বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে জোরদারে একযোগে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নবনিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের অনারারি কনসাল মাসুদ জামিল খান।
রবিবার ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অত্যন্ত দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশ এবং আয়ারল্যান্ড উন্নত ও শিক্ষিত দেশ। উভয় পক্ষ একসঙ্গে খুব ভালো কাজ করতে পারে।’
তিনি বলেন, আয়ারল্যান্ডের এন্টারপ্রাইজ, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী সাইমন কোভেনি টিডির ১৭ মার্চ ঢাকায় আসার কথা রয়েছে এবং সম্পর্ক জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে বেশ কয়েকটি বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: মাসুদ জামিল খান আয়ারল্যান্ডের অনারারি কনসাল নিযুক্ত
মাসুদ বলেন, ‘মন্ত্রী সাইমন বাংলাদেশে আসছেন বলে আমরা সম্মানিত। দিল্লিতে আমার রাষ্ট্রদূত (ভারতে নিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলি) এই বিষয়কে সমর্থন করেছেন। আমি মনে করি, এটি একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সফর।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে বৈঠক করবেন কোভেনি।
সফরকালে সেন্ট প্যাট্রিক দিবস, আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দিবস এবং 'বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ডের অনারারি কনস্যুলেট'র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন তিনি।
ঢাকায় অবস্থানকালে আয়ারল্যান্ডের মন্ত্রী বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সম্পর্ক নিয়ে একটি সংলাপে অংশ নেবেন।
১৯৭২ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশকে আয়ারল্যান্ডের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিরাজ করছে।
কসমস গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদ বলেন, 'আয়ারল্যান্ড প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে কাউকে নিয়োগ দিয়েছে। সম্পর্ক উন্নয়নে উভয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ২৬ বছরে আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশের রপ্তানি বার্ষিক ১৬.৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। রপ্তানির এ পরিমাণ ১৯৯৫ সালে ৬.৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২১ সালে ৩৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ‘সুতরাং, এটি বিশাল আকারের রপ্তানি বৃদ্ধি।’
মাসুদ বলেন, আয়ারল্যান্ডকে এখন ইউরোপের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি হাব হিসেবে দেখা হয়। এটি হাবস্পট অ্যান্ড ইনডিড সহ বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ইএমইএ সদর দপ্তরও।
তিনি বলেন, ‘আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশ থেকে আইটি সেক্টরে দক্ষ পেশাজীবী নিতে পারে। আয়ারল্যান্ডের সহায়তায় বাংলাদেশও হতে পারে আইটি হাব। বাংলাদেশে তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে এবং তারা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত।’
মাসুদ বলেন, দুই দেশই ওষুধ খাতে ভালো করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আয়ারল্যান্ডে পোশাক রপ্তানি হচ্ছে এবং এটি প্রতি বছরই বাড়ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা অবশ্যই বিষয়টি দেখতে পারি।’
তিনি বলেন, আয়ারল্যান্ড থেকে কনসেন্ট্রেটেড মিল্ক বাংলাদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
মাসুদ আরও বলেন, ‘আমরা আয়ারল্যান্ড থেকে গরু আনতে পারি। একই সঙ্গে আমরা তাদের প্রজননের জন্যও এখানে আনতে পারি। আয়ারল্যান্ড থেকেও মল্ট এক্সট্রাক্ট ও স্ক্র্যাপ আয়রন বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রগুলোতে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করার উদ্যোগ নিতে পারি।’
তিনি বলেন, শিক্ষা খাতে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এবং দুই পক্ষ এখানে আয়ারল্যান্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা স্থাপনের বিষয়ে কাজ করতে পারে।
আয়ারল্যান্ডে কিছু শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আয়ারল্যান্ড পড়াশোনার জন্য একটি চমৎকার জায়গা।’
নিয়োগ নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে মাসুদ বলেন, 'সম্পর্ক উন্নয়নে উভয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত।’
মাসুদ বলেন, ‘এটি চমৎকার অনুভূতি। বর্ণনা করা খুব কঠিন। অবশ্যই, এটি অত্যন্ত আনন্দের। আমি এটি অর্জনের চেষ্টা করেছি।’
তার বাবা রোমানিয়ার অনারারি কনসাল এনায়েতুল্লাহ খানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনিও সেই সংস্কৃতির মধ্যে বড় হয়েছেন।
এই দায়িত্ব পালনে সফলতার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'একটি দেশের অনারারি কনসাল হওয়ার ইচ্ছা আমার সবসময়ই ছিল; যাতে সেই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে পারি।’
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রদর্শনীর আয়োজন করছে গ্যালারি কসমস