দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর বাংলাদেশে শুরু হলো ব্যান্ড সঙ্গীত চর্চা। সেই সময় দেশের তরুণদের অনুপ্রেরণা পিংক ফ্লয়েড, বিটলস, ডায়ার স্ট্রেইট বা দা ডোরস’র মতো পশ্চিমা সঙ্গীতের অনেক ব্যান্ড। তাদের কেউ হতে চান মার্ক নফলার, জিম মরিসন। আবার কেউ ডেভিড গিলমোর অথবা জিমি হেন্ড্রিক্স।
এখন যে কিংবদন্তী রক আইকনের কথা বলব তিনি হচ্ছেন দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের পথিকৃত আইয়ুব বাচ্চু। ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার প্রায়ত এই তারকার ৬০তম জন্মদিন আজ।
আইয়ুব বাচ্চুর বেড়ে উঠা চট্টগ্রামে। ৭০ দশকে স্কুলে থাকতে বাবার কাছ থেকে একটি গিটার উপহার পান। আর সেই থেকেই তার টুংটাং শুরু। কিশোর বয়সে প্রেমের পরেন পশ্চিমা সঙ্গীতের। হয়তো স্বপ্ন দেখতেন জিমি হেন্ড্রিক্স হওয়ার। যাকে আইয়ুব বাচ্চুর টিশার্টে প্রায় দেখা যেত।
দেশের টিভির এক অনুষ্ঠানে আইয়ুব বাচ্চু প্রথম দেখলেন আজম খানের পারফর্মেন্স। তার সঙ্গে ঝাঁকড়া চুলে গিটার বাজাচ্ছিলেন দেশের কিংবদন্তী গিটারিস্ট নয়ন মুন্সি। মুগ্ধ হয়ে যান আইয়ুব বাচ্চু। তখন থেকে নেশা চড়ে যায়। তাই কলেজ জীবনে বন্ধুদের নিয়ে একটি ব্যান্ড গড়লেন। নাম দিলেন ‘গোল্ডেন বয়েজ’।
আরও পড়ুন: আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে চট্টগ্রামে রূপালি গিটার
চট্টগ্রামে সেই সময়ে বেশ জনপ্রিয় ‘ফিলিংস’ব্যান্ড। আইয়ুব বাচ্চুর ইচ্ছা ছিল সেই ব্যান্ডে জয়েন করার। কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে যেহেতু আগেই পরিচয় ছিল তাই সেই ইচ্ছাটাও পুরোন হলো। এতে আইয়ুব বাচ্চু তার গিটারের প্রেক্টিস আরও ভালোভাবে করার সুযোগ পেয়ে যান। আর তার উদ্দেশ্য ছিল মূলত এটাই। এটা ছিল ১৯৭৮ সালের কথা।
এরপর ১৬ বছর বয়সে ‘ফিলিংস’ থেকে আইয়ুব বাচ্চু প্রথম গান রেকর্ড করেন। শিরোনাম ‘হারানো বিকেলের গল্প’। গীতিকার ছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। ব্যান্ডটিতে তিন বছরের মতো ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। পরবর্তীতে যোগ দেন চট্টগ্রামের আরও একটি জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘সোলস’-এ।
সোলস তখন ছিল চট্টগ্রাম ভিত্তিক ব্যান্ডদল। যদিও ৮২ সালের দিকে সোলস ব্যান্ড ঢাকায় মুভ করে। যার কারণে আইয়ুব বাচ্চুও ঢাকায় চলে আসেন। সেই সময়েই সোলসের প্রথম অ্যালবাম, ‘সুপার সোলস’ রিলিজ হয়।
এক সাক্ষাৎকারে আইয়ু বাচ্চু বলেছিলেন, ‘১৯৮৩ সালের শেষের দিকে মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে এসেছিলাম। উঠেছিলাম এলিফ্যান্ট রোডের একটি হোটেলে। তখন এখানে আমার অনেক আত্মীয়স্বজন থাকতেন। আমি কারও কাছেই যাইনি। বিপদে কারও মুখাপেক্ষীও হইনি। নিজেকে গড়ে তুলেছি। দিনরাত্রি কাজ করে একটা অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি।
১৯৮৬ সালে ‘সোলস’এ থাকা অবস্থায় নিজের প্রথম একক অ্যালবাম, ‘রক্তগোলাপ’ প্রকাশ করেন আইয়ুব বাচ্চু। এই অ্যালবামের সুর ও সঙ্গীত ছিল তার নিজেরই। কিন্তু এখানে মজার ব্যাপার হলো, অ্যালবামের কভারে সুর ও সঙ্গীতের জায়গায় তিনি তার ডাকনাম ‘রবিন’ ব্যবহার করেন এবং শিল্পীর স্থানে আইয়ুব বাচ্চু ব্যবহার করেন।