সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, এ সরকার পদ্মা সেতু করতে পারবে না বলে যারা বলেছিল, তারাই সেতুতে শিশু বলি দিতে হবে বলে গুজব ছড়িয়েছে। এ ঘৃণ্য ও অনভিপ্রেত গুজবের কারণে ছেলেধরা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিরীহ মানুষজনের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা এসব ঘটিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। একই সাথে এ ধরনের গুজব যাতে না ছড়াতে পারে তার জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
ছেলেধরা বলে অনেকের ওপর হামলা এবং অনেককে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গুজব ছড়ানোর কারণে ইতোমধ্যে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের অনেকের রাজনৈতিক পরিচয় জানা গেছে। ‘সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমি সে পরিচয় প্রকাশ করব না।’
গুজবের বিস্তার রোধে সরকারের তৎপরতা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী জানান, জনগণকে সতর্ক করার জন্য তথ্য অধিদপ্তর থেকে তথ্য বিবরণী দেয়া হয়েছে এবং রেডিও ও টেলিভিশনসহ সব গণমাধ্যমে তা প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও দেশব্যাপী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গুজব নিরসনে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ছেলেধরা নামে যে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে তার একটি ঘটনাও সত্য প্রমাণিত হয়নি। ‘যারা এ ধরনের আতঙ্ক ছড়াবে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক গতকাল দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নেতাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। যারা আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন বা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দলীয়ভাবে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। দলের প্রচার সম্পাদক হিসেবে আমি সব নেতা-কর্মীকে এ বিষয়ে সোচ্চার হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় দেরি হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কথাটি সঠিক নয়। প্রথম থেকেই কিন্তু মাইকিং করা হচ্ছিল। যেখানে গুজব ছড়িয়েছে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যখন পদ্মা সেতুতে শিশু বলি দিতে হবে গুজব ছড়ানো হয়, তখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল। এর পেছনে যে ষড়যন্ত্র আছে, সেটি ভাবার বিষয়, দেখার বিষয়।’
বন্যায় আক্রান্তদের জন্য সরকারের ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বন্যার্ত মানুষের জন্য গণফোরাম ও বিএনপির যে উদ্যোগ তা প্রেস ক্লাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
সরকার শুরু থেকেই পর্যাপ্ত ত্রাণ বিভিন্ন জায়গায় দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন বন্যার্ত এলাকার জন্য টিম গঠন করে একেক এলাকায় গেছেন এবং কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, তাদের দলের নেতা-কর্মীরা যেভাবে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে তা অনুকরণ ও অনুসরণ করতে তিনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের অনুরোধ জানান।
জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটা পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু এটা তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’
সাংবাদিকদের জন্য নতুন ওয়েজ বোর্ডের সভা নিয়ে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক হবে। বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।