শিক্ষার্থীদের চলাচলে দুর্ভোগ কমাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে ইলেকট্রনিক কার্ট গাড়ি। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমানোর পাশাপাশি যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজ করতে পরিবেশবান্ধব এই কার্ট গাড়ি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবন চত্বরে চারটি কার্ট গাড়ির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ কামরুল আহসান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুর রবসহ অন্যন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, আগামী মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) থেকে এই গাড়িগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। দুইটি গাড়ি ছেলেদের আবাসিক হল সংলগ্ন এলাকা থেকে এবং বাকি দুইটি গাড়ি মেয়েদের আবাসিক হল সংলগ্ন এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে চলাচল করবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচি: জাবি প্রশাসনের সংহতি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, কার্ট গাড়িগুলোর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন পাঁচ টাকা থেকে বিশ টাকা পর্যন্ত। তবে ভাড়া সর্বোচ্চ পনের টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের ডেপুটি রেজিষ্টার মুহাম্মদ ইবরাহিম হোসেন বলেন, ‘রবিবার থেকে ক্যাম্পাসে চারটি গাড়ি চালু করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি গাড়ি এগারো সিটের এবং একটি গাড়ি সাত সিটের। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বাকি গাড়িগুলোও চালু করা হবে।’
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘জাবিতে কার্ট গাড়ি চালু করার বিষয়টি ছিল শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। তাদের দাবি পূরণ করতে পেরে ভালো লাগছে।’
শিক্ষার্থীরা একটি যৌক্তিক দাবি জানিয়েছে বলে তাদের প্রশংসা করে উপ-উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যদি এই দাবিটি না জানাতো, তাহলে এত সুন্দর ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো না। সেজন্য শিক্ষার্থীদের সাদুবাদ জানাতে চাই। আমরা আশা করবো শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।’
এ সময় জাবিতে ইলেকট্রনিক কার্ট গাড়ি চালু হওয়ায় পরিবহন ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থী রাঁচির নিহতের প্রেক্ষিতে এই গাড়ি চালু হলো। আমরা রাঁচিকে ভুলে যেতে চাইনা। তাকে ধারণ করতে চাই। এই গাড়ি ব্যবহার করে যখন শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন; তখন সেই ভালো দিকটা যেন রাঁচির বিদেহী আত্মার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে।’
সরেজমিন দেখা যায়, বর্তমানে ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নেই। কিছু সংখ্যক প্যাডেলচালিত অটোরিকশা ক্যাম্পাসে চলাচল করছে। তবে সেগুলো চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাছাড়া রিকশাওয়ালারা ভাড়া বেশি নেন বলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ছাত্রদলের মানববন্ধন
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ নভেম্বর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারায় প্রথম বর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাঁচি। তার মৃত্যুর ঘটনায় ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রনিক কার্ট গাড়ি চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।