সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। পরে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, রবিবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে মুক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম,শিক্ষক সমিতির নেতারা, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করলেও তারা রাজি হননি।
এ সময় কোষাধ্যক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেন, ভেতরে অবরুদ্ধ থাকায় উপাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবির উপাচার্য অবরুদ্ধ
পরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ উপাচার্যকে মুক্ত করতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীর বাগ বিতণ্ডা বাঁধে এবং এক পর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করলে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় ২৫ মিনিট উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে শিক্ষার্থীরা সরে গেলে তালা ভেঙ্গে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ।
সিলেট মহানগর পুলিশের (উত্তর বিভাগ) উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ বলেন, উপাচার্যকে উদ্ধার করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে পুলিশের ১০ সদস্য রয়েছেন। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।
এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ কমিটির পদত্যাগসহ তিন দাবি আদায় এবং চলমান আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন।
পরে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আলমগীর কবির, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দীন আহমদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মহিবুল আলম।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
শিক্ষক সমিতির সভাপতি শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে হলের গুণগত মান উন্নত এবং অব্যবস্থাপনার সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সাত দিনের সময় চান। কিন্তু তিন দফা দাবি না মানায় শিক্ষার্থীরা বর্ধিত সময় দিতে রাজি হননি।
এর আগে বৃহস্পতিবার মাঝরাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ এবং হল প্রাধ্যক্ষ দলের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত আড়াইটার দিকে উপাচার্যের আশ্বাসে হলে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।
এরপর শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন। এ সময় ছাত্রলীগের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী এসে গোলচত্বর এলাকায় পাল্টা অবস্থান নেয়। তারা ছাত্রীদের হলে ফিরে যাওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করলে শাহারিয়ার আবেদীন, মাইনুল ইসলাম রাশু, ইয়াসির সরকার, রুপেল চাকমা, নাফিস হাসান ও অন্তিক আহত হয়েছেন বলে দাবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের সবধরনের সুযোগ-সুবিধায় পাশে আছে প্রশাসন: শাবিপ্রবি উপাচার্য