জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি যোগাযোগের লক্ষ্যে খারুবিল ও জৈন্তাপুর ইউনিয়ন এবং জৈন্তাপুর বাজার সড়কের যাতায়াতের সুবিধার্থে চিকার খাল নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এখন সেটির পাইলে (পিলার) উদ্বোধনের আগেই ফাটল দেখা দিলো।
২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সম্প্রতি এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। সেতুটি নির্মাণের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছিল ‘নূরুল হক এন্ড তৈয়বুর রহমান জেবি’।
সেতুর দুই পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা ইউএনবিকে জানান, নিয়ম অনুযায়ী সেতুটির ঢালাই কাজের পূর্বে সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপস্থিত থাকে তা পর্যবেক্ষণ করার কথা থাকলেও কাজ করার সময় সংশ্লিষ্টদের কাউকে দেখা যায়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের মর্জিমত সেতুর ফাইলিং ৮০ ফিটের স্থলে কোনো কোনো পিলারে ৩৫-৪০ ফুট গভীরে ফাইলিং করে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে। ঢালাই কাজে কাদামিশ্রিত বালু, নিন্মমানের পাথর ও মরা পাথর এবং সিঙ্গেল পাথর ব্যবহার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীদের বেশ কয়েকজন জানান, তখন বিষয়টি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসে একাধিকবার মোবাইল ফোনে জানালেও কোনো কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই সেতুর গার্ডওয়াল ধুঁয়ে মাটি সরে গিয়ে পাইলিং পিলারের ফাঁটল বেরিয়ে এসেছে। নিন্মমানের বালু-পাথরের সাথে নিম্নমানের সিমেন্ট ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারেই এমনটি হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘নূরুল হক এন্ড তৈয়বুর রহমান জেবি’র স্বত্ত্বাধিকারীর মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) জৈন্তাপুরের নির্দেশনা মোতাবেক পুরো কাজ হয়েছে। পাইলিং কাজের সময় পশ্চিমপার্শ্বে কয়েকটি পিলার ৩৫ হতে ৪০ ফিটের মধ্যে ঢালাই কাজ করা হয়েছে। ফাইলিং (পিলার) যতটুকু গভীরে গেছে ততটুকুর বিলই আমাকে দেওয়া হবে।
তিনি স্বীকার করেন, সেতুটির পূর্বপাশের প্রধান ফাইলিংয়ের (মেইন পিলার) উপর মূল সেতুর ভারসাম্য রক্ষার জন্য ক্যাপ স্থাপনের স্থানটিতে ফাটলের বিষয়টি শুনেছেন। বলেন, নদীতে পানি থাকায় আমি ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। তবে, সেতুর অন্যান্য কাজ যথা নিয়মে হয়েছে দাবি এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের।
এবিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী তানভীর আহমদ বলেন, সঠিক নিয়মে কাজ হয়েছে। কোনো সন্দেহ নাই। ‘পানির স্রোত’ বেশি হওয়ায় গার্ডার ভেঙে যায়। এতে সেতুর কোনো ক্ষতি হবে না।
তবে, জৈন্তাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান, কোনো কোনো পিলারে ৩৫-৪০ ফুট গভীরে ফাইলিং ঢালাইয়ের কাজের কথা স্বীকার করে বলেন, ক্যাপে ফাটলের বিষয় তার জানা ছিল না। বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এটি প্লাস্টারিং করলে সমাধান হয়ে যাবে। তবে এ বিষয়ে লেখালেখি করে লাভ নেই বলেও জানালেন এই উপজেলা প্রকৌশলী।
জানা গেছে, এর আগে উপজেলার সারী নদীর উৎসমূখে শুকসারী নামে পর্যটন উন্নয়ন করর্পোরেশনের প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি জলঘাট উদ্বোধনের ছয় মাসের মাথায় ভেঙে পড়েছিল। সম্প্রতি চিকারখাল সেতুর এমন অবস্থা দেখে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, বর্ষায় সেতুটি নদীতে তলিয়ে যেতে পারে। তাদের অভিযোগ, নানা সুযোগ কাজে লাগিয়ে উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী তানবীর আহমদ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিণত হচ্ছে।