সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর ফলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (১ জুলাই) থেকে চবির ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে তা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও ভর্তি কমিটির সচিব এস এম আকবর হোছাইন।
সরকারঘোষিত পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে চবি শিক্ষক সমিতি।
আরও পড়ুন: 'বৈষম্যমূলক' পেনশন স্কিমের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু
এদিকে উদ্বোধনী ক্লাস না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা।
মোহাম্মদ পরাগ নামে আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে আমাদের ক্লাস হয়নি। কবে হবে, সে বিষয়েও আমাদের কিছু জানানো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস নিয়ে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। আমরা বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে এসে বসে আছি, অথচ আমাদের ক্লাসই হচ্ছে না; বিষয়টি অত্যন্ত হতাশার।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম আকবর হোছাইন বলেন, ‘ক্লাস শুরুর বিষয়টি বিভাগের চেয়ারম্যান ও ফ্যাকাল্টির ডিনদের ওপর নির্ভর করে। উনাদের কর্মবিরতি পালনের জন্য ক্লাস শুরু করা যায়নি।’
ক্লাস কবে নাগাদ শুরু হতে পারে- জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ-উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে আমরা রবিবার প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করতে পারিনি। আন্দোলন চলাকালে ক্লাস শুরু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমানের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি জারি করা পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিকরণ ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবে।
এদিকে, একই দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষকরাও। এ কারণে চুয়েটের বিভিন্ন বিভাগে চলমান স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে চলমান লেভেল-৩ টার্ম-১ এবং লেভেল-২ টার্ম-১ পরীক্ষা ২০২৩ এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত ঘোষণা করা হলো। স্থগিত করা পরীক্ষাসমূহের তারিখ ও সময়সূচি পরবর্তীতে স্ব স্ব বিভাগ ও ইন্সটিটিউট থেকে ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির পালনে এক সমন্বিত সভায় চুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ও বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
স্থগিত পরীক্ষাগুলো কখন হবে, এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: খুলনার তিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু