কর্তৃপক্ষের দাবি, খর্ণিয়ার তেলিগাতি ও টিয়াবুনিয়া বাঁধ কেটে দেয়ায় পানির সাথে পলি এসে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিঘলিয়া ও তেলিগাতি প্রান্তে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি স্লুইসগেট নির্মাণের কথা থাকলেও তা না করায় এবং খননের মাটি উত্তোলন করে নদীর দুপাশে রেখে দেয়ায় বর্ষা মৌসুমে মাটি ধুয়ে ফের নদীতে এসে পড়েছে। তাই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদী দুটিতে শুধু পলি আর পলি, পানি নেই বললেই চলে। পাড়ে রাখা মাটি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদীতে পড়ছে। কোথাও কোথাও পাড়ে রাখা মাটির অস্তিত্ব নেই।
এলাকাবাসী জানান, মাত্র ১৪-১৫ বছর আগেও বহু মানুষ জীবিকার জন্য ভদ্রা ও শালতা নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। জোয়ার-ভাটা, মাছ শিকার ও নৌযান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও নদী দুটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখে ভদ্রা ও শালতার প্রায় ৩০ কিলোমিটার জুড়ে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। আর ভরাটের সাথে সাথে নদীর বুকজুড়ে অবৈধ দখল শুরু হয়। প্রভাবশালীরা নদীর ভরাট হওয়া জমিতে গড়ে তোলে বসতবাড়ি, চাল কল, করাত কল, বাজার, বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন, এমনকি হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি পানিতে ডুবে যায়।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, নদী দুটি খননের জন্য ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেকের বৈঠকে ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর। নয়টি প্যাকেজে দরপত্রের মাধ্যমে কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ভদ্রা নদীর দক্ষিণ অংশে ডুমুরিয়ার দিঘলিয়া থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং উত্তরাংশে তেলিগাতি হতে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার খনন করা হয়। এছাড়া শালতা নদীর ডুমুরিয়া বাজার থেকে শুরু হয়ে ৯ কিলোমিটার খনন করে শৈলমারি নদীর সাথে সংযুক্ত করা হয়।
ডুমুরিয়ার বামুন্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর প্রস্থ ১২০ ফুট রেখে ১২-১৪ ফুট পর্যন্ত গভীর করে খননের কথা ছিল। কিন্তু সব জায়গায় এ গভীরতা অনুসরণ করা হয়নি। এছাড়া মাটি উত্তোলন করে নদীর দুপাশে রেখে দেয়া হয়। নদীর দুই পাশে উঁচু করে রাখা মাটি বর্ষা মৌসুমে ধুয়ে ফের নদীতে এসে পড়েছে। তাছাড়া প্রকল্পের আওতায় দিঘলিয়া ও তেলিগাতি প্রান্তে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি স্লুইসগেট নির্মাণের কথা থাকলেও ওই দুটি স্লুইসগেট নির্মাণ না করেই কাজ শেষ করা হয়। ফলে ওই ৩০ কোটি টাকা মন্ত্রণালয়েই ফেরত গেছে।’
শোভনা গ্রামের বাসিন্দা মফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে লবণপানি ঢুকায় কৃষি কাজেও নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে নদী খননে ব্যয় হওয়া পুরো টাকা জলে গেছে। আর নদী খননের আসল যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল তাও ভেস্তে গেছে।
তবে পাউবোর খুলনা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘নদী খনন সব জায়গায়ই নিয়মমাফিক হয়েছে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সব যাচাই-বাচাই করে বিল পরিশোধ করা হয়েছে।’
নদী ভরাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খর্ণিয়ার তেলিগাতি ও টিয়াবুনিয়া বাঁধ কেটে দেয়ায় পানির সাথে পলি এসে নদী ভরাট হয়ে গেছে।’