দুই শতাধিক মামলার আসামি স্যাডিস্ট শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া কোনো গণতান্ত্রিক দেশের কাছে কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন, ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক থাকলেও রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে সম্পর্কের টানাপোড়ন ছিল। একটা দেশের সঙ্গে আরেকটা দেশের সম্পর্ক হবে সাম্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। কিন্তু, বিগত সময়ে ভারত আমাদের উপর প্রভুত্বসুলভ আচরণ করেছে।
আরও পড়ুন: রাজনীতিবিদদের কাঁদা ছোড়াছুড়ি জনগণ পছন্দ করে না: মিয়া গোলাম পরওয়ার
শনিবার (৫ এপ্রিল) বিকালে খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা ঈদগাহ ময়দানে থানা জামায়াতে ইসলামী কর্মী সম্মেলন-২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার বলেন, সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি চুক্তি, সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারত সবসময় আমাদের সাথে নানা টালবাহানা করে আসছে। ভারত ও তার জনগণ আমাদের শত্রু নয়; কিন্তু ভারতের শাসকদল ক্ষমতাসীন বিজেপি চরম সাম্প্রদায়িক একটা দল।
সম্প্রতি ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক আমাদের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতের এই নেতা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা যখন তাদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছিল, তখন এদেশের ফ্যাসিস্ট ও স্যাডিস্ট শেখ হাসিনা তাদের উপর জুলুম নির্যাতন করে ২ হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও ৩০ হাজারের অধিক জনগণকে আহত করেছে। খুন, গুম, অর্থ পাচারসহ দুই শতাধিক মামলার আসামি স্যাডিস্ট শেখ হাসিনার বিচার আর্ন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইবুনালে শুরু হয়েছে। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। এমন একজন অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া কোনো অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক দেশের কাছে কাম্য নয়।
বিগত ১৬ বছরকে জুলুম নির্যাতনের এক কালো অধ্যায় উল্লেখ করে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জামায়াত নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের বন্ধু। মানুষের দুঃখ, দুর্দশা লাঘবে জামায়াত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ইসলামী রাষ্ট্রের যে ধারণা মহান রব কুরআনে উল্লেখ করেছেন জামায়াত সেই আলোকেই বাংলাদেশকে গড়তে চায়। একটি শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র গড়বে যা ২৪’র আন্দোলনের ছাত্র-জনতা বুকে ধারণ করে জুলুম নির্যাতন সয়েছে তবুও পিছপা হয়নি। ছাত্ররা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে স্বপ্ন দেখছে— জামায়াত তার সাথে একমত পোষণ করে। অতীতের জুলুম-নির্যাতন দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ যদি নির্মাণ করা না যায়— তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন বৃথা যাবে।
আরও পড়ুন: কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার ঋণ পরিশোধ করতে হবে: মিয়া গোলাম পরওয়ার
আগামী বছরের জুনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় জামায়াতের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনটি স্তম্ভ- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ও সামাজিক সুবিচার। জামায়াতে ইসলামী এই তিনটিকে ধারণ করে আগামীর বাংলাদেশ গড়বে।
থানা আমির মাওলানা মুনাওয়ার আনসারীর সভাপতিত্বে ও মুহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম এবং মাওলানা মাহদী আল-হাদীর পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন ও অন্যান্য নেতারা।