রাজধানীর হোসেনী দালানে বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে যথাক্রমে সাত ও ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। মামলার বাকি ছয় আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ২০১৫ সালের হোসেনী দালান বিস্ফোরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার ভুলে মামলার মূল পরিকল্পনাকারী এবং হামলাকারীরা আদালতের ‘আওতার বাইরে রয়ে গেছেন।’ পরিদর্শক শফিউদ্দিন এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের সময় একটি বড় ভুল করেছেন এবং তার দায়িত্বে অবহেলা করেছেন।
মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করে করেন। মামলায়
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন- মনির (১০ বছর) ও কবির হোসেন (সাত বছর)।
মামলা থেকে খালাস পাওয়া ছয় আসামি হলেন- আবু সৈয়দ ও রুবেল ইসলাম সুমন ওরফে সজিব, চান মিয়া ওমর ফারুক ওরফে চান মিয়া, হাফেজ আহসান মাহমুদ, শাহজালাল মিয়া ও আহসানউল্লাহ মাহমুদ।
তারা আটজনই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য।
আদালত জানিয়েছে, খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আইও প্রকৃতপক্ষে চার্জশিটে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়।
এদিকে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই চাঁন মিয়া, আহসান, শাহজালাল মিয়া ও আহসানউল্লাহকে আসামি করেন আইও। ফলে বিচার চলাকালে তারা মানসিক ও শারীরিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে আদালত চত্বর থেকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আরিফ ও আরমান ওরফে মনিরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী বিস্ফোরণ মামলার মূল পরিকল্পনাকারী আলবানী ও নোমান। এছাড়া আইও তার প্রতিবেদনে হিরন ওরফে কামাল আল বানি ওরফে হুজ্জা ও আবদুল্লাহ ওরফে আলাউদ্দিন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে বলে জানিয়েছেন।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর জেএমবির পাঁচ সদস্য হোসেনি দালানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে দুইজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়। এ ঘটনায় প্রথমে নগরীর চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও পরে তা তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
২০১৬ সালের অক্টোবরে ডিবি (দক্ষিণ) এর পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ১০ জন জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৭ সালের মে মাসে একটি আদালত ১০ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এবং মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
২০১৮ সালের ১৪ মে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছিল, যেখানে ১০ অভিযুক্তের মধ্যে দুজনের আইনজীবী দাবি করেছিলেন যে তারা নাবালক এবং সমর্থনকারী নথি জমা দিয়েছেন। পরে আদালত দুই আসামিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ঘোষণা করেন এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাকে কম বয়সী উল্লেখ করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করতে বলেন। তাদের মামলা বর্তমানে কিশোর আদালতে বিচারাধীন।
মামলার প্রাথমিক আট আসামি জেএমবি সদস্যদের মধ্যে- ওমর ফারুক মানিক, হাফিজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, সাহজালাল মিয়া, চান মিয়া, কবির, রুবেল ইসলাম ওরফে শাজব, আবু সাঈদ ওরফে সোলায়মান ও আরমান-সহ তিনজন সাজা দেন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।
মামলায় ৩১ জন সাক্ষীর জবানবন্দিও রেকর্ড করেছে আদালত।
আরও পড়ুন: এএসপি আনিস হত্যা: ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা