সৌদি আরব থেকে হুন্ডি পরিহার করে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো হলে তা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থ বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সৌদি প্রবাসীরা দেশে প্রায় ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন। তবে সৌদি আরবে বসবাসরত ২৮ লক্ষ সৌদি প্রবাসী বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ করলে তা আরও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও হুন্ডি প্রতিরোধে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রদূত।
সেমিনারে রিয়াদের কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, রিয়াদের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ ও বিওডি সদস্যসহ অন্যান্যরা যোগ দেন। এছাড়া দূতাবাসের কর্মকর্তারা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সৌদি হজ্জ বিষয়ক মন্ত্রীর সাথে রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারীর বৈঠক
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দেশের প্রয়োজনে সৌদি প্রবাসীদের হুন্ডি প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এ সময় তিনি কমিউনিটির সবাইকে হুন্ডি প্রতিরোধে সাধারণ প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিরও আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বিদেশে আসার আগে দক্ষতা অর্জন করে আসলে ভালো বেতনের চাকরি পাওয়া সম্ভব। দক্ষ কর্মী প্রেরণ করা হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমবাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সৌদির সরকারি প্রতিষ্ঠান তাকামলের মাধ্যমে দক্ষতা যাচাই করার সুযোগ তৈরি হয়েছে সৌদি গমনে ইচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মীদের।
সৌদির সরকারি প্রতিষ্ঠান তাকামল হোল্ডিং বাংলাদেশে বসেই দক্ষ বা আধা-দক্ষ কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের কাজ করবে এবং সনদ প্রদান করবে। প্লাম্বিং, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক, ওয়েল্ডিং, কার্পেন্টার পেইন্টার, প্লাস্টারার, বিল্ডারসহ ২৩টি বিষয়ে দক্ষতা যাচাই ও সনদ প্রদান করা হবে।
এছাড়া সৌদি প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু আছে বলে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, সৌদি আরবে আসার ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে ভিসা ট্রেডিং বন্ধে দূতাবাস কাজ করছে এবং প্রত্যেকটি ভিসা যাচাই করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি ভিসা ট্রেডিং বন্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রবাসী কর্মীর মাইগ্রেশন কষ্ট না কমানো হলে তাদের আয়ের সুফল পাওয়া যায় না। কারণ, একজন প্রবাসী কর্মীর কয়েক বছর লেগে যায় তার বিদেশে আসার খরচ তুলে আনতে।
রাষ্ট্রদূত বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে সরকারি আড়াই শতাংশ প্রণোদনা গ্রহণ করার পাশাপাশি দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার জন্য প্রবাসীদের আহবান জানান।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাপলিকেশন (অ্যাপ) ব্যবহার করে নিজের অ্যাকাউন্ট সৌদি আরবে বসেই পরিচালনা করার কথা এবং সৌদি আরবে বসেই সোনালী ব্যাংকের ই-ওয়ালেট ব্যবহারের বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে সৌদি প্রবাসীদের নতুন রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারীর আহ্বান
রাষ্ট্রদূত যে সকল বাংলাদেশি প্রবাসীরা সৌদি আরবে ব্যবসা করছেন তাদের ব্যবসা নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করে বৈধভাবে ব্যবসা করার আহবান জানান। তিনি বলেন, এতে সৌদি আরবে বৈধ ব্যবসার সুযোগের পাশাপাশি দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতেও সুবিধা পাওয়া যায়।
তিনি বিভিন্ন শ্রমিক ক্যাম্পে দূতাবাসের সোনালী ব্যাংকের সেবা প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইং-এর কাউন্সেলর রেজা-ই রাব্বী। তিনি সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার নিয়ে পর্যালোচনামূলক গবেষণা তুলে ধরেন। এছাড়া রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সুপারিশমালা ও সুবিধা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন।
সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে দূতাবাসের মিশন উপ-প্রধান মো. আবুল হাসান মৃধা, ইকোনমিক মিনিস্টার মুর্তুজা জুলকার নাঈন নোমান, সোনালী ব্যাংকের এ জি এম মো. তৌফিকুর রহমান, প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন, রিয়াদ আওয়ামী পরিষদের সভাপতি এম আর মাহাবুব বক্তব্য প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে আগত প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্ন সমস্যা, সৌদি আরবের শ্রম বাজার, দূতাবাসের বিভিন্ন সেবা নিয়ে তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন।
প্রবাসীরা রেমিট্যান্স প্রণোদনা বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যয় ফেরত প্রদান, রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য ভালো ব্যাংক রেট প্রদানের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমুহকে রেমিট্যান্স ডেলিভারির জন্য উন্নত সেবা প্রদানের দাবি জানান।
দূতাবাসের প্রেস উইং-এর উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারের সঞ্চালনা করেন প্রথম সচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের বিনিময় হার ১ টাকা বাড়ল