সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সময় বনানী ও মহাখালীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি টোলপ্লাজা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার পর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। এছাড়া সংঘর্ষে মিরপুরের দুটি স্টেশনের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় ঢাকা মেট্রোরেল চলাচলও বন্ধ রয়েছে। ফলে রাজধানীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক আক্তার হোসেন ইউএনবিকে বলেন, সরকার বা উচ্চ পর্যায়ের নির্দশনা পেলেই বনানী ও মহাখালী ছাড়া বাকি অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, কারফিউ পুরোপুরি তুলে নিলে এবং সরকার যখনই নির্দশনা দেবে, আমরা তখনই যান চলাচলের জন্য এটি খুলে দেব।’
তিনি আরও বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের দুটি টোলপ্লাজা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়েছেন। এখানে অনেক বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন এবং তাদেরও নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। এই সব কিছু বিবেচনা করে যানচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ থাকায় উত্তরা এয়ারপোর্ট থেকে এফডিসি সিগন্যাল এবং ফার্মগেট হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিনিয়ত যাতায়তকারীদের জন্য এখন হাতে ১ থেকে ২ ঘণ্টা বেশি সময় নিয়ে বের হতে হচ্ছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ থাকায় উত্তরা-কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা-মৌচাক- পল্টন এবং উত্তরা-বনানী-মহাখালী-গুলশান-ফার্মগেট-আগারগাঁও সড়কে ব্যাপক যানজট তৈরি হচ্ছে। ফলে এসব সড়কের যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন যাতায়তকারী কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ২টি টোলপ্লাজায় কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে এফডিইই প্রকল্প পরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, বনানী ও মহাখালীর ২টি টোলপ্লাজায় অন্তত ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, আগুনে টোলপ্লাজার ছাউনি, টোল সংগ্রহের বুথ এবং অপারেটিং সিস্টেম পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং কম্পিউটারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি।
বনানী টোলপ্লাজা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আমাদের টোল বুথ, সিস্টেম পুড়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে একটা আধুনিক ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই দুটি টোলপ্লাজায় নতুন করে আবার ক্যামেরা বসানো, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি স্থাপন করা একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এগুলো দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে। ফলে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি টোলপ্লাজা চালু করতে সময় লাগবে। তবে কতদিন লাগবে এখনি বলা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার চট্টগ্রামে উম্মোচন হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
এফডিইই সূত্রে জানা যায়, এক্সপ্রেসওয়ে চালু করার জন্য সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কারফিউ পুরোপুরি উঠে গেলে বনানী ও মহাখালী ছাড়া বাকি অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। হাতে হাতে টোল নিয়ে (ম্যানুয়ালি) যান চলাচল শুরু করা যায় কি না, সেটাও ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত ১৮ জুলাই রাতে বনানী ও পরদিন ১৯ জুলাই বিকালে মহাখালী টোলপ্লাজায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ আগুনে টোলপ্লাজা দুটি পুরোপুরি পুড়ে যায়। এরপর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনে থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এ উড়ালসড়ক। পুরো উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। হাতিরঝিলসংলগ্ন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশে যান চলাচল উদ্বোধন করেন। পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর থেকেই এতে যান চলাচল শুরু হয়। এরপর চলতি বছরের ২০ মার্চ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি র্যাম্প খুলে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ইতালিয়ান-থাইয়ের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ