দ্রোহকন্যা খ্যাত মঞ্চ নাটকের অন্তপ্রাণ ইশরাত নিশাত। ২০২০ সালে তার হঠাৎ চলে যাওয়া নাট্যঙ্গনে বিষাদ বয়ে আনে। তার স্মরণে এবছর থেকে শুরু হলো নাট্য পুরস্কার।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার-২০২২ এর জন্য নমিনেশন ঘোষণা করা হয়েছে। থিয়েটারের আটটি শাখায় প্রতিবছর এই পুরস্কার দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই নাট্য পুরস্কার প্রবর্তনে দেশের বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব ও গুণীজনদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি এবং একটি নিরপেক্ষ বোর্ড গঠিত হয়েছে। যারা পুরস্কারের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জুরি বোর্ড ইতোমধ্যেই ২০২১ ও ২০২২ সালে মঞ্চায়িত নতুন ১৭টি নাটক দেখে মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছেন।
আগামী ১৯ জানুয়ারি পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
সংবাদ সম্মেলনে ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার বাস্তবায়ন-২০২২ এর সমন্বয়ক সেলিনা শেলী বলেন, ‘এই পুরস্কারের উদ্দেশ্য দেশের মঞ্চে নতুন নতুন নাটককে অনুপ্রাণিত করা। এই পুরস্কারের প্রতিটি আর্থিক সম্মাননার পরিমাণ সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা।’
আরও পড়ুন: ২৭ বিভাগে ৩৪ জন পাচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
দেশের প্রথিতযশা নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, ‘আমরা যারা থিয়েটার করি, তাদের সমগ্র জীবনের থিয়েটার কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ অনেক ধরনের পদক চালু আছে। কিন্তু প্রতিবছর কাজের শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি হিসেবে কোনো পুরস্কার নেই। এই পুরস্কার একটা নবদিগন্তের সূচনা। পুরস্কারটা সরকারিভাবেও দেয়া যেতে পারে। এতে দেশের থিয়েটার অঙ্গণ আরও প্রাণবন্ত হবে। নতুন উদ্যোমে কাজ করতে পারবেন তরুণ নাট্যকর্মীরা।’
এই পুরস্কার প্রবর্তন দেশ নাটকের উদ্যোগ হলেও দেশের বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার বাস্তবায়ন কমিটি ও জুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারপারসন ফেরদৌসী মজুমদার, কো-চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সদস্য রামেন্দ মজুমদার, আতাউর রহমান, আসাদুজ্জামান নূর, ম. হামিদ, মামুনুর রশীদ, সারা যাকের, লাকী ইনাম, লিয়াকত আলী লাকী, গোলাম কুদ্দুস, তারিক আনাম খান, রোকেয়া রফিক বেবী, কামাল বায়েজীদ, মাসুম রেজা ও কামাল আহমেদ।
অন্যদিকে পুরস্কারের জুরিবোর্ড প্রধান প্রফেসর আবদুস সেলিম, সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ওয়াহিদা মল্লিক জলি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক ড. কামালউদ্দিন কবির, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউটে সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ দেবনাথ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইউসুফ হাসান অর্ক, বটতলা থিয়েটার স্পেসের মোহাম্মদ আলী হায়দার ও শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা বিভাগের সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর ড. আইরিন পারভীন লোপা।
এ বছর শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে নমিনেশন পেয়েছেন পুণ্যাহ নাটকের রচয়িতা বদরুজ্জামান আলমগীর, পারাপার নাটকের রচয়িতা মাসুম রেজা এবং রাইজ এন্ড সাইনের রচয়িতা আবদুস সেলিম।
আরও পড়ুন: টেলিভিশন শিল্পীদের জন্য জাতীয় পুরস্কারের কথা ভাবা হচ্ছে: তথ্যমন্ত্রী
শ্রেষ্ঠ অভিনেতার হিসেবে নমিনেশন পেয়েছেন প্রশান্ত হালদার (রায়মঙ্গল), খালিদ হাসান রুমি (মাংকি ট্রায়াল) ও সুকর্ণ হাসান (রাজদ্রোহী)। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী-সঙ্গীতা চৌধুরী (পুণ্যাহ), মনামী ইসলাম কনক (পুণ্যাহ) ও কাজী রোকসানা রুমা (রাইজ এন্ড সাইন)।
শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিকল্পনা জন্য নমিনেশন পেয়েছেন- শিশির রহমান ও অন্যান্য (মলুয়া), সেলিম মাহবুব (মাধব মালঞ্চি) ও ইউসুফ হাসান অর্ক (পুণ্যাহ)।
শ্রেষ্ঠ আলোক পরিকল্পনার জন্য নমিনেশন পেয়েছেন-অম্লান বিশ্বাস (পুণ্যাহ) ও (রায়মঙ্গল) এবং মোহাম্মদ আলী হায়দার (রাইজ এন্ড সাইন)।
শ্রেষ্ঠ নির্দেশক হিসেবে নমিনেশন পেয়েছেন- মুক্তনীল (মাংকি ট্রায়াল), ইউসুফ হাসান অর্ক (পুণ্যাহ) ও ফাহিম মালিক ইভান (পারাপার)।
শ্রেষ্ঠ মঞ্চ পরিকল্পনাকারীর তালিকায় রয়েছেন- ফজলে রাব্বি সুকর্ণ (সে এক), ইউসুফ হাসান অর্ক (পুণ্যাহ) ও মুজিবুল হক (মলুয়া)।
প্রসঙ্গত, মঞ্চের মানুষ ইশরাত নিশাত বাচিক শিল্পী হিসেবেও দর্শক নন্দিত ছিলেন।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও পার্শ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নাট্যপ্রেমীদের আমন্ত্রণেও নিশাত কাজ করেছিলেন। থিয়েটারের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা একটা জীবন ইশরাত নিশাত।
আরও পড়ুন: সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফরাসি লেখিকা অ্যানি আর্নাক্স