বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পেছন থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন তারা।
এ সময় তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবাসিক হল না খোলা হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাকী বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসিক হলের মূল ফটকগুলোর তালা ভাঙলেও আমরা এখনো এই কাজটি করিনি। এর অর্থ এই নয় যে আমরা এ জাতীয় কাজ করব না।’
আরও পড়ুন: জাবির আবাসিক হল গেটে ফের তালা
ফটক ভেঙে হলের দখল নিচ্ছেন জাবি শিক্ষার্থীরা
তিনি বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বাদে সারা দেশে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা অটো-প্রমোশন পাচ্ছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক আগেই পরীক্ষা নেয়া শুরু করেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও পরীক্ষা নিতে শুরু করেছে। কিন্তু আমরা গত এক বছরে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছি। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্যাম্পাস এবং আবাসিক হলগুলো পুনরায় চালু করার দাবি জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা সরকারের আদেশ ব্যতীত ক্যাম্পাস এবং হলগুলো খুলতে পারি না। সরকারি আদেশ পাওয়ার পর আমরা হলগুলো খোলার বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’
জাবিতে বিক্ষোভ
শনিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বেঁধে দেয়া সময় শেষ হওয়ার পরও আবাসিক হল খুলে না দেয়ায় ও উপাচার্য এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি মিছিল ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে পৌঁছায়। এরপর শিক্ষার্থীরা হলের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে শিক্ষার্থীরা চলে গেলে বিকালে ফের তালা ঝুলিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে হল খোলাসহ তিন দফা দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের দুটি দাবি মেনে নিলেও হল খোলার ব্যাপারে ‘রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা’ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব না বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান জানান।
তার এই ঘোষণার পরেই দুপুরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তবে শিক্ষার্থীরা যাওয়ার পরেই ফের হলগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
হল খুলে দেয়া ছাড়া শিক্ষার্থীদের অন্য দাবি দুটি হলো- শুক্রবার এলাকাবাসীর সাথে সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীদের পুড়িয়ে দেয়া মোটরসাইকেলের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহতদের চিকিৎসার খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে।
বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে ১৬টি হলের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ দেখা যায়। মেনে নেয়া দাবি দুটি হলো-আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ফটক নির্মাণ করা।
আরও পড়ুন: সড়ক অবরোধ তুলে নিলেও দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ববি শিক্ষার্থীদের
ববি শিক্ষার্থী ও পরিবহন শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি সড়ক অবরোধ
বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো পুনরায় খুলতে পারি না।’
এর আগে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস সংলগ্ন একটি গ্রামের বাসিন্দাদের আক্রমণে আহত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, একটি ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষ শুরু হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গেরুয়া বাজারে শিক্ষার্থীদের চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় স্থানীয়রা। এরপর ওই এলাকাবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং এরপর দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ
বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই ছুটি পরবর্তীতে কয়েক ধাপে বাড়ানোর পর সর্বশেষ তা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।