ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, মোবাইলের ডাটার ক্ষেত্রে তিন দিনের মেয়াদ নিয়ে সম্প্রতি আমার কাছে অনেক প্রশ্ন এসেছে। অনেকে বলেছেন তারা ৩ দিনের জন্য কেনা ডাটা শেষ করতে পারেন না।
তিনি বলেন, মেয়াদ হিসেবে ৩ দিন খুব কম হয়। সেজন্য এখন আমরা সেটি তুলে দিচ্ছি।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত ‘মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহের ডাটা এবং ডাটা-সংশ্লিষ্ট প্যাকেজ সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকা-২০২৩ বাস্তবায়নবিষয়ক উপস্থাপনা’শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে যে- ৩ দিনের প্যাকেজ তুলে দিয়ে গ্রাহকের সুবিধার্থে তা এখন সর্বনিম্ন মেয়াদ ৭ দিনের করা হয়েছে এবং ১৫ দিনের প্যাকেজ বাদ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: টেশিসকে ডিজিটাল হাবে পরিণত করতে সরকার বদ্ধপরিকর: মোস্তাফা জব্বার
মন্ত্রী বলেন, আমরা ইন্টারনেটের মেয়াদভিত্তিক প্যাকেজ সংখ্যা কমিয়েছি। কারণ, মেয়াদের সংখ্যা বেশি থাকলে গ্রাহক কনফিউজড হয়। আমরা ডাটা প্যাকের সর্বনিম্ন মেয়াদ করেছি ৭ দিনের। এর চেয়ে কম মেয়াদের যেকোনো ডাটা প্যাকেজ বিক্রি করা যাবে না। এতে গ্রাহক পুরো ডাটা ব্যবহার করতে পারবেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমানে মোবাইল ডাটার দাম ও গুণগত মান গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় তা বিলাসী পণ্য ছিল, এখন তা প্রান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে।
নতুন নির্দেশিকা উপস্থাপন করেন- বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।
প্যাকেজ সংখ্যা ও মেয়াদ-
একটি অপারেটরের নিয়মিত (রেগুলার প্যাকেজ), বিশেষ প্যাকেজ (সিসিএসটি), রিসার্চ ও ডেভেলমেন্ট (আরএন্ডডি), সব ধরনের ব্র্যান্ড মিলিয়ে (ফ্ল্যাক্সিবল প্ল্যান অনুযায়ী) প্যাকেজের সংখ্যা হবে ৪০টি, যা আগে ছিল ৮৫টি।
এ ছাড়া, সব প্যাকেজের সময়সীমা হবে ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড, যা আগে ছিল ৩ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিন ও ৩০ দিন।
আনলিমিটেড প্যাকেজের সংখ্যা ও ডাটা ভলিউম-
প্রতিটি অপারেটর তিনটি ভিন্ন ভলিউমে আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ অফার করতে পারবে আর তা হবে ২৫ জিবি, ৫০ জিবি ও ৭৫ জিবি। অর্থাৎ উক্ত তিনটি ভলিউমের যেকোনো একটি আনলিমিটেড প্যাকেজ হিসেবে গণ্য হবে। বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে পরবর্তীতে ভলিউম পরিবর্তন করা যাবে।
আরও পড়ুন: প্রচলিত গণমাধ্যমের বিদ্যমান ধারা ভবিষ্যতে সম্পূর্ণরূপে বদলে যাবে: মোস্তাফা জব্বার
ফ্ল্যাক্সিবল প্ল্যান প্যাকেজ ডিজাইন-
যেসব গ্রাহক (মাই জিপি, মাই রবি, মাই বিএল, মাই টেলিটক) ব্যবহার করে তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী টকটাইম, ডাটা ভলিউম, সোশ্যাল প্যাক, এসএমএস ইত্যাদি নির্বাচন করে নিজের প্যাকেজ নিজেই ডিজাইন করতে পারবেন। প্রদর্শিত মূল্য গ্রাহকের পছন্দ হলে নিজেই তার মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে প্যাকেজটি গ্রহণ করতে পারবে এবং এটি একটি রেগুলার প্যাকেজ হিসেবে গণ্য হবে।
বোনাসসহ অব্যবহৃত ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড (অব্যবহৃত ডাটা নতুন প্যাকেজে যুক্ত হওয়া)-
নতুন নির্দেশিকায় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কিনলে ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে। একই ভলিউমের ৭ বা ৩০ দিন মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গ্রাহক উক্ত প্যাকেজ আবার কিনলে ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে। ক্যারি ফরওয়ার্ড করা যাবে সর্বোচ্চ ৫০ জিবি ডাটা পর্যন্ত।
এ ছাড়া গ্রাহককে অপারেটররা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩টি প্রমোশনাল এসএমএস দিতে পারবে, যা পূর্বে ছিল চারটি। সামাজিক প্যাকেজের ক্ষেত্রেও মেয়াদের মধ্যে একই প্যাক পুনরায় গ্রহণ করলে অব্যবহৃত ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে এবং বোনাস হিসেবে প্রদান করা ডাটাও ক্যারি ফরওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত হবে।
ডাটা শেষ হওয়ার পূর্বে গ্রাহককে অবহিতকরণ-
একজন গ্রাহককে প্যাকেজের সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে নতুন প্যাকেজ অফার প্রদান করলে অফারটি অবশ্যই একই প্যাকেজ হতে হবে এবং অন্য দুটি প্যাকেজ তার ব্যবহারের প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে হতে পারে। যেকোনো প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে ডাটার মেয়াদ শেষ হওয়ার নোটিফিকেশন পাঠাতে হবে। অব্যবহৃত ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ডের ক্ষেত্রেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে চলতি প্যাক পুনরায় কেনার নিদের্শনা উক্ত এসএমএস এ থাকবে।
মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, বর্তমানে মোবাইল ডাটার দাম ও গুণগত মান গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় তা বিলাসী পণ্য ছিল, এখন তা প্রান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে।
তিনি বলেন, নতুন প্যাকেজের নীতিমালাটি আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। আর এটা এমন নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না। গ্রাহকের কল্যাণে যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তা করা হবে। শুধু ব্যবসায়ী মোটিভে বিটিআরসি কাজ করে না। বিটিআরসি জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থেই কাজ করে।
আরও পড়ুন: আমরা ডাকঘর ডিজিটাল করার কাজ শুরু করেছি: মোস্তাফা জব্বার
মন্ত্রী বলেন, আমরা ভয়েস কলের জন্য সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন রেট ফিক্স করে দিয়েছিলাম। যার ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। অপারেটররা তো ব্যবসা করতেই এসেছে। তবে তার একটা সীমা আছে। ব্যবসা করতে গিয়ে প্রতারণা করলে সেটা টেকসই হয় না। ফলে ক্ষুদ্র মেয়াদ ও অসংখ্য প্যাকেজ দেওয়ার ফলে গ্রাহকরা বিভ্রান্ত হয়েছেন। প্যাকেজের সংখ্যা বর্তমানে অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে।