যের আদেশ এবং উক্ত সদস্য এরূপ আদেশ দিতে পারেন কিনা? মানবাধিকার কমিশন আইনের ১১(৩) ধারা এবং ২৮ ধারার বিধানে এ ধরণের আদেশের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ।
৩. কমিশন যেন সঠিক বিধি মেনে সদস্য বা সদস্যদের পূর্ণ নাম উল্লেখ করে আদেশ পাস করে এবং মুহুরি যাতে ভুক্তভোগী পেতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
৪. কমিশন যে খসড়া বিধিমালাটি তৈরি করে রেখেছে তা অতি দ্রুত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা চূড়ান্ত করে দ্রুত গেজেটের মাধ্যমে প্রকাশ করে।
৫. আইনের ১৬ এবং ১৮ ধারা অনুযায়ী মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে অনুসন্ধান বা ক্ষেত্রমতো তদন্ত করে যথাযথ সুপারিশপ্রদান করার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য কমিশনকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে।
৬. কোন সরকারি কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তা কমিশনের আদেশ-নির্দেশ পালন না করলে বা অবহেলা করলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের কাছে আবেদন করতে কমিশনকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে।
৭. কমিশন আইনগতভাবে একটি আধা বিচারিক কর্তৃপক্ষ। সুতারাং ইহা অবশ্যই ন্যায় বিচারের সকল নিয়ম-নীতি মেনে চলতে বাধ্য।
রায় প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজার নির্যাতনের বিষয়ে শুনানি করে কী প্রতিকার, ক্ষতিপূরণের সুপারিশ বা অন্য যেসব সুপারিশ প্রস্তাব করা যায় তা করতে কমিশনকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে।
শুনানিতে যদি খাদিজার নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে আইনের ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী খাদিজাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কমিশন সুপারিশ করবে।
চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রায়ে দেয়া এসব নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়। এর পাঁচ বছর কেটে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
এরপর গত বছরের ১১ নভেম্বর এ বিষয়ে রায় দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।