সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিশ্বাস ফেরাতে ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০২ মামলায় ২০ হাজার ৬১৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৮৩ জনকে।
সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ আর্থিক সহায়তা, খাদ্য, বস্ত্র ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং গৃহ নির্মাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন এবং ইতোমধ্যে এ জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও এক ভার্চুয়াল সভায় জানান তিনি।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সম্ভাব্য যে কোনো হামলা প্রতিরোধে নজরদারি জোরদার করতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: শাহবাগে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ
৩৭টি জেলা ও তিনটি সিটি করপোরেশন এলাকায় ১১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাত দিন টহল দিচ্ছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানান, দলটি সকল ইউনিটের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে ও যে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা প্রতিহত করতে নেতা-কর্মীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, গেল কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, জ্যৈষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা, সাংসদ, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁর কার্যালয়ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কাউকে তা বিনষ্ট করতে দেয়া হবে না।’
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন গণমাধ্যমও নজরদারি করা হচ্ছে। ভুয়া তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপকসহ দুই ডজনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে নির্দেশনা জারি করেছে এবং তাদের নিজ নিজ এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে বলেছে। এছাড়া এ বিষয়ে রবিবার মন্ত্রণালয়ে একটি ভার্চুয়াল সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় আনা হয়েছে কক্সবাজারে গ্রেপ্তার ইকবাল হোসেনকে
এলজিআরডিমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম কুমিল্লা পরিদর্শন করেছেন। এখান থেকেই কথিত কোরআন অবমাননার গুজব ছড়ানো হয়।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধান প্রধান ধর্মের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে মানুষের মাঝে সচেতনা তৈরি ও তাদের অনুপ্রাণিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান রংপুরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ভুক্তভোগী ৬১টি পরিবারকে নগদ ১০ হাজার করে টাকা, শিশু খাদ্য ও পশু খাদ্য প্রদান করেছেন।
এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গৃহ নির্মাণ করতে ১০০ বান্ডেল ঢেউটিন, চার লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ এবং ১২০০ প্যাকেট মানবিক খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসিন।
রবিবার রাতে রংপুর জেলা প্রশাসন ৬৫টি ভুক্তভোগী পরিবারের মাঝে ৯ লাখ নগদ অর্থ সহায়তা ও ১০০ বান্ডেল ঢেউ টিন বিতরণ করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের যেন খোলা আকাশের নিচে থাকতে না হয় সে জন্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি তাদের জন্য তাঁবু স্থাপন করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রংপুরের পীরগঞ্জে হামলা ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক হিন্দু পরিবারের মাঝে পাঁচ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন।
ক্ষমতাসীন দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের মাঝে নগদ টাকা, খাদ্য, বস্ত্র সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি কেন্দ্রীয় দল শিগগিরই সারাদেশ পরিদর্শন করবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী ও হুইপ আবু সায়িদ আল মাহমুদ স্বপনও রংপুরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।