কুড়িগ্রামে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ধরন নিয়ে জেলাবাসীর আতঙ্ক দিন-দিন বেড়েই চলেছে। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি ভাবে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ।
অন্যদিকে আসন্ন ইদুল আযহাকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু নিয়ে আসায় সক্রিয় গরু পাচারকারীরা। জেলার অরক্ষিত বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রায় প্রতি রাতেই ভারতীয় গরু ঢুকছে এমন অভিযোগ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের।
আরও পড়ুন: ৯৯৯ এ কল দিয়ে ছিনতাইকৃত গরুর ট্রাক উদ্ধার, আটক এক
ভারতীয় এই গরুগুলো পৌঁছে যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরাও কুড়িগ্রামে আসছেন গরু কিনতে।
জেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের আব্দুল হাকিম জানান, শনিবার ও মঙ্গলবার যাত্রাপুর হাটে শতশত ভারতীয় গরু কেনাবেচা হয়।
এছাড়াও নারায়ণপুরের ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক জানান, নদীপথে শত-শত গরু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এতে গরু পাচারকারীদের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকা গুলোতে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ১
তবে বিজিবির দাবি, করোনার বিস্তাররোধে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
জেলাপ্রশাসন ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি বাজার মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। এতকিছুর পরেও সীমান্ত দিয়ে গরু প্রবেশ থেমে নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘পাচারকারীদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরন কুড়িগ্রামের সীমান্ত এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবুও কেন গরু চোরাচালান বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়? করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত কুড়িগ্রামের সব সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি গরু আসা বন্ধ করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।’
আরও পড়ুন: গরু ছিনতাই করতে না পেরে কৃষকের গলায় ছুরিকাঘাত
কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবি ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কর্নেল জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে সীমান্তে করোনা বিষয়ক প্রচারণা শুরু করা হয়েছে। সীমান্তবাসীদের জানানো হয়েছে কোনওরকম
অনুপ্রবেশ লক্ষ্য করলেই তারা যেন বিষয়টি দ্রুত আমাদের জানান। এছাড়া অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্ত এলাকাগুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে।’
এতকিছুর পরেও আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দু'চারটি গরু চোরাপথে আসতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: করোনা: খুলনায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের তীব্র সংকট
কুড়িগ্রাম জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করার বিষয়ে সবরকম নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে গাফলতি দেখা গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইউএনও ও বিজিবির সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, সারাদেশে করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় এক সপ্তাহের লকডাউন চলছে পুরো দেশজুড়ে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) লকডাউনের প্রথম দিন দেশে করোনায় একদিনে ১৪৩ জন মারা যাবার কথা জানানো হয়, যা একদিনের হিসেবে মৃত্যুর রেকর্ড।