আরও পড়ুন: বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পাড়ি দিলেন ৪০ সাঁতারু
সাঁতারু আবদুল মালেকের জন্ম ১৯৩৮ সালে। চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী গ্রামের মরহুম আবদুল জলিল মিয়ার বড় সন্তান। তিনি ছিলেন চিরকুমার। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে তিনি ১৯৮৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে মারা যান। মৃত্যুর পরে নিজ পিত্রালয়ে মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
ফেনীর নদীতে সাঁতার কাটতে নেমে নিখোঁজ ৩ পর্যটকের লাশ উদ্ধার
মঙ্গলবার দুপুরে স্মৃতি রোমন্থন করে তারই ছোট ভাই প্রখ্যাত সাঁতারু একে এম বাদশা মিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে জানান, মালেক চাঁদপুরে স্কুল ও কলেজের এইচএসসি পড়ালেখার পাশাপাশি ছিলো খুব ভালো অ্যাথলেট। তুখোর ফুটবল খেলোয়ার, ছিলেন অলরাউন্ডার। চাঁদপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে তিনি তিনবার ক্রীড়া সম্পাদক হন। ১৯৫৭ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাঁতারে স্বর্ণ পদক লাভ এবং ১৯৫৮ সালে জাপানের টোকিওতে এশিয়া অলিম্পিক সাঁতারে অংশ নেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা জাতীয় সুইমিং পুলে ৬০ মাইল সাঁতার কেটে তিনি জাতীয় রেকর্ড করেন।
১৯৬২ সালে সাঁতার ফেডারেশন আয়োজিত ঢাকা–চাঁদপুর দূরপাল্লা সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ইতালিতে বিশ্ব দূরপাল্লা ৩৩ মাইল সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি বিশ্বের মধ্যে ৪র্থ এবং এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ১ম স্থান অধিকার করেন।
১৯৬৪ সালে চাঁদপুর শহর লেকে তিনি ৩৫ মাইল সাঁতার কাটেন। ১৯৬৫ সালেও ইংলিশ চ্যানেল অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর দূরপাল্লা সাঁতারে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ৩ ঘণ্টা ৪২ মিনিটে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। যা ছিল ওই বছরের প্রতিযোগিতায় সবচাইতে কম সময়ের মধ্যে চ্যানেল পাড়ি দেয়ার রেকর্ড। ১৯৬৫ সালে তিনি লন্ডনে বসবাস করতে থাকেন। সেখানে তিনি সাঁতারের কোচ হিসেবে নিয়োজিত হন এবং এর মধ্যে সিএ পাস করেন। মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত তিনি লন্ডনেই ছিলেন।
সাঁতার কাটতে গিয়ে ১৫০০ বছরের পুরনো তলোয়ার পেল শিশুকন্যা!
সাঁতার প্রতিযোগিতায় তার স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহু রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু এই খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদের খোঁজ এখন আর কেউ রাখেন না। ১৯৮৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুর পরে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে এই কৃতি সাঁতারুর নামে মালেক ক্রীড়া ভবন থাকলেও অনেকেই তা জানেন না। বিভিন্ন কারণে নামটিও মুছে যাচ্ছে।
ছোট পরিসরে ১৯৮৬ সালের ৩ জানুয়ারি চাঁদপুর ফাউন্ডেশন সওগাত সম্পাদক নাসিরউদ্দীন, হাশেম খান, বুয়েটের ভিসি আ করিম পাটোয়ারি ও বিশিষ্ট শিল্পী মনিরুল ইসলামসহ তাঁকেও সংবধর্না (মরনোত্তর) দেয় সরকারি মহিলা কলেজে। এরপরে তিনি বিস্মৃতিতেই আছেন চাঁদপুরের মানুষের কাছে।
সাঁতারের পোশাক পরতে না হওয়ায় খুশি নতুন মিস আমেরিকা
নতুন প্রজন্মের কাছে জেলার কৃতি এ ক্ষণজন্মা লোকটির কৃতিত্ব তুলে ধরার জন্য কোনো আয়োজন থাকে না। চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা বর্তমানে সরকারি অর্থায়নে ও পৃষ্ঠপোষকতায় ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে বহু আয়োজন করে। এসব আয়োজনে সাঁতারু আবদুল মালেকদের মত ব্যক্তিদের জীবন গাঁথা তুলে ধরলে নতুন প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবে এমনটাই জানান প্রবীণ ক্রীড়াবিদরা।
তারই মেঝো ভাই সাঁতারু একেএম বাদশা ও ছোট ভাই বিশিষ্ট চিকিৎসক মুন্সীগঞ্জের প্রাক্তন সিভিল সাজর্ন ডা. আ. রশিদ বলেন, মালেক কুমিল্লাতে ৭০ ঘণ্টা সাঁতার কেটে খ্যাতি অজর্ন করে কুমিল্লাকে উজ্জ্বল করেছেন।
আসছে ১৭ ফেব্রয়ারি তার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে পারিবারিকভাবে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতি বছরই দিনটি আসে নীরবে, চলে যায় কিন্তু তাকে নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো আয়োজন না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রখ্যাত সাঁতারু রোকনুজ্জামান ভূঁইয়া, সানাউল্লাহ ও উদীয়মান সাঁতারুরা।