সরবরাহ সঙ্কটের কারণে রাজধানীর বাজারের শাক সবজি ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এক সপ্তাহ আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তারা।
রবিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৮০ টাকায় যা এক সপ্তাহ আগে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এবং গত মাসে ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
এছাড়া রমজান মাসের আগে বাজারগুলিতে সয়াবিন এবং পাম তেল, মুরগী, ময়দা এবং চিনিসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
ভোক্তারা এই কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যে পবিত্র রমজান মাসে নিত্য পণ্যের বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আমুলিয়ার বাসিন্দা শরিফুল আলম বলেন, এক সপ্তাহ আগের তুলনায় আমাকে দ্বিগুণ দামে বেশিরভাগ সবজি কিনতে হয়েছে। ‘আজ আমি এক কেজি শসা কিনেছি ৫০ টাকায় যা গত সপ্তাহে ২৫ টাকা ছিল। এ ছাড়া আমি এক কেজি ব্রয়লার কিনেছি ১৭০ টাকা দিয়ে যা এক সপ্তাহ আগে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।'
আরও পড়ুন: রমজানে দরিদ্র ও দুস্থতের জন্য ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ
রাজধানীতে এক হালি লেবু ৪০-৬০ টাকায়, প্রতি কেজি করলা ৫০-৬০ টাকায়, পেঁপে ৪০ টাকা, শিম ৪০-৬০ টাকায়, ঢেঁড়স ৬০ টাকায়, পটল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
শরিফুল আরও বলেন, নিত্য পণ্যের বাজারগুলিতে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের উচিত যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া অন্যথায় কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যে ও রমজান মাসে বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা সর্বদা সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত লাভ নেয়ার চেষ্টা করেন। সুতরাং, সরকারের উচিত বাজারের সঠিকভাবে নজরদারি করা এবং অভাব হওয়ার আগে পণ্যটি আমদানি করে মজুদ বাড়াতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষকেই ভোগান্তিতে পড়তে হবে।’
সারুলিয়া বাজারের মুরগির ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান খান বলেন, গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লারের দাম ব্যাপক বেড়েছে। ‘পাইকারি বাজার থেকে আমাদের চড়া দামে কিনতে হওয়ায় আজ আমরা প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি করছি। গত পাঁচ দিনে দাম ২০ টাকা বেড়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ১২০-১৩০ টাকা।’
আনিসুর আরও জানান, সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে ২৯ মার্চ রাতে শবে-বরাত উদযাপিত হওয়ার আগে বিক্রিও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: রমজানের আগেই খুলনায় নিত্যপণ্যের বাজার চড়া
সারুলিয়া বাজারের দোকানদার মনজুরুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেছেন, রমজান মাসের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। ‘চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এ মাসে কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যদি সরবরাহ বেড়ে যায় তবে দাম কমবে।’
যাত্রাবাড়ীর সবজি ব্যবসায়ী সালমান ফরাজী বলেন, একই কারণে অনেক প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে।
টিসিবির তথ্য অনুসারে, এক সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১.৬১ শতাংশ এবং পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন এবার ২.৪৪ শতাংশ বেড়েছে।
টিসিবির তথ্যে দেখা গেছে, এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩৩.৮৮%, এক লিটারের বোতলজাত তেলের দাম বেড়েছে ২৮.৩৭% এবং পাঁচ লিটারের বোতল গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬% বেড়েছে।
বংশাল এলাকার গ্রাহক নাসির খান জানান, ঢাকার খুচরা বাজারে এখন চাল, তেল ও মাংসের দাম অনেক বেশি। ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পণ্যের দাম বাড়ায় চাপে রয়েছি। বাড়ি ভাড়াসহ আমাদের সামগ্রিক ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলেও আয় বাড়েনি। সরকারের উচিত নিত্য পণ্যের বাজারের সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাতে মহামারি দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট পরিস্থিতির মধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজানে দাম বাড়াতে না পারে।
ভারতীয় পরিষদের সভাপতি মো. বাহরানে সুলতান বাহার বলেছেন, অসাধু ব্যবসায়িরা অতিরিক্ত লাভ পাওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় রমজানের আগে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং, তাদের এই কারণে শাস্তি দেয়া উচিত। রাজধানীতে প্রতিদিন চাল, তেল ও মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অতিরঞ্জিতভাবে বেড়ে যায়। জনগণ অসাধু ব্যবসায়িদের হাতে জিম্মি।
তিনি আরও বলেছেন, এই কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে পণ্যের দাম বাড়ানো অমানবিক। সুতরাং অসাধু ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা উচিত।
টেলি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিসিএবি) আহ্বায়ক মো. মুরশিদুল হক বলেছেন, বিভিন্ন কারণে মাথাপিছু আয়ের তুলনায় বাংলাদেশে মাথাপিছু ব্যয় উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আমাদের দেশে স্বল্প আয়ের উপার্জনকারীরা তাদের আয়ের বেশিরভাগ অংশ প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ব্যয় করছে।