ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) চিকিৎসকদের মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনায় সারাদেশে চিকিৎসকদের ডাকা শাটডাউন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম।
এসময় উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা অভিযোগ করেছেন চিকিৎসা ঠিক মতো হয়নি তাদের জন্য একটা। আর যারা ডাক্তারদের গায়ে হাত তুলেছে, সেটা দেখার জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের স্বজনদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসকরা সারাদেশের শাটডাউন কর্মসূচি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিজ্ঞান গবেষণায় দেশকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই: উপদেষ্টা
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, ‘তোমরা আমার সন্তানের মতো। শাটডাউন তুলে নাও। মানুষের সেবা করার জন্য এসেছ। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছ। আবারও উজাড় করে দাও। এছাড়া তোমরা প্রমাণ কর, মানুষের সেবার জন্য এসেছ। মানুষের দুঃখে তোমাদের মন কাঁদে, তাদের জন্য তোমরা আছ। এটাই তোমাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রথমে ঢামেকে একজন ছাত্র মারা যায়। যেকোনো মৃত্যু মানুষের জন্য সত্যি পীড়াদায়ক। ডাক্তাররা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। কারণ তার মাথায় বড় আঘাত ছিল। ছাত্রটি মারা যাওয়ার পর তার আত্মীয়-স্বজন সেখানে গণ্ডগোল শুরু করেন। হাসপাতালের পরিচালক তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন- এখানে আমাদের গাফিলতি থাকলে আমরা সুস্থ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। তারা এই কথায় কর্ণপাত না করে আমাদের ডাক্তারদের ওপর হাত তোলে। এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি। এটা অন্যায়।
তিনি বলেন, এরপর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। কিন্তু অন্য গ্রুপ তার চিকিৎসা দিতে বাধা দেয়। কিন্তু পরে সেও মারা যায়। এরপর বিষ খাওয়া রোগী একজন ঢাকা মেডিকেলে মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না কোভিডের সময় ডাক্তাররা দিন নেই, রাত নেই সেবা করে গেছে। এখন যে বন্যা দেখা দিয়েছে সেখানেও ডাক্তাররা দিনরাত খেটে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কথায় কথায় তাদের গায়ে হাত তোলা এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
নুরজাহান বেগম বলেন, যারা এ কাজ করেছে, আমি এ ঘটনায় নিন্দা জানাই। আমি আমার সব ডাক্তারকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, নিশ্চয়ই সিসিটিভি ফুটেজে এগুলো আছে, সেই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমি তাদের আইনের আওতায় আনব এটা আমার অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, ‘আমি জনগণকে বলব- এই ডাক্তাররা আপনার সন্তানের মত। কারো ছেলে, কারো ভাই, তাদের জন্য একটু মানবিক হন। আবেগের বশে আমি কারো গায়ে হাত তুলে দিলাম, এটা ঠিক নয়। আইনটা নিজের হাতে তুলে নিলে দেশ আর দেশ থাকে না। বিশৃঙ্খল হয়ে যায়।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘ডাক্তাররা শাটডাউন ঘোষণা করেছে। চিকিৎসা সেবা না পেলে কেউ টিকতে পারবে? দেশ ঠিক থাকবে? থাকবে না। আমি সবাইকে অনুরোধ করব আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’
যারা শাটডাউন ডেকেছে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য যাবেন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমি আশা করি তারা আমার কথা শুনবেন।
আরও পড়ুন: ৭ ইসলামি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বেশির ভাগ দলের দাবি নির্বাচনের সময়সীমা