বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির কারণে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারি থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ,জ্বালানি ঘাটতি, অর্থপ্রদানের ভারসাম্য ঘাটতি এবং রাজস্ব ঘাটতির জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ষান্মাসিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক গ্রুপের মনোনীত প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গকে স্বাগত জানিয়েছে
‘ট্রেড রিফর্ম: অ্যান আর্জেন্ট এজেন্ডা’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত বাণিজ্য সংস্কার এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণসহ কাঠামোগত সংস্কার বাংলাদেশকে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে এবং প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
এতে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কারণ,মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমবে,বহির্বিশ্বের অবস্থার উন্নতি হবে এবং সংস্কার বাস্তবায়নে গতি আসবে।
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, কঠোর আর্থিক অবস্থা, আমদানি বিধিনিষেধের বাধা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিশ্বের দেশগুলোকে প্রভাবিত করেছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে বাংলাদেশের মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যাহত হয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে এবং স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করতে সংস্কারে সহায়তা করতে প্রস্তুত।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মূল্যস্ফীতি বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। ২০২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থপ্রদানের ভারসাম্য ঘাটতি সাত দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা ২০২২ অর্থবছরের পাঁচ দশমিক তিন বিলিয়ন থেকে বেড়েছে। যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছে।
অর্থপ্রদানের ভারসাম্য ঘাটতি ২০২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২২ অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে জরুরি সমন্বিত পদক্ষেপের তাগিদ বিশ্বব্যাংকের
একটি মাল্টিপল এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম পেমেন্টের চাপের ভারসাম্যে অবদান রেখেছে। এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহকে নিরুৎসাহিত করেছে। একক বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হারের দিকে অগ্রসর হওয়া বাহ্যিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
ঝুঁকিরে ব্যাপারে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশীয় ব্যাংকগুলো তারল্যের সংকট এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। দেশীয় ব্যাংকগুলো থেকে উচ্চতর অর্থায়নের ফলে আর্থিক ঘাটতি ২০২৩ অর্থবছরে প্রসারিত হয়েছে।
দেশীয় ব্যাঙ্কগুলো থেকে অধিকমাত্রায় টাকা উত্তোলনের ফলে আর্থিক ঘাটতি ২০২৩ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যৌথভাবে বিশ্বব্যাংক-আইএমএ-এর ডেবট সাসটেইনেবিলিটি অ্যানালাইসস (ডিএসএ) জানায়, বাংলাদেশ ঋণ সংকটের কম ঝুঁকিতে রয়েছে।
রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য বাণিজ্য প্রতিযোগিতার উন্নতিতে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনে সক্ষম হবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ এবং প্রতিবেদনের সহ-লেখক বার্নার্ড হ্যাভেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশই তৈরি পোশাক খাত। কোভিড ১৯ মহামারির বদৌরতে শুধুমাত্র একটি একক খাতের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার ঝুঁকি সম্পর্কে আমরা বুঝতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনা এবং প্রতিযোগিতার উন্নতি ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনে সহায়তা করবে। এর জন্য শুল্ক ও অশুল্ক উভয় বাধা কমানো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। একটি ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি আঞ্চলিক একীকরণকে শক্তিশালী করতে পারে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ।’
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট হলো সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাসের একটি সহযোগী অংশ। তারা বছরে দুবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সম্ভাবনা এবং দেশগুলোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেল স্টেশনকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনসিসিকে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক