শুক্রবার তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্প-কলাকুশলীরা।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক আলী যাকের ক্যান্সারের সাথে লড়াই করার মাঝেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
আলী যাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী এক শোকবার্তায় বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তফা তার অফিসিয়াল ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, ‘আমার চিন্তাভাবনা বা অনুভূতি প্রকাশ করার মতো কোনো শব্দ নেই। আলী যাকের, আমাদের প্রিয় ছটলু ভাই না ফেরার দেশে চলে গেছেন।’
‘সারা ভাবি, ইরেশ এবং শ্রিয়া এই শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি ওঠুন। তোমাকে ভালোবাসি ছটলু ভাই। আবার দেখা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিদায়।’
চট্টগ্রামে ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করা আলী যাকের ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি অভিনয় শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করেন এবং মঞ্চ, টেলিভিশন ও রুপালি পর্দায় বৈচিত্র্যময় সব চরিত্রে অভিনয় করে পরিণত হন অন্যতম সফল অভিনেতায়।
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা বলেন, আলী যাকের আমার দেখা একজন সেরা বিনয়ী ব্যক্তি ছিলেন। ‘তিনি ছিলেন আমাদের অনেকের জন্য বাতিঘর, আল্লাহ তাকে চির শান্তিতে রাখুক।’
জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীও আলী যাকেরের মৃত্যুতে তার বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
অভিনেত্রী সাবিলা নূর লেখেন, ‘শান্তিতে বিশ্রামে থাকুন আলী যাকের।’
আলী যাকের তার নাটকের দলের হয়ে ২০১৯ পর্যন্ত ১৫ নাটকে নির্দেশনা এবং ৩১টিতে অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে কয়েকটি হলো- কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, গ্যালিলিও, নূরলদীনের সারাজীবন, ম্যাকবেথ, অচলায়তন ও দেওয়ান গাজীর কিস্সা।
নূরলদীন, গ্যালিলিও ও দেওয়ান গাজীর ভূমিকায় আলী যাকেরের অভিনয় সমালোচক ও নাটকপ্রেমীদের কাছ থেকে বয়ে আনে ব্যাপক প্রশংসা। তিনি আজ রবিবার ও বহুব্রীহি টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেও বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।
অভিনেতা আরিফিন শুভ বলেন, তোমার সৃষ্টি রয়ে যাবে চিরকাল।
চলচ্চিত্র অভিনেতা ওমর সানীও আলী যাকেরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি তার ফেসবুকে লিখেন, ‘বিশিষ্ট অভিনেতা এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা আলী যাকের চাচা আর নেই। তিনি আজ সকালে এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’
আসর নামাজ শেষে বনানী কবরস্থান মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
বরেণ্য এ নাট্যজন শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। সেই সাথে তিনি তার বর্ণাঢ্য জীবনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক ও নরেন বিশ্বাস পদকসহ নানা সম্মাননা লাভ করেছেন।
আলী যাকের মৃত্যুকালে স্ত্রী সারা যাকের, ছেলে ইরেশ যাকের ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়াসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।