রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
রবিবার (৭ মে) একজনের ভাই ও অপরজনের স্ত্রী এ রিট করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী তাজুল ইসলাম।
তিনি জানান, আসামিদের আটক, গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ব্যত্যয় হয়েছে। তাই এক আসামির ভাই ও আরেক আসামির স্ত্রী পৃথক রিট আবেদন করেছেন। রিটে ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাবি অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলা: দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বাধা নেই
এর আগে ২ মে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
আইন অনুসারে এখন রায়টি বিচারিক আদালত হয়ে কারাগারে যাবে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন।
৩ মে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছিলেন, এখন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। সেটা খারিজ করে হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।
ড. তাহেরর মেয়ে আইনজীবী সেগুফতা তাবাসুম আহমেদ জানান, রিভিউ খারিজের রায় হাতে পেয়েছি। এটা একটা আশার আলো। এখন আশা করছি অতি দ্রুত কার্যকর হবে।
এর আগে গত ২ মার্চ অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামিসহ দণ্ডিত তিনজনের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ।
ওই রায় লেখার পর গতকাল এর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।
২০০৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরের ম্যানহোলে তাহেরের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সেদিন তার ছেলে মতিহার থানায় মামলা করেন। মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রায় দেন বিচারিক আদালত।
রায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। দুজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন।
২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। জাহাঙ্গীরের ভাই আবদুস সালাম ও সালামের আত্মীয় নাজমুলকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন। যাবজ্জীবন দণ্ডিত আসামিদের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। পৃথক আপিল খারিজ করে এবং হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় দেন।
সাক্ষী ও আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, এটি স্পষ্ট মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিভাগের অধ্যাপক হওয়ার পথ পরিষ্কার করতে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন।
মহিউদ্দিন উচ্চশিক্ষিত ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। অধ্যাপক তাহের জীবিত থাকলে এই পদে মহিউদ্দিনের পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ শূন্য এ ধারণা থেকে শুধু অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার উদ্দেশ্যেই তাহেরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম, আবদুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধা, সেবা ও কম্পিউটার পেতে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যায় মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন ও সে অনুযায়ী অধ্যাপক তাহের হত্যার অপরাধ সংঘটন করেন।
গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। পরে মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর এবং যাবজ্জীবন সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবদুস সালাম পৃথক আবেদন করেন।
চেম্বার আদালত হয়ে রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে ওঠে।
গত ২ মার্চ আপিল বিভাগ তিন আসামিরই রিভিউ আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার রিভিউ খারিজ, ২ আসামির ফাঁসি বহাল