দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান। মাসটিকে ঘিরে প্রত্যেক পরিবারেই পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি। বিশেষ করে রমজান মাসের শুরুতে খেজুর, চাল, ডাল, ছোলা, বেসন, চিনি ও পেঁয়াজের ওপর একটু বেশি চাপ পড়ে।
রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাজার ঘুরে শুরু হয় কেনাকাটা। তবে ক্রেতাদের পূর্ব প্রস্তুতিতে প্রতিবারের মতো এবারও দাম বেশি। যদিও দফায় দফায় সরকারের ঘোষণা ছিল রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু এসব ঘোষণার কোনো প্রতিফলন বাজারে দেখা যায়নি।
নিত্য পণ্যের উচ্চ মূল্যে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল লক্ষণীয়। আলু, দেশি রসুন, বেগুন, সব ধরনের মুরগির মাংস, গরুর মাংস এবং প্রায় সব ধরনের ডাল বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।
বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলছেন, সরকার রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে বললেও সেটা হচ্ছে না। সবকিছুর দামই বেড়েছে। অন্যদিকে, বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা বেশি চাহিদা দেখাচ্ছে বলেই সবকিছুর দাম বাড়তি।
দুই মাসের ব্যবধানের বিভিন্ন বাজার ও এলাকার মুদি দোকানে প্রতি কেজি ছোলা, মুড়ি, খেজুর, বেসন, সরিষার তেল, বুটের ডালের দাম ১০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর শরবত তৈরির উপকরণ ইসবগুলের ভুসির দাম কেজিতে ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া রমজান নির্ভর বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত আলু, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, ট্যাং, রুহ-আফজার দামও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের কর মওকুফ হবে: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
শনিবার সকালে খুলনার মিস্ত্রীপাড়া, শেখপাড়া, বয়রা ও গলামারী এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, যা ২ মাস আগেও ৯০ টাকা ছিল। ২ মাস আগে যে মুড়ি ৮০ টাকা ছিল তা এখন ১১০/১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাঝারিমানের তিউনিশিয়ান খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। যা ২ মাস আগে ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি বেসন বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা। যা আগে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। বুটের ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১১০ টাকা। যা আগে ৯০ টাকা বিক্রি হয়।
এছাড়া, ইফতারে শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ-আফজার দামও বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি দুই মাস আগে ১ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ২ হাজার ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত ট্যাং বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকা, যা আগে ৮০০ টাকা ছিল। বড় সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা। যা আগে ৩৫০ টাকা ছিল। ছোট সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা। যা আগে ২০০ টাকা ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিনি, চাল-ডালসহ প্রতিটি পণ্যের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দেশি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দাম কমতে শুরু করে। এক সপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০-১২০ টাকা কেজিতে, গত দু’দিন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকায়। তবে রোজার আগ মুহূর্তে শুক্রবার থেকে আবারও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
আরও পড়ুন: রমজান মাসে আমরা কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করব: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
বিক্রেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও শুক্রবার ৯০ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করলেও কোনো লাভ থাকছে না।
রবিউল আলম নামে এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। কারণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ একেবারে শেষ দিকে। এ কারণে বাড়তি দাম যাচ্ছিল পেঁয়াজের। প্রধান জাতের পেঁয়াজ অর্থাৎ হালিকাটা পেঁয়াজ বাজারে পর্যাপ্ত এলেই দাম কমে যেত। এর মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে এখনই দাম কমতে শুরু করেছে।
গললামারী বাজারে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন জানান- মাছ, মাংশ, ফল মুল দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাচা তরকারি যেমন বেগুন, কপি, সিম, বরবটিসহ সব তরকারির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
মুনসুর নামে একজন হাঁসমুরগি বিক্রেতা জানান, রমজানের শুরুতে সব ধরনের হাস ও মুরগির দাম কজিতে ৬০টাকা থেকে ১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গরুর মাংস ৭০০টাকা এবং খাসির মাংস এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
হাবীবুললাহ খান নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, খুলনায় বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনোরকম ব্যবস্থা নেই।