নানা প্রতিকূলতার মধ্যে শিক্ষাকার্যক্রম চালাচ্ছে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি গিরিমৈত্রী সরকারি ডিগ্রি কলেজ। রয়েছে শিক্ষক ও আবাসন সংকট। পাশাপাশি ভবনগুলোও জরাজীর্ণ। এমন বেহাল অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিকে পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দূরাবস্থার মধ্যে পাশ্ববর্তী উপজেলার পরীক্ষার্থী থাকায় পরভারে এখন কাতর হয়ে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, কলেজে শিক্ষকের সৃষ্টপদ ১৭টি। বর্তমানে কর্মরত ১২জন। বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় বর্তমানে শিক্ষার্থী (পরীক্ষার্থী ব্যতিত) প্রায় ১২০০ জন। আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ৬৮৫ জন।
গত ৫ থেকে ৭ বছর ধরে এই কলেজ কেন্দ্রে পাশ্ববর্তী গুইমারা সরকারি কলেজ ও লক্ষ্মীছড়ি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও গত দুই বছর ধরে উপজেলার আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীর এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু কলেজে আবাসন ও শিক্ষক সংকট প্রকট হওয়ায় পাশ্ববর্তী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্র স্থাপন এবং উপজেলার ১০টি মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা থেকে পরীক্ষা চলার সময়ে পর্যবেক্ষক হিসেবে শিক্ষক ও হাইবেঞ্চ, লো-বেঞ্চ এনে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ফলে ওইসব স্কুল, মাদরাসাতেও শ্রেণিকার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়।
বিগত ৪ বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর তথ্যমতে কেন্দ্রে গড়ে পরীক্ষার্থী ১ হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে পাশ্ববর্তী গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার (কলেজের) শিক্ষার্থী অর্ধেক। আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায়ও কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে ওই দুই কলেজের ৬০০ জন। ফলে পাশ্ববর্তী উপজেলার দুইটি কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি উঠেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, কলেজে একটি বহুতল ভবনের দুপাশে প্রতিষ্ঠাকালীন একটি টিনশেড ও দ্বিতল ভবন দুইটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। পুরাতন দ্বিতল ভবনের ছাদে টিনের ছাউনিতে তৈরি বড় একটি খোলা রুমে নিয়মিত পাঠদান ও এইচএসসি পরীক্ষাও নেওয়া হয়। রুমের ভিতর থেকে অনায়াসে আকাশ দেখা যায়। সামান্য বৃষ্টিতে অঝোরে পানি পড়ে।
কলেজটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এস.এম শাহ ই আলম জানান, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি ২০১৮ সালে জাতীয়করণ করা হয়। কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক ও আবাসন সংকট প্রকট। পুরাতন(জরাজীর্ণ) টিনশেড ও দ্বিতল ভবনের ছাদে টিনশেডে করা বড় হল রুমে ক্লাসের পাশাপাশি সেন্টার পরীক্ষাও নিতে হয়।
এইচএসসি পরীক্ষার সময় কেন্দ্র পরিদর্শনে আসা কর্মকর্তারা একাধিকবার এ বিষয়ে আপত্তি জানালেও পরীক্ষার্থী বাড়তে থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। নিজ কলেজের ৬০০ থেকে ৭০০ পরীক্ষার্থীর পাশাপাশি এখানকার আইডিয়াল কলেজসহ গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়ি সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীরও এই কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, এতে ফার্নিচার, ডিউটি(পর্যবেক্ষক) হিসেবে আমাকে উপজেলার মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসা নির্ভর হতে হয়। কলেজ সংলগ্ন কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়েও ভেন্যু করতে হয়। এর ফলে ওইসব স্কুল ও মাদরাসায় পাঠদান ব্যাহত হয়।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় এই কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী হবে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন। পর্যবেক্ষক লাগবে ৭০ জন। কিন্তু অংশগ্রহণকারী কলেজে শিক্ষক হবে ৩০ থেকে ৩৫ জন। অবশিষ্ট পর্যবেক্ষক নিতে হবে স্কুল, মাদরাসা থেকে। এভাবে পরনির্ভর হয়ে কেন্দ্র পরিচালনা করা দুঃসাধ্য বলেও জানান শাহ ই আলম।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে সরকারি বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা
তিনি বলেন, এই কেন্দ্র থেকে গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়ি সরকারি কলেজ পরীক্ষার্থীদের অন্য কেন্দ্রে (পাশ্ববর্তী) অথবা ওই উপজেলায় নতুন কেন্দ্র সৃষ্টির জন্য ২০২৩ সালে থেকে বারবার আবেদন করে আসলেও শিক্ষাবোর্ড বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। ফলে পরভারে আমি এখন কাতর হয়ে পড়েছি।
কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মংশেপ্রু মারমা বলেন, কলেজ পরীক্ষার্থীদের ভেন্যু হিসেবে আমার স্কুল ব্যবহার, শিক্ষকদের ডিউটি করতে গিয়ে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হয়।
দক্ষিণ চেঙ্গুছড়া নেছারিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা সুপার মাওলানা বেলাল উদ্দীন বলেন, কলেজ কেন্দ্রে পর্যবেক্ষক হিসেবে শিক্ষক ও ফার্নিচার দিতে গিয়ে আমাদের শ্রেণিকার্যক্রম ব্যাহত হয়।